বাংলাদেশকে বাড়তি ২ মিলিয়ন টন এলএনজি দেবে কাতার
দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তিতে বছর আরও ২ মিলিয়ন টন এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ বাড়াতে সম্মত হয়েছে কাতার। ১ জুন কাতারে ঢাকা ও দোহার মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরে প্রস্তুতির বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
কাতার পুর্বের চুক্তি মোতাবেক বছরে ২.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি সরবরাহ দিয়ে আসছে কাতার। নতুন এলএনজি যুক্ত হলে পরিমাণ দাঁড়াবে সাড়ে ৩ মিলিয়ন টনে। তবে এই গ্যাস এখনই বাংলাদেশে আসছে না। ২০২৫ সালের পর থেকে পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকবে। পুর্ণমাত্রায় আসবে ২০২৭ সাল থেকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সুত্র জানিয়েছে।
১ জুন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নসরুল হামিদের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম কাতারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন। টিমে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব ড. মোঃ খায়েরুজ্জামান মজুমদার, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার ও রূপান্তরিক প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক (এলএনজি) প্রকৌশলী আব্দুল মুকিত।
এলএনজির দামের বিষয়ে সব সময়েই লুকোচুরি করার রেওয়াজ লক্ষ্যণীয়। যথারীতি এবারও তাই চলছে, কোন কর্মকর্তাই মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুর্বের চুক্তির তুলনায় এবার দাম কিছুটা কম ধরা হয়েছে। তবে অন্যান্য শর্ত বাংলাদেশের জন্য কিছুটা অস্বস্তির হতে পারে। শর্তের বিষয়ে তিনি ধারণা দিতে পারেন নি।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফরের পুর্বে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, কাতার থেকে এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে কিছু শর্ত নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। আগে চুক্তিতে ছিল কাতার যদি সাপ্লাই দিতে না পারে তাহলে, সেই সময়ে স্পর্ট মার্কেটে এক কার্গো এলএনজি কিনতে যে বাড়তি দাম পড়বে সেই টাকা কাতার বাংলাদেশকে দিবে। নতুন চুক্তিতে এই শর্ত উঠিয়ে দিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে। অর্থাৎ খোলা মার্কেটে দাম বেশি হলে তারা যদি বিক্রি করে দেয় বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা সেই শর্ত বিভিউ করার জন্য বলেছি।
পেট্রোবাংলা সুত্র জানিয়েছে, কাতারের সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তিতে বলা হয়েছে সরবরাহ বছরে ১.৮ মিলিয়ন টনের নিচে হবে না, আবার ২.৫ মিলিয়ন টনের উপরে যাবে না। দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় কাতার থেকে ২.৫ মিলিয়ন টন, ওমান থেকে ১ মিলিয়ন টন আমদানি করা হচ্ছে। কাতারের পাশাপাশি ওমান থেকেও আরও ১ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি বাড়াতে উভয়দেশ সম্মত হয়েছে।
আরপিজিসিএল সুত্র জানিয়েছে, আমাদের দু’টি এফএসআরইউ এর দৈনিক সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে ১ হাজার মিলিয়ন ঘটফুট। গড়ে সর্বোচ্চ ৯৫ শতাংশ ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ বছরে ৬ মিলিয়ন টন পর্যন্ত আমদানির সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের।এছাড়া আরও একটি এফএসআরইউ স্থাপনের জন্য সামিট গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তৃতীয় এফএসআরইউ হলে দৈনিক ১৫’শ মিলিয়ন আমদানির সক্ষমতা হবে। চতুর্থ এফএসআরইউ নিয়ে আলোচনা এগিয়ে চলছে। পাশাপাশি একটি এলএনজি টার্মিনালের কাজও চলমান রয়েছে। সেটির সক্ষমতা হবে ১ হাজার এমএমসিএফডি।
সরকার দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির পাশাপাশি খোলা বাজার থেকেও এলএনজি আমদানি করে আসছিল। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে অনেক বেড়ে যায় খোলা বাজারে এলএনজির দাম। খোলাবাজার থেকে প্রথমবার প্রতি ইউনিট এলএনজি কেনা হয়েছিল চার ডলারের নিচে। একই পরিমাণ এলএনজি কিনতে ৩৭ ডলার পর্যন্ত দিতে হয়েছে। বর্তমানে ১৪ ডলারের কাছাকাছি বেচাকেনা চলছে।
প্রাকৃতিক গ্যাসকে শীতলকরণ প্রযুক্তির মাধ্যমে তাপমাত্রা কমিয়ে মাইনাস ১৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলে গ্যাস তরলে পরিণত হয়। এই তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকেই এলএনজি বলা হয়। যখন প্রাকৃতিক গ্যাসকে সাধারণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে তরল করে ফেলা হয় তখন এর আয়তন কমে যায় প্রায় ৬০০ গুন। অর্থাৎ ৬০০ লিটার গ্যাসকে এলএনজিতে রূপান্তরিত করে মাত্র এক লিটারের ছোট্ট একটা বোতলে ভরে ফেলা যায়। পরিবহনের সুবিধার জন্য এলএনজি করা হয়। বাংলাদেশে আনার পর আবার রিগ্যাসিফিকেশন করে লাইনে সরবরাহ করা হয়।