বিইআরসির শোকজের জবাব দিয়েছে ইউনাইটেড, ওমেরা ও টোটাল



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বেশি দামে এলপি গ্যাস বিক্রির দায়ে অভিযুক্ত ইউনাইটেড, ওমেরা ও টোটাল গ্রুপ শোকজের জবাব দিয়েছে। কমিশনের বৈঠকে পরবর্তী করণীয় চুড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। 

সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দাম রাখায় ওই ৩ কোম্পানিকে শোকজ করে বিইআরসি। টোটাল ও ইউনাইটেডকে শোকজ করা হয় ১১ জুলাই আর ওমেরাকে ২২ মে। ওমেরা এলপিজি ৩১ আগস্ট লিখিত জবাব দিয়েছে। অন্যদিকে টোটাল ও ইউনাইটেড গ্রুপ জবাব দিয়েছে ২০ সেপ্টেম্বর।

বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে, কোম্পানিগুলোর জবাবের বিষয়ে ২ নভেম্বর কমিশনের সভা হতে পারে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে। তবে তাদের জবাবে যথাযথ মনে হচ্ছে না। যে কারণে আরও কিছু তথ্য চাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সব কিছু নির্ভর করছে কমিশনের সভার উপর। 

বিইআরসির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা ৩টি কোম্পানির জবাব পেয়েছি। এখন সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই কমিশনের সভায় তোলা হবে। সেখানে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

বিইআরসি সুত্র জানিয়েছে, ওমেরা তার জবাবে বলেছে তারা পরিবহন খরচ ও পরিবেশকের কমিশনসহ চালানে উল্লেখ করা হয়েছে। ডিলার যখন পরবর্তীতে গ্যাস নিতে আসেন, তখন পূর্বের বাড়তি অর্থ ফেরত দেওয়া হয়। যদিও বিইআরসির স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে কোন অবস্থাতেই বাড়তি দর নেওয়া যাবে না। চালানপত্রে নির্ধারিত দরেই উল্লেখ থাকতে হবে।

অন্যদিকে জুলাই মাসে ১২ কেজির সিলিন্ডার ডিলার পর্যায়ে ৯২৪ টাকা দরে বিক্রি করার নির্দেশনা থাকলেও ইউনাইটেড গ্রুপ বিক্রি করেছে ১০৭৪ টাকা করে। ইউনাইটেড এলপিজি লিমিটেডের এজিএম রাইসা বার্তা২৪.কমকে তখন বলেছিলেন, বিইআরসি দর নির্ধারণ করেছে ৩ তারিখে, সিস্টেম আপডেটের বিষয় রয়েছে। আমরা কি ততদিন পর্যন্ত বিক্রি বন্ধ রাখবো?

বিইআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী মে মাসের ৩ তারিখ সন্ধ্যা ৬টা থেকে নতুন দর কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। চালানপত্রটি ৫ তারিখের, যুক্তির খাতিরে যদি আগের মাসের দরও ধরে নিই তাতেও গড়মিল হয়। আগের মাসে (জুন) ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে বিক্রি করার কথা ছিল ১০০২ টাকায়। আর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল ১০৭৪ টাকা। তাহলে কি ডিস্ট্রিবিউটর ও খুচরা বিক্রেতার কমিশন কখনই দিচ্ছে না ইউনাইটেড এলপিজি। এমন প্রশ্ন করা হলে কোন জবাব দেননি।

বিইআরসির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। সবাইকে নির্ধারিত দরে এলপি গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমদানিকারকরা ডলারের দর নিয়ে আপত্তি করেছিল, আমরা সেখানে বাড়িয়ে দিয়েছি। আরও কিছু জায়গায় সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তারপরও দাম মেনে না চললে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তারা আমাদের লাইসেন্সী, তাদের লাইসেন্স বাতিল করার ক্ষমতাও আমাদের হাতে রয়েছে।

এখনও বেশি দামে এলপি গ্যাস বিক্রি প্রসঙ্গে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেছেন, আমরা অভিযান জোরদার করেছি। অনেক জায়গায় ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা বাজারে টিম পাঠিয়ে সার্ভে করেছি। কারা এই অপরাধ করছে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

২০২১ সালের ১২ এপ্রিল প্রথম এলপি গ্যাসের দর ঘোষণা করে বিইআরসি। তখন এলপিজি আমদানিকারক, ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার জন্য ১২ কেজির সিলিন্ডারে মোট ৩৫৯ দশমিক ৪০ টাকা কমিশন নির্ধারণ করা হয়েছিল। দর ঘোষণার দিনেই কমিশনের পরিমাণ নিয়ে আপত্তি তোলেন লোয়াব (এলপিজি আমদানিকারকদের সংগঠন)। তারা প্রতিমাসের দর ঘোষণাও বর্জন করে বিভিন্নভাবে বিইআরসির উপর চাপ তৈরি করে। এমনকি এলপিজি আমদানিবন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেন আমদানিকারকদের সংগঠন লোয়াব সভাপতি আজম জে চৌধুরী। বিইআরসি অনেকটা বাধ্য হয়ে ৭ মাসের মাথায় ১০ অক্টোবর কমিশন ৩৫৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৪১ টাকা করেন। তারপরও কোম্পানিগুলো বেশি দাম আদায় করে যাচ্ছে। বিষয়টি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট।

এবি ব্যাংক-এর হেমায়েতপুর উপশাখার উদ্বোধন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, এবি ব্যাংক-এর ৫৪তম উপশাখা হিসেবে হেমায়েতপুর উপশাখা উদ্বোধন করা হয়েছে

ছবি: সংগৃহীত, এবি ব্যাংক-এর ৫৪তম উপশাখা হিসেবে হেমায়েতপুর উপশাখা উদ্বোধন করা হয়েছে

  • Font increase
  • Font Decrease

এবি ব্যাংক-এর ৫৪তম উপশাখা হিসেবে হেমায়েতপুর উপশাখা উদ্বোধন করা হয়েছে।

সোমবার (৮ জুলাই) এবি ব্যাংক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল এ উপশাখাটির উদ্বোধন করেন।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তা।

ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার হেমায়েতপুর রোড সংলগ্ন যাদুরচরে হাজী আশরাফ শপিং কমপ্লেক্স অ্যান্ড টাওয়ারে এ উপশাখা কার্যক্রম শুরু করেছে।

;

ট্রেড ডিজিটালাইজেশন

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে: অর্থ প্রতিমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান

ছবি: সংগৃহীত, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান

  • Font increase
  • Font Decrease

অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেছেন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ডিজিটালাইজেশন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি, বিকাশ, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, প্রথাগত বাণিজ্যের সঙ্গে অনেক কাগজের ডকুমেন্টস এবং প্রক্রিয়া জড়িত। ট্রেড ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে ডকুমেন্টস দ্রুত পাঠানো, যাচাই করা এবং যেকোনো স্থান থেকে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হবে, যা ব্যবসায়ের খরচ ও সময় কমাবে। এর ফলে লেনদেন দ্রুত এবং নিরাপদ হবে৷

সোমবার (৮ জুলাই) ঢাকায় হোটেল রেনেসাঁয় ‘ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইসিসি) বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘ডিজিটালাইজেশন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন বাংলাদেশ’ ওয়ার্কশপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ রফতানি বাণিজ্য প্রধান দেশ। বাংলাদেশ ক্রস-বর্ডার ট্রেড ও পেমেন্টের জন্য ট্রেড ডিজিটালাইজেশন অত্যন্ত জরুরি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ডিজিটালাইজেশনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে। আইসিসি বাংলাদেশের আজকের ওয়ার্কশপ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ডিজিটালাইজেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে। এর ফলে অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়ন হবে।

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রেক্ষাপটে, দেশের চলমান উন্নয়ন ধরে রাখতে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট শাখাকে স্বয়ংক্রিয় ও ডিজিটালাইজড করে করদাতা, ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের নির্বিঘ্নে সেবা প্রদানের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

আইসিসি বাংলদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে ওয়ার্কশপে এডিবি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং ইউএনস্কাপের পরিচালক রূপা চন্দ ও আইটিএফসি’র রিজিওনাল হেড ইফতেখার আলম, আইসিসি বাংলাদেশের ব্যাংকিং কমিশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ এ. রুমী আলী, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, বাংলাদেশের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার নাছের এজাজ বিজয় উপস্থিত ছিলেন।

;

রূপপুর এনএনপির জন্য ৪৮ বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
রূপপুর এনএনপির জন্য ৪৮ বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞের প্রশিক্ষণ

রূপপুর এনএনপির জন্য ৪৮ বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞের প্রশিক্ষণ

  • Font increase
  • Font Decrease

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে কাজ করবেন এমন ৪৮ জন বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞের প্রাক-লাইসেন্স প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। রূপপুর এনপিপি সাইটে অবস্থিত একাডেমিতে এই প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে রাশিয়ার রসাটম টেকনিক্যাল একাডেমি।

প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে যারা মূল নিয়ন্ত্রণ কক্ষ পরিচালনা করবেন, প্রধান ও উপ-প্রধান প্রকৌশলীবৃন্দ। প্রশিক্ষণ শেষে সকলকে বেসিক লাইসেন্সিং পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। তবে, প্রকল্পে কাজ করার জন্য তাদেরকে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বায়েরা) থেকে লাইসেন্স অনুমোদন নিতে হবে।

রসাটম টেকনিক্যাল একাডেমির প্রকল্প পরিচালক সের্গেই লিউলিন জানান যে, প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম কয়েক ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। রাশিয়ায় রসাটম টেকনিক্যাল একাডেমিতে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ লাভের পর বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞরা নভোভারনেঝ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করেছেন। অতঃপর প্রাক-লাইসেন্সিং প্রশিক্ষণের পূর্বে তারা রূপপুর প্রকল্প সাইটে ছয় মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ লাভ করেন। উল্লেখ্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নভোভারনেঝ পারমাণবিক কেন্দ্রেরে মডেলে তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিটি প্রশিক্ষণ ধাপে দশটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞদের জ্ঞান পরীক্ষা করা হয়েছে। শুধুমাত্র তারপরেই তাদেরকে প্রাথমিক নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। অধিকন্তু, রসাটম টেকনিক্যাল একাডেমির সেফটি কালচার এন্ড পার্সোনাল রিলায়াবিলিটি কম্পিটেন্সি সেন্টার বিশেষ সাইকো-ডায়াগনস্টিক পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রশিক্ষনার্থীদের ব্যক্তিগত এবং সাইকো-ফিজিওলজিক্যাল বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণ করে। পেশাদারিত্ব দৃষ্টিকোণ থেকে এ জাতীয় বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।

সের্গেই লিওলিন বলেন, বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞরা তাদের ভবিষ্যৎ কাজের স্থান ও দায়িত্ব বিবেচনায় এক থেকে তিন বছরের প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন। এর ফলে তারা নিরাপত্তা ও পেশাদারিত্বের সাথে নিজস্ব দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন।

;

বিদায়ী অর্থবছরে ১৩ বছরের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি



জাহিদুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ৯.৭৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে কলে জানিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), যা এর আগের ১৩ অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড়ে ৯.০২% মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ০.৭১ শতাংশীয় পয়েন্ট।

এ সময়ে খাদ্য পণ্যে আগের অর্থবছরের ৮.৭১ শতাংশ থেকে ১.৯৪ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়ে দাড়িয়ে ১০.৬৫ শতাংশে। আর খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে ৯.৩৯ শতাংশ থেকে ০.৫৩ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮.৮৬ শতাংশে।

রোববার পরিসংখ্যান ব্যুরোর নিয়মিত প্রকাশনা ‘ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই), মূল্যস্ফীতি এবং মজুরি হার সূচক (ডব্লিউআরআই) বাংলাদেশ’-এর জুন জুন সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে। বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার গত তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বলে প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত অর্থবছরের শুরুতে মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য দেওয়া সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্য নামিয়ে আনা হয় আট শতাংশে।

বাজেটে বেধে দেওয়া মূল লক্ষ্যের চেয়ে ৩.৭৩ শতাংশীয় পয়েন্ট ও সংশোধিত বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে ১.৭৩ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে অর্থবছর শেষে।

বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে বাস্তবতা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, লক্ষ্যের মধ্যে মূল্যস্ফীতি বেধে রাখতে যেমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, দরিদ্র মানুষদের মূল্যস্ফীতির প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উদাসীনতা ও ব্যর্থতার কারণে গত এক বছর ধরে নিম্ন আয়ের লোকজন বিশেষ করে স্থির আয়ের লোকজন বড় ধরনের চাপে ছিলেন বলেও তারা মনে করেন।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরের ৬.৮২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি থেকে পরের অর্থবছরে বেড়ে দাড়ায় ১০.৯২ শতাংশে। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমে ২০১৭ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ঠেকে ৫.৪৪ শতাংশে। ২০২১-২২ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের ঘর ছাড়ায় এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি উঠে ৯.০২ শতাংশে। বিদায়ী অর্থবছরে আরেক দফায় বেড়ে মূল্যস্ফীতি উঠেছে ৯.৭৩ শতাংশে।

জুন মাসে কমেছে মূল্যস্ফীতি:
একক মাস হিসেবে জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯.৭২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। মে মাসে ৯.৮৯ শতাংশের চেয়ে এ সময়ে মূল্যস্ফীতি কমেছে ০.১৭ শতাংশীয় পয়েন্ট।

জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি শহর ও পল্লী অঞ্চলে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত এক কথায় সব সূচকেই জুন মাসে আগের মাসের তুলনায় কমেছে মূল্যস্ফীতি।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জুন মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ১০.৪২ শতাংশে নেমে এসেছে, যা মে মাসে ছিল ১০.৭৬ শতাংশ। এ হিসাবে মাসের ব্যবধানে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে ০.৩৪ শতাংশীয় পয়েন্ট। একইভাবে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে মে মাসের ৯.১৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি থেকে ০.০৪ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে জুন মাসে দাঁড়িয়েছে ৯.১৫ শতাংশে।

পল্লী অঞ্চলে জুন মাসে মূল্যস্ফীতি ৯.৮১ শতাংশে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। আগের মাসের ৯.৯৯ শতাংশ থেকে পল্লী অঞ্চলে জুনে মূল্যস্ফীতি কমেছে ০.১৮ শতাংশীয় পয়েন্ট। এ সময়ে পল্লী এলাকায় খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি ১০.৭৩ শতাংশ থেকে বেশ কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১০.৩৯ শতাংশে। আর পল্লী এলাকায় খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে ৯.৩১ শতাংশ থেকে সামান্য কমে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯.২৬ শতাংশে।

শহর এলাকায় মূল্যস্ফীতি জুন মাসে ৯.৫৮ শতাংশে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে বিবিএস, যা মে মাসের ৯.৭২ শতাংশ থেকে ১৪ বেসিস পয়েন্ট কম। এ সময়ে শহর এলাকায় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ১০.৮৬ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ১০.৫৪1 শতাংশে। আর খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে মে মাসের ৯.০৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি জুনে নেমেছে ৮.৯৮ শতাংশে।

যেভাবে মূল্যস্ফীতি হিসাব করে বিবিএস:
পল্লী ও শহর অঞ্চলে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত খাদের ৩৮৩টি পণ্য ও সেবার ৭৪৯টি ভ্যারাইটির দাম পর্যালোচনা করে প্রতি মাসে মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদন তৈরি করে বিবিএস। সারা দেশের ৬৪টি জেলার ১৫৪টি হাট-বাজার হতে নির্ধারিত সময়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে অনলাইনে ও জরুরি ডাকের মাধ্যমে মূল্য ও মজুরি শাখায় প্রেরণ করেন সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা।

পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির মাধ্যমে জীবনযাত্রার ব্যয়ে এক বছরের পরিবর্তনের তথ্য তুলে আনে বিবিএস।

জুন মাসে ৯.৭২ শতাংশ পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির অর্থ দাড়ায় গত এক বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় ৯.৭২ শতাংশ হারে বেড়েছে। এক বছর আগে ১০০ টাকায় পাওয়া যেত এমন পণ্যের দাম এখন দাঁড়িয়েছে ১০৯.৭২ টাকায়। আয় একই হারে না বাড়লে ভোক্তাকে আগের চেয়ে কম পণ্য ও সেবা কিনতে হবে।

মজুরি হার মূল্যস্ফীতির নিচে:
বিদায়ী জুন মাসে ৯.৭৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির বিপরীতে শ্রমজীবী মানুষের মজুরি মাত্র ৭.৯৫ শতাংশ হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। এ হিসাবে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির গতির চাইতে মজুরি আয় ১.৭৭ শতাংশীয় পয়েন্ট কম হারে বেড়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির চাইতে মজুরি হার এক থেকে দেড় শতাংশ বেশি হারে বাড়লেও সাম্প্রতিক সময়ে মজুরি হার খুবই ধীরে বাড়ছে। টানা ২৯ মাস ধরে মজুরি হার মূল্যস্ফীতির নিচে অবস্থান করছে বলেও পর্যালোচনায় উঠে এসেছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১২ মাসে গড়ে ৯.৭৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতির বিপরীতে মজুরি হার বেড়েছে গড়ে ৭.৭৪ শতাংশ। এ হিসাবে মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বেড়েছে ১.৯৯ শতাংশীয় পয়েন্ট কম হারে।

যা বলছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা:
গত অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ছয় শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না বলে মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হারে অস্বাভাবিক চাপ, বৈশ্বিক টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে ঘোষণা করা বাজেটে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। আবার মূল্যস্ফীতির চাপ সামালে উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, সুদের হারের ক্যাপ অনেক বিলম্বে উঠানোর কারণে সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে পূরণ হয়নি।

সুদের হার এককভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না দাবি করে তিনি বলেন, দেশে বাজার ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। তা ছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো খাতের বিভিন্ন সঙ্কটে বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে বলেও তিনি মনে করেন।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রা ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি রাজস্ব ব্যবস্থাপনায়ও উদ্যোগের ঘাটতি ছিল বলে মনে করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, অনেক বিলম্বে সুদের হার বাড়ানোর কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ তেমন কোন কাজে লাগেনি। বাজেট বাস্তবায়নে ব্যক্তি খাত বিশেষ করে দরিদ্র মানুষদের জন্যে বরাদ্দ বাড়াতে সরকার কৃচ্ছ্রতা অবলম্বন করলেও সরকারি খাতে দেদার অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। লম্বা সময় ধরে বিনিময় হার স্থির রেখে কম সময়ের মধ্যে টাকার মানে বড় ধরনের অবনমনের কারণেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

চাঁদাবাজি, মজুদদারি, কার্টেলসহ বিভিন্ন কারণে পণ্যের দাম বাড়লেও এ সব অপকর্ম কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন।

মূল্যস্ফীতির কারণে স্থির আয়ের লোকজন বিশেষ করে দরিদ্র লোকজন সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি হার কমে আসলে মানুষের প্রকৃত আয় তথা ক্রয়ক্ষমতা কমে আসে। এই অবস্থা চলতে থাকলে মানুষের ভোগের পরিমাণ কমে আসে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ব্যয় কমাতে দরিদ্র লোকজন খাবার, চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যয়ে লাগাম টানতে বাধ্য হয়। এ সব খাতে ব্যয় কমালে মানব সম্পদ উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর প্রভাবে ভবিষ্যতে দরিদ্র মানুষের উৎপাদনশীলতা ও আয় কমে আসতে পারে।

;