বিইআরসির শোকজের জবাব দিয়েছে ইউনাইটেড, ওমেরা ও টোটাল
বেশি দামে এলপি গ্যাস বিক্রির দায়ে অভিযুক্ত ইউনাইটেড, ওমেরা ও টোটাল গ্রুপ শোকজের জবাব দিয়েছে। কমিশনের বৈঠকে পরবর্তী করণীয় চুড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দাম রাখায় ওই ৩ কোম্পানিকে শোকজ করে বিইআরসি। টোটাল ও ইউনাইটেডকে শোকজ করা হয় ১১ জুলাই আর ওমেরাকে ২২ মে। ওমেরা এলপিজি ৩১ আগস্ট লিখিত জবাব দিয়েছে। অন্যদিকে টোটাল ও ইউনাইটেড গ্রুপ জবাব দিয়েছে ২০ সেপ্টেম্বর।
বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে, কোম্পানিগুলোর জবাবের বিষয়ে ২ নভেম্বর কমিশনের সভা হতে পারে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে। তবে তাদের জবাবে যথাযথ মনে হচ্ছে না। যে কারণে আরও কিছু তথ্য চাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সব কিছু নির্ভর করছে কমিশনের সভার উপর।
বিইআরসির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা ৩টি কোম্পানির জবাব পেয়েছি। এখন সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই কমিশনের সভায় তোলা হবে। সেখানে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
বিইআরসি সুত্র জানিয়েছে, ওমেরা তার জবাবে বলেছে তারা পরিবহন খরচ ও পরিবেশকের কমিশনসহ চালানে উল্লেখ করা হয়েছে। ডিলার যখন পরবর্তীতে গ্যাস নিতে আসেন, তখন পূর্বের বাড়তি অর্থ ফেরত দেওয়া হয়। যদিও বিইআরসির স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে কোন অবস্থাতেই বাড়তি দর নেওয়া যাবে না। চালানপত্রে নির্ধারিত দরেই উল্লেখ থাকতে হবে।
অন্যদিকে জুলাই মাসে ১২ কেজির সিলিন্ডার ডিলার পর্যায়ে ৯২৪ টাকা দরে বিক্রি করার নির্দেশনা থাকলেও ইউনাইটেড গ্রুপ বিক্রি করেছে ১০৭৪ টাকা করে। ইউনাইটেড এলপিজি লিমিটেডের এজিএম রাইসা বার্তা২৪.কমকে তখন বলেছিলেন, বিইআরসি দর নির্ধারণ করেছে ৩ তারিখে, সিস্টেম আপডেটের বিষয় রয়েছে। আমরা কি ততদিন পর্যন্ত বিক্রি বন্ধ রাখবো?
বিইআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী মে মাসের ৩ তারিখ সন্ধ্যা ৬টা থেকে নতুন দর কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। চালানপত্রটি ৫ তারিখের, যুক্তির খাতিরে যদি আগের মাসের দরও ধরে নিই তাতেও গড়মিল হয়। আগের মাসে (জুন) ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে বিক্রি করার কথা ছিল ১০০২ টাকায়। আর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল ১০৭৪ টাকা। তাহলে কি ডিস্ট্রিবিউটর ও খুচরা বিক্রেতার কমিশন কখনই দিচ্ছে না ইউনাইটেড এলপিজি। এমন প্রশ্ন করা হলে কোন জবাব দেননি।
বিইআরসির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। সবাইকে নির্ধারিত দরে এলপি গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমদানিকারকরা ডলারের দর নিয়ে আপত্তি করেছিল, আমরা সেখানে বাড়িয়ে দিয়েছি। আরও কিছু জায়গায় সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তারপরও দাম মেনে না চললে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তারা আমাদের লাইসেন্সী, তাদের লাইসেন্স বাতিল করার ক্ষমতাও আমাদের হাতে রয়েছে।
এখনও বেশি দামে এলপি গ্যাস বিক্রি প্রসঙ্গে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেছেন, আমরা অভিযান জোরদার করেছি। অনেক জায়গায় ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা বাজারে টিম পাঠিয়ে সার্ভে করেছি। কারা এই অপরাধ করছে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
২০২১ সালের ১২ এপ্রিল প্রথম এলপি গ্যাসের দর ঘোষণা করে বিইআরসি। তখন এলপিজি আমদানিকারক, ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার জন্য ১২ কেজির সিলিন্ডারে মোট ৩৫৯ দশমিক ৪০ টাকা কমিশন নির্ধারণ করা হয়েছিল। দর ঘোষণার দিনেই কমিশনের পরিমাণ নিয়ে আপত্তি তোলেন লোয়াব (এলপিজি আমদানিকারকদের সংগঠন)। তারা প্রতিমাসের দর ঘোষণাও বর্জন করে বিভিন্নভাবে বিইআরসির উপর চাপ তৈরি করে। এমনকি এলপিজি আমদানিবন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেন আমদানিকারকদের সংগঠন লোয়াব সভাপতি আজম জে চৌধুরী। বিইআরসি অনেকটা বাধ্য হয়ে ৭ মাসের মাথায় ১০ অক্টোবর কমিশন ৩৫৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৪১ টাকা করেন। তারপরও কোম্পানিগুলো বেশি দাম আদায় করে যাচ্ছে। বিষয়টি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট।