জেনারেটরকে টেক্কা দিতে আসছে ব্যাটারি
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে স্ট্যান্ডবাই জেনারেটরের বিকল্প হিসেবে আসছে হাইভোল্টেজ ব্যাটারি। অনেক দেশেই এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে, বাংলাদেশও পাইলট আকারে ক্ষুদ্র পরিসরে বাস্তবায়ন করতে চলেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
একেকটি ব্যাটারির সক্ষমতা দুই-চারটির কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়েও বেশি। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিগুলোর একেকটি ইউনিট ১০০ মেগাওয়াটের বেশি পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলো আকারে একেকটি কন্টেইনারের সমান। হাই ভোল্টেজ অথবা মিডিয়াম ভোল্টেজ লাইনের মাধ্যমে রিচার্জ হবে। আবার কোন কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হলে ন্যানো সেকেন্ডের কম সময়ে সক্রিয় হবে। ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত টানা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে সক্ষম এসব ব্যাটারি। শিল্প কারখানা, মার্কেট এবং অ্যাপাটমেন্টে একে সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বর্তমানে এসব জায়গায় ডিজেল ও গ্যাস জেনারেট ব্যবহৃত হচ্ছে। যাতে বিপুল পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন পড়ে। আবার পরিবেশ দূষণের ইস্যুও জড়িত।
ভারত ২০৪০ সালের মধ্যে ২০০ গিগাওয়াট আওয়ার স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এনটিপিসি ও টাটা গ্রুপ তাদের প্রতিষ্ঠানে ১০ মেগাওয়াটের ব্যাটারি বসিয়েছে। বাংলাদেশে সময় এবং ঋতু ভেদে বিদ্যুতের চাহিদার বিশাল তারতম্য রয়েছে। এই উঠা-নামা সামাল দিতে গলদঘর্ম হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সন্ধ্যা রাতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে বিশেষায়িত পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট রাখতে হচ্ছে সিস্টেমে। ব্যাটারি প্রযুক্তি দারুণ ফলদায়ক হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্যাটারি স্থাপন করা গেলে পিকিং পাওয়ার প্লান্টের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাবে। অঞ্চলে অঞ্চলে এমন স্টোরেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে সহজেই সন্ধ্যা রাতের বাড়তি চাহিদা পুরণ করা সক্ষম হবে। একইসঙ্গে বিদ্যুতের ভোল্টেজ ওঠা-নামা কমে মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। বিষয়টি সামগ্রিক বিদ্যুৎ খাতের জন্য দারুণ সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছে অনেকেই।
ভোররাতে যখন চাহিদা অনেক কম থাকে তখন ব্যাটারি ফুলচার্জ হবে, আর সন্ধ্যাবেলা কিংবা অন্যকোন সময়ে লোডশেডিং হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ ও বড় বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে সিস্টেমকে সচল রাখতেও সহায়ক হবে বলে মনে করছে পাওয়ার সেল।
বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের সহকারী পরিচালক (পারফরমেন্স মনিটরিং) প্রকৌশলী সালেহ ইবনে শরীফ বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, ভারতসহ অনেক দেশেই এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারত বিশাল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, আমরা প্রাথমিকভাবে পাইলট আকারে বাস্তবায়ন করে ফলাফল যাচাই করতে চাই। একটি গার্মেন্টে পরীক্ষামূলকভাবে বসানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ওই গার্মেন্টে অনুমোদিত চাহিদা রয়েছে দেড় মেগাওয়াট। তবে প্রকৃত চাহিদা রয়েছে ৪৮৫ কিলোওয়াট আওয়ার। আমরা ২ মেগাওয়াট আওয়ারের ব্যাটারি বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি ব্যাটারির দাম কমবেশি ৩ কোটি টাকার মতো পড়বে। এগুলোর লাইফ টাইম রয়েছে ১০ বছর। ডিজেল জেনারেটর ব্যবহারের চেয়ে সাশ্রয়ী হবে। তারা অফপিকে রিচার্জ করবে যখন বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে। ওই সময়ে রিচার্জ করে রাখলে সরকারকে পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট স্ট্যান্ডবাই রাখতে হবে না। এতে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ কমে আসবে।
তিনি আরও বলেন, একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন সময় সাপেক্ষ, কিন্তু এই ব্যাটারি কিনে টার্ন-কি ব্যাসিসে ইনস্টল করে বিদ্যুতের সিস্টেম চালানো যাবে। কোন অঞ্চলে বিদ্যুতের সংকট দেখা দিলে ১ মাসের মধ্যে স্থাপন করা সম্ভব। আমাদের ময়মনসিংহ জোন এবং রংপুরে অনেক সময় বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিচ্ছে। ঘাটতি সামাল দিতে চট্টগ্রাম কিংবা বরিশাল জোন থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে যেতে হচ্ছে, এতে সিস্টেমলস বেড়ে যাচ্ছে। সাবস্টেশনে ব্যাটারি বসানো গেলে, সেখানে মজুদ থাকবে। পিক টাইমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত হবে। এসব ব্যাটারি দিন দিন আধুনিক হচ্ছে। সামগ্রিক সিস্টেমের জন্য অনেক সুবিধাজনক বিবেচনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের বড় জটিলতা হচ্ছে সময়ের তারতম্যে চাহিদার বিশাল পার্থক্য। সেচের মৌসুমে চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়, আর শীতে সেই চাহিদা ১০ হাজার মেগাওয়াটের নিচে নেমে আসে। সর্বোচ্চ চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে রিজার্ভ মার্জিনসহ উৎপাদন সক্ষমতা প্রস্তুত রাখতে হয়। যার বেশিরভাগেই থাকে অব্যবহৃত। এতে বসিয়ে রেখে চার্জ দিতে গিয়ে সামগ্রিক উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সরকার অবশ্য নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি শীতকালে রফতানির পরিকল্পনা করছে। নেপালে বিদ্যুতের প্রধান উৎস জলবিদ্যুৎ, শীতকালে পাহাড়ি নদীর পানি কমে গেলে উৎপাদন কমে যায়। যখন তাদের রুম হিটার ব্যবহার করার জন্য বাড়তি চাহিদা মোকাবিলা করতে হয়। সে সময়ে বাংলাদেশে অলস বসে থাকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র।