বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধে ক্যাবের ১৩ দফা দাবি
বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতের উন্নয়নে প্রতিযোগিতাবিহীন যে কোন ধরণের বিনিয়োগ আইন দ্বারা নিষিদ্ধ করাসহ ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) সিরডাপ মিলনায়তনে ক্যাব আয়োজিত নাগরিক সভায় এই দাবি তুলে ধরেন ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. শামসুল আলম।
১৩ দফার মধ্যে রয়েছে সরকার ব্যক্তিখাতের সাথে যৌথ মালিকানায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত হবে না এবং সরকারি মালিকানাধীন কোন কোম্পানির শেয়ার ব্যক্তি খাতে হস্তান্তর করবে না, আইন দ্বারা তা নিশ্চিত হতে হবে। বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি খাতভূক্ত সরকারি ও যৌথ মালিকানাধীন সকল কোম্পানির পরিচালনা বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উভয় বিভাগের সকল আমালাদের প্রত্যাহার করা। নিজস্ব কারিগরি জনবল দ্বারা স্বাধীনভাবে উভয় খাতের কোম্পানি/সংস্থাসমূহের কার্যক্রম পরিচালিত হতে হবে। সে-জন্য আপস্ট্রিম রেগুলেটর হিসাবে মন্ত্রণালয়কে শুধুমাত্র বিধি ও নীতি প্রণয়ন এবং আইন, বিধি-প্রবিধান অনুসরন ও রেগুলেটরি আদেশসমূহ বাস্তবায়নে প্রশাসনিক নজরদারি ও লাইসেন্সিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। এবং ডাউনস্ট্রীম রেগুলেটর বিইআরসিকে সক্রিয়, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হতে হবে। মুনাফা ব্যতীত কস্ট বেসিসে ৫০ শতাংশের অধিক বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন সরকারী মালিকানায় হতে হবে। কস্ট প্লাস নয়, সরকার শুধু কস্ট বেসিসে বিদ্যুৎ, ও জ্বালানি সেবা দেবে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানী নিরাপত্তা তহবিলের অর্থ যথাক্রমে গ্যাস অনুসন্ধান, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জ্বালানি আমদানিতে ব্যয় ভোক্তার ইকুইটি বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হতে হবে। প্রাথমিক জ্বালানি মিশ্রে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনায় কয়লা ও তেলের অনুপাত কমাতে হবে। নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও মজুদ বৃদ্ধি এবং নবায়যোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্বারা জ্বালানি আমদানি নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। জলবায়ূ তহবিলসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উৎস থেকে উক্ত ক্ষয়ক্ষতি বাবদ ঋণ নয়, ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি/আদায় নিশ্চিত হতে হবে। এবং সে ক্ষতিপূরণ ক্ষতিগ্রস্থদের সক্ষমতা উন্নয়নে বিনিয়োগ আইন দ্বারা নিশ্চিত হতে হবে। বিদ্যুৎ, জীবাশ্ম ও নবায়নযোগ্য জ্বালানী উন্নয়ন নীতি, আইন, বিধি-বিধান ও পরিকল্পনা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সম্পাদিত প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
ভোক্তার জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণ ও জ্বালানি সুবিচারের পরিপন্থী হওয়ায় (ক) দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ রদ হতে হবে, এবং বাংলাদেশ রেগুলেটরী কমিশন (বিইআরসি) আইন ২০০৩ সংশোধনক্রমে সংযোজিত ধারা ৩৪ক রহিত হতে হবে। এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসি’কে ফিরিয়ে দিতে হবে। ইতোমধ্যে (ক) বাপেক্স ও সান্তোষের মধ্যে মগনামা-২ অনুসন্ধান কূপ খননে সম্পাদিত সম্পূরক চুক্তি, (খ) বিআরইবি ও সামিট পাওয়ার লিঃ-এর মধ্যে সম্পাদিত বিদ্যুৎ ক্রয় সম্পূরক চুক্তি, এবং বিপিডিবি ও সামিট পাওয়ার লিঃ-এর মধ্যে সম্পাদিত মেঘনাঘাট পাওয়ার প্লান্টের বিদ্যুৎ ক্রয় সম্পূরক চুক্তি বেআইনী ও জনস্বার্থ বিরোধী, এবং জ্বালানি সুবিচারের পরিপন্থী প্রতীয়মান হওয়ায় এ-সব চুক্তি বাতিল হতে হবে। অনুরূপ অভিযোগে অভিযুক্ত অনান্য চুক্তিসমূহও যাচাই-বাছাইক্রমে বাতিল হতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উন্নয়নে সম্পাদিত সকল চুক্তি বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার সাথে সম্পাদনের লক্ষ্যে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় অনুমোদিত মডেল চুক্তি মতে হতে হবে।
শামসুল আলম বলেন, সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ মতে প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ তথা ভোক্তা সাধারণ। এবং জনগণের অভিপ্রায়ের চরম অভিব্যক্তিরূপে দেশের সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন। ফলে ভোক্তা পক্ষের উপস্থাপিত উল্লিখিত রূপান্তর/ সংস্কার প্রস্তাব অনুযায়ী চলমান জ্বালানি রূপান্তর/সংস্কার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৩ দফা দাবি করা হলো।