আমদানিতে জটিলতা এলপি গ্যাস সংকটের শঙ্কা
এলসি জটিলতার কারণে বাজারে এলপি গ্যাসের সংকটের শঙ্কা দেখছেন অনেকেই। আমদানি নির্ভর এই পণ্যটি পূর্বের মজুদ থেকে অনেক কোম্পানি সরবরাহ করছেন।
সরবরাহ অব্যাহত থাকলেও শিগগিরই নতুন পণ্য আমদানি করতে না পারলে বাজারে সংকটের শঙ্কা দেখছেন অনেকেই।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে এলপি গ্যাসের বাজারের ২২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। কোম্পানিটি গত জুলাই মাসে আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ৭০ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছেন। এলসি জটিলতার কারণে আমদানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। এলপি গ্যাসের বাজারের আরেক বড় প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো জুলাইয়ের শেষ দিকে গ্যাস সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য কোম্পানিও আমদানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। মজুদ থেকে সরবরাহ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, আমরা গত ৭ আগস্ট এলপিজি আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম। সেখানে বসুন্ধরা ও বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে এলসি জটিলতার কথা জানানো হয়। আমরা তাদের বলেছি, লিখিত আবেদন দিতে। লিখিত আবেদন এখনো পাইনি, লিখিত পেলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নিরসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যান্য আমদানিকারকদের কাছে এলপি গ্যাসের মজুদ রয়েছে। যে কারণে সংকটের শঙ্কা দেখছি না। আমদানি জটিলতা দীর্ঘ হলে সংকটের শঙ্কা থেকেই যায়। তবে বিষয়টি ততদূর যাওয়ার সুযোগ নেই।
এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটরদের সংগঠনের সভাপতি মো. সেলিম খান বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, এই মুহূর্তে শুধু ওমেরার এলপিজি স্বাভাবিক সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। আর জেএমআইতে ট্রাক নিয়ে গেলে ১০ থেকে ১২ দিন পর পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য কোম্পানির সরবরাহ অনেকটাই বন্ধ।
খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণ ডিলাররা ট্রাকে করে সিলিন্ডার পৌঁছে দেন দোকানে। আগস্টে কিছু কোম্পানির ট্রাকের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। তারা কি কারণে আসছে না সে বিষয়ে তাদের কোন ধারণা নেই।
বাজারে এলপি গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নির্ধারিত দরে কোথাও বেচাকেনা হচ্ছে না। বিইআরসি নির্ধারিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১১৪০ টাকার থেকেও কোম্পানিই বেশি দাম নিচ্ছে ক্ষেত্র বিশেষে। চলতি আগস্টে বিইআরসি সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১১৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এতে খুচরা বিক্রেতার ৩৮ টাকা এবং ডিস্ট্রিবিউটরের ৩৪ টাকা কমিশন রাখা হয়েছে।
রংপুরের খুচরা বিক্রেতা ঝন্টু মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, তিনি গত সপ্তাহে ১২ কেজির সিলিন্ডার ওমেরা ১১৮০ টাকা, নাভানা ১১৭০ টাকা ও বিএম ১১৫০ টাকা দিয়ে কিনেছি। নাঙ্গলকোটের ভূঁইয়া স্টোরের মালিক (কুমিল্লা) হান্নান ভূঁইয়া বার্তা২৪.কমকে ১২৫০ টাকা দরে বিক্রি করার কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন বিইআরসি নির্ধারিত দরে এলপি গ্যাস কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নির্ধারিত দরে বেচা সম্ভব নয়।
এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটরদের সংগঠনের সভাপতি মো. সেলিম খান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমি ওমেরা গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটর। আমাকে কিনতে হচ্ছে ১১৩০ টাকা দিয়ে। অথচ দাম ১১০০ টাকার কম হওয়ার কথা। আমার মনে হয় বিইআরসির কোম্পানিগুলোকে চাপ দেওয়া উচিত।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে এলপিজি ব্যবহৃত হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন। কয়েক বছরে চাহিদা বেড়ে ১২ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। জাইকার এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে ৩০ লাখ টন ও ২০৪১ সালে চাহিদা হবে ৬০ লাখ টন। দেশে ব্যবহৃত এলপিজির সাড়ে ৯৮ শতাংশ আমদানি নির্ভর। সরকারি (বাংলাদেশ এলপি গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড) কোম্পানির মার্কেট শেয়ার মাত্র দেড় শতাংশের মতো। সরকার এখন পর্যন্ত ৫৬টি কোম্পানি অনুমোদন দিয়েছে। এরমধ্যে ২৮ টির মতো মার্কেটে রয়েছে বেশকিছু কোম্পানি প্রস্তুতি পর্যায়ে রয়েছে।