ইজিবাইকের জ্বালানি খরচ সব থেকে কম
ইজিবাইকে প্রতি কিলোমিটারে জ্বালানি খরচ হয় মাত্রা ৯৭ পয়সা আর প্রাইভেটকারে ৮.৬০ টাকা। বাসযাত্রায় খরচ হয় ২ টাকা ১৫ পয়সা। ইজিবাইকের প্রকৃত খরচ তার থেকেও কম বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
রোববার (২ জুন) সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত 'উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট'-এর (ক্লিন) উদ্যোগে সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতে ইজিবাইকের ভূমিকা’ শীর্ষক এক গবেষণায় এমন দাবি করা হয়।
‘ক্লিন’-এর গবেষণা কর্মকর্তা সেজিনা খান বলেন, দুর্ঘটনাপ্রবণ হলেও ইজিবাইক অন্তত ট্রাক, লরি, বাস ও মোটরসাইকেলের তুলনায় নিরাপদ। বিগত সাত বছরের (২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল) দুর্ঘটনা প্রতিবেদন অনুসারে, মোট দুর্ঘটনার ৮.৬ শতাংশের জন্য ইজিবাইক দায়ী। অথচ ট্রাক ও ভারী যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, ২৭ শতাংশ। মোটরসাইকেলের কারণে ২৪.৬ শতাংশ এবং বাসের কারণে ১৫.৭১ শতাংশ।
সেজিনা খান বলেন, শহরের সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের তুলনায় ইজিবাইক সব থেকে সবুজ যানবাহন। প্রতি কিলোমিটারে ইজিবাইক (ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা) ৪৯.৫৬ গ্রাম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ করে।
পক্ষান্তরে, একটি ১৫০০ সিসি প্রাইভেটকার থেকে নির্গত হয় ১৫৯.১৬ গ্রাম ও মাইক্রোবাস থেকে ১৯৮.০৩ গ্রাম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রায় ১৪ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) আছে। এর অধিকাংশই এদেশের স্থানীয় প্রযুক্তিতে তৈরি।
ইজিবাইক নির্মাণ, চালনা, মেরামত ও চার্জিংয়ের সঙ্গে প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষের কর্মসংস্থান যুক্ত হয়ে আছে। দেশে যথাযথ জনপরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় গ্রামীণ ও শহুরে সাধারণ যাতায়াতকারীদের জন্য ইজিবাইক বা অটোরিকশা একটি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। প্রায় আড়াই কোটি মানুষ স্বল্প দূরত্বের যাতায়াতের জন্য ইজিবাইক ব্যবহার করে থাকেন।
গবেষণাটির অন্যতম গবেষক কানিজ রাবেয়া বলেন, এই যানবাহন দেশের অর্থনীতিতে প্রতিবছর প্রায় ৯৭ হাজার ৬শ ২৫ কোটি টাকার অবদান রাখে। এর মধ্যে ইজিবাইক নির্মাণখাত ৭ হাজার ৫শ কোটি, ব্যাটারি তৈরি ও বাজারজাতখাত ৮ হাজার কোটি টাকা এবং চালনা, মেরামত ও চার্জিংখাত ৮২ হাজার ১শ ২৫ কোটি টাকার ভূমিকা পালন করে।
‘ক্লিন’-এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, বিদ্যুৎখাতের অলস সক্ষমতা কমাতে ইজিবাইক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিবছর ইজিবাইকে চার্জ দিতে প্রায় ৪শ ৯০ কেটি ৫০ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ দরকার হয়, যা ৬শ ৫৯ মেগাওয়াটের সমান। বর্তমানে বিদ্যুৎখাতে ৬৪.২ শতাংশ অতিরিক্ত সক্ষমতা রয়েছে। ইজিবাইকগুলো এর অন্তত ৫.৬৪ শতাংশ কমানোয় ভূমিকা পালন করছে।
ইজিবাইক আরো নিরাপদ ও সবুজ করার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ১০ দফা সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।