অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় মডেল পিএসসি অনুমোদন

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

তেল-গ্যাস উৎপাদন ও বন্টন চুক্তি (মডেল পিএসসি-২০২৩) চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

বুধবার (২৬ জুলাই) বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বিজ্ঞাপন

সচিবালয়ে নিজ অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পিএসসি অনুমোদন হলেও সহসা আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের সম্ভাবনা নাকচ করেছেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের (সাইচমিক) রিপোর্ট পাওয়ার পর দরপত্র আহ্বান চিন্তা রয়েছে। নভেম্বর নাগাদ পুরো রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধিসহ অনেক ছাড় দিয়ে মডেল পিএসসি-২০১৯ (উৎপাদন ও বন্টন চুক্তি) সংশোধিত করা হয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করে তোলার জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগের পিএসসিগুলোতে গ্যাসের দর স্থির করা দেওয়া হলেও এবার গ্যাসের দর নির্ধারিত করা হয়নি। ব্রেন্ট ক্রডের আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে উঠানামা করবে গ্যাসের দর। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রডের ১০ শতাংশ দরের সমান। অর্থাৎ ব্রেন্ট ক্রডের দাম ৮০ ডলার হলে গ্যাসের দাম হবে ৮ ডলার। যা বিদ্যমান পিএসসিতে যথাক্রমে অগভীর ও গভীর সমুদ্রে ৫.৬ ডলার ও ৭.২৫ ডলার স্থির দর ছিল। ব্রেন্ট ক্রডের দামের ক্ষেত্রে সারা মাসের দর গড় করে সেই হিসাব ধরা হবে।

দামের পাশাপাশি সরকারের শেয়ারের অনুপাতও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মডেল পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশের অনুপাত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর কমতে থাকে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার। গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের হিস্যা ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠানামা করবে। তবে ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের দুই বছরের মধ্যে কূপ খনন করে গ্যাস না পেলে কিংবা, বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য না হলে শর্তসাপেক্ষে যথাক্রমে ১ ও ২ শতাংশ হিস্যা বাড়ানোর সুযোগ থাকছে। গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে প্রথম প্রস্তাব পেট্রোবাংলাকে দিতে হবে, পেট্রোবাংলা নিতে না চাইলে তৃতীয়পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির সুযোগ পাবে বিদেশি কোম্পানি।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, কোন ধরণের দুর্ঘটনা ঘটলে তার ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দুই ধরণের ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়, একটি হচ্ছে পরিবেশের ক্ষতি, আরেকটি গ্যাসের রিজার্ভের ক্ষতি। পরিবেশের ক্ষতির বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরে সুপারিশ অনুযায়ী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া জানমাল ও রিজার্ভের ক্ষতি হলে পেট্রোবাংলা কমিটি করে পরিমাণ নির্ধারণ করবে। কোন কারণে বিবাদ তৈরি হলে আন্তর্জাতিক আদালতে (সিঙ্গাপুর) বিষয়টির ফয়সালার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

পাশাপাশি এবারেই প্রথম বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টার্ন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে

প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, মডেল পিএসসি আকর্ষণীয় করার কারণে অনেক বড় বড় বিদেশি কোম্পানি সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ দেখাচ্ছে। মার্কিন কোম্পানি এক্সন মবিল খুবই আগ্রহ দেখাচ্ছে। তারা ইতোমধ্যে দুই দফায় প্রস্তাবনা দিয়েছে। আমরা একটি এমওইউ করতে পারি।

গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং অগভীর সমুদ্রে ৯টি ব্লক প্রস্তুত রয়েছে দরপত্রের জন্য। সবচেয়ে উদ্বেগে বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ যতো বেশি বিলম্ব করছে ততবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের পাশের ব্লকগুলো থেকে দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাস উত্তোলন করছে মায়ানমার।

আন্তর্জাতিক আদালতে ২০১২ সালে মায়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সাগর সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর সর্বমোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। তথ্য সমৃদ্ধ করার জন্য সরকার সমুদ্রসীমায় একটি পূর্ণাঙ্গ বহুমাত্রিক জরিপ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে নাম দিয়ে ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। দরপত্র মূল্যায়নে নরওয়ের কোম্পানি টিজিএস এবং ফ্রান্সের স্লামবার্জার কনসোর্টিয়াম যোগ্য বলে নির্বাচিত হয়।