ঝুঁকিপূর্ণ খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ার নিয়ে চলছে কারসাজি

  • ওয়ালিদ সাকিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম 
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

পাঁচ বছরেও ফিরতে পারেনি আয়ে, গত দুই বছর লভ্যাংশ দিচ্ছে না বিনিয়োগকারীদের। ঋণাত্মক কোম্পানির সম্পদ মূল্যও। তবুও গত কয়েকদিন ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের শেয়ারের দাম। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে একাধিকবার সতর্ক করা হলেও লাগাম টানা যাচ্ছে না দুর্বল কোম্পানিটির শেয়ারদরের। মাত্র ১৮ কার্যদিবসেই দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে কোম্পানিটির শেয়ারদর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের কাগজ ও মুদ্রণ খাতে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম নিয়ে কোন চক্র কারসাজি করছে। অন্যথায় দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ এ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কয়েকদিনের ব্যবধানে দ্বিগুণ হওয়ার মতো কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৯ অক্টোবর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে খুলনা প্রিন্টিংয়ের প্রতিটি শেয়ার ৯ টাকা ৮০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়ায় ২২ টাকা ১০ পয়সায়। মাত্র ১৮ কার্যদিবসের ব্যবধানে দুর্বল এ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১২ টাকা ৩০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়েছে। শতাংশ হিসেবে এ সময়ে দর বৃদ্ধির পরিমাণ ১২৫ দশমিক ৫১ শতাংশ।

লাগামহীন শেয়ারদরের খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং গত দুই বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের সর্বশেষ লভ্যাংশ দিয়েছে ২০২০ সালে। ওই বছর শেয়ারহোল্ডারদের নামমাত্র দশমিক ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

ডিএসইর তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরেও আয়ে ফিরতে পারেনি কাগজ ও মুদ্রণ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি। সর্বশেষ হিসাব বছরে (২০২২ সাল) প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি ৩ টাকা ১০ পয়সা করে সর্বমোট ২২ কোটি ৬৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। এর আগের বছরও ৪৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছিল খুলনা প্রিন্টিং।

শুধু লোকসানই দিচ্ছে এমন নয়। সর্বশেষ হিসাব বছরে খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ঋণাত্মক হয়েছে। ২০২২ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদের মূল্য ছিল ঋণাত্মক (নেগেটিভ) ১ টাকা ৮৬ পয়সা। এছাড়াও কোম্পানিটির রিজার্ভও ছিল ঋণাত্মক ৮৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

ঝুঁকিপূর্ণ এ কোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক মনে করছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। গত ৭ নভেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধির পেছনে মূল্য সংবেদনশীল কোনো তথ্য আছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়। তবে ডিএসইর এমন প্রশ্নের কোনো জবাবই দেয়নি খুলনা প্রিন্টিং।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বার্তা২৪কে বলেন, ‘খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ার নিয়ে যা হচ্ছে তা স্রেফ জুয়া খেলা। এ ধরনের কোম্পানিগুলো ডিভিডেন্ড দিচ্ছে কি না, তাদের আয় আছে কিনা, কারসাজি চক্রের এগুলো দেখার সময় নেই। এসব কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্জিন ঋণ বন্ধ করে দিলে কারসাজি হয়তো বন্ধ হবে।’

ডিএসইর দেয়া তথ্য অনুযায়ী খুলনা প্রিন্টিংয়ের কোম্পানি সচিব মো. মিলন খান। তার কাছে কোম্পানিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুলনা প্রিন্টিংয়ে এখন আমি কর্মরত নেই’।