শোকজের পর আরও বেশি দাম নিচ্ছে এলপিজির
আগে নির্ধারিত দরের চেয়ে ৫০-৭০ টাকা বেশি আদায় করা হতো। এখন স্থানভেদে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দামে এলপি গ্যাস বিক্রির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
চলতি মাসে ১২ কেজির সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১২৮৪ টাকা নির্ধারিত থাকলেও ওমেরা গ্রুপের রংপুরের ডিলার ১৩৩০ টাকা এবং বেক্সিমকো গ্রুপের ডিলাররা ১৩৫০ টাকা দাম আদায় করছেন। বিক্রেতারা ৫০ টাকা যোগ করে ১৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন। আবার কোন কোন এলাকায় ১৫০০ টাকা দরে বিক্রির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
খুচরা বিক্রেতা কিংবা ডিলার নয় খোদ আমদানিকারকরাই মানছে না বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ঘোষিত নির্ধারিত দর। ইতিপূর্বে বেশি দাম রাখায় বসুন্ধরা এলপিজি, ওমেরা এলপিজি, টোটাল এলপিজি ও ইউনাইটেড গ্রুপকে শোকজ করলেও পাত্তাই দিতে চাইছে না। একাধিক দফায় নোটিশ দেওয়ার পর শুধুমাত্র ওমেরা গ্রুপ দায়সারা জবাব দিয়েছে। আর কয়েক মাস পরে এসে জবাব দেওয়ার জন্য সময়ে চেয়েছে টোটাল। টোটাল ও ইউনাইটেডকে শোকজ করা হয় ১১ জুলাই, আর ওমেরা ও বসুন্ধরাকে মে মাসের ২২ তারিখে শোকজ করে বিইআরসি।
ওমেরা তার জবাবে বলেছে, তারা পরিবহন খরচ ও পরিবেশকের কমিশন চালানে উল্লেখ করেছে। পরে এই টাকা সমন্বয় করে দেবেন। অন্যরা এখনও পাত্তাই দিতে চাইছে না বিইআরসির চিঠিকে। ওমেরাসহ অন্যরাও আগের তুলনায় আরও বেশি দামে বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন।
জুলাই মাসে ১২ কেজির সিলিন্ডার ডিলার পর্যায়ে ৯২৪ টাকা দরে বিক্রি করার নির্দেশনা থাকলেও ইউনাইটেড এলপিজি ১০৭৪ টাকা, টোটাল গ্যাস ১০১৯ টাকা দরে বিক্রির তথ্য প্রমাণ পায় বিইআরসি। অন্যদিকে বসুন্ধরাকে ৫০ টাকা বেশি দামে এবং ওমেরাকে ৭৫ টাকা বেশি দরে বিক্রির দায়ে শোকজ করা হয়।
ইউনাইটেড এলপিজি লিমিটেডের এজিএম রাইসা বার্তা২৪.কম-কে বলেছিলেন, বিইআরসি দর নির্ধারণ করেছে ৩ তারিখে, সিস্টেম আপডেটের বিষয় রয়েছে। আমরা কি ততদিন পর্যন্ত বিক্রি বন্ধ রাখবো?
বিইআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ তারিখ সন্ধ্যা ৬টা থেকে নতুন দর কার্যকর হওয়ার কথা। চালানপত্রটি ৫ তারিখের, যুক্তির খাতিরে যদি আগের মাসের দরও ধরে নিই তাতেও গড়মিল হয়। আগের মাসে (জুন) ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে বিক্রি করার কথা ১০০২ টাকায়। আর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল ১০৭৪ টাকা। তাহলে কি ডিস্ট্রিবিউটর ও খুচরা বিক্রেতার কমিশন কখনই দিচ্ছে না ইউনাইটেড এলপিজি। এমন প্রশ্ন করা হলে কোন জবাব দেননি।
বিইআরসির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমি দেশের বাইরে ছিলাম, এই মুহুর্তে আপডেট জানা নেই। শুনেছি কিছু কোম্পানির শোকজের জবাব দিয়েছে। তাদের জবাবগুলো যাচাই করে দেখা হবে, আর যারা দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কি ধরণের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তারা আমাদের লাইসেন্সী, তাদের লাইসেন্স বাতিল করার ক্ষমতাও আমাদের হাতে রয়েছে।
তিনি বলেন, কেউই আইনে ঊর্ধ্বে নয়। সবাইকে নির্ধারিত দরে এলপি গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমদানিকারকরা ডলারের দর নিয়ে আপত্তি করেছিল, আমরা সেখানে বাড়িয়ে দিয়েছি। আরও কিছু জায়গায় সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তারপরও দাম মেনে না চলেছে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, আমরা অভিযান জোরদার করেছি। চলতি মাসের ৪ তারিখে নারায়ণগঞ্জে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি। আবার ৯ সেপ্টেম্বর গাজীপুরে অভিযান করেছি, সেখানে একজন পরিবেশকের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দু’জন খুচরা বিক্রেতারও জরিমানা করা হয়েছে। এখন গেলাম দেখলাম এমন হবে না। গড়মিল পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক শাস্তি দেওয়া হবে।
প্রশ্ন ছিল বড় অপরাধী হচ্ছে আমদানিকারকরা, তারাই তো বেশি দাম নিচ্ছে। পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতার কি করার আছে। জবাবে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বাজারে টিম পাঠিয়ে একটি সার্ভে করেছি। কারা এই অপরাধ করছে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
২০২১ সালের ১২ এপ্রিল প্রথম এলপি গ্যাসের দর ঘোষণা করে বিইআরসি। তখন এলপিজি আমদানিকারক, ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার জন্য ১২ কেজির সিলিন্ডারে মোট ৩৫৯ দশমিক ৪০ টাকা কমিশন নির্ধারণ করা হয়েছিল। দর ঘোষণার দিনেই কমিশনের পরিমাণ নিয়ে আপত্তি তোলেন লোয়াব (এলপিজি আমদানিকারকদের সংগঠন)। তারা প্রতিমাসের দর ঘোষণাও বর্জন করে বিভিন্নভাবে বিইআরসির ওপর চাপ তৈরি করে। এমনকি এলপিজি আমদানি বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেন লোয়াবের সভাপতি আজম জে চৌধুরী। বিইআরসি অনেকটা বাধ্য হয়ে ৭ মাসের মাথায় ১০ অক্টোবর কমিশন ৩৫৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৪১ টাকা করেন। তারপরও কোম্পানিগুলো বেশি দাম আদায় করে যাচ্ছে।
প্রথম দর ঘোষণার পর কার্যকর নিয়ে বিইআরসির বক্তব্য ছিল, নতুন পদ্ধতি মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে। সময়ের সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যাবে। আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে, এখন দিন দিন উন্নতি না হয়ে আরও পতনের ধারা দেখা যাচ্ছে।
বিইআরসি শুধু খুচরা বিক্রেতার ওপর খড়গহস্ত ছিলেন। কমিশনে নতুন চেয়ারম্যান যোগদানের পর এবারেই প্রথম এলপিজি কোম্পানির ওপর নজর দিয়েছে। তারপরও কমছেনা দৌরাত্ম। অনেকটাই অসহায় দেখাচ্ছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটিকে। শুধু আমদানিকারক নয়, সরকারি অনেক কোম্পানিও একে পাত্তা দিতে চাইছে না। কেউ কেউ একে কাগুজে বাঘ বলে আখ্যায়িত করেছেন।