সামিট এলএনজি টার্মিনাল বিকল, দুর্ভোগের শঙ্কা
ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত সামিট গ্রুপের এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। স্পর্টে মেরামত করা সম্ভব হবে না কি ডকে (সিঙ্গাপুর) নিতে হবে সে বিষয়ে জানা যাবে আজ-কালের মধ্যে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব নুরুল আলম এক প্রশ্নের জবাবে বার্তা২৪.কমকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিষয়টি নিয়ে সামিট গ্রুপ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ প্রথম থেকে বেশ গোপনীয়তা রক্ষা করে চলছেন। প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি নিয়েও রাখ রাখ ঢাক ঢাক করার কোন কারণে দেখছেন না অনেকেই।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, একটি পন্টুনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এফএসআরইউ এর পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকেই এফএসআরইউ থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
এলএনজি আমদানি দায়িত্বে থাকা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিজিসিএল) সূত্র জানিয়েছে, কমদামে আনা একটি কার্গো ফেরত দিতে হয়েছে। এরপরেই এলএনজির দাম বেড়ে গেছে আন্তর্জাতিক বাজারে। তবে ভাগ্য ভালো যে আমাদেরকে জরিমানা দিতে হয়নি।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব নুরুল আলম বলেন, আমরা আজ-কালের মধ্যে নিশ্চিত হতে পারবো স্পর্টে মেরামত করা সম্ভব হবে নাকি ডকে নিতে হবে। ইতোমধ্যে ৩টি কার্গো ফেরত দিতে হয়েছে। যেগুলো বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহ করার কথা ছিল। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে তার জন্য ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে ফ্লোরিডার মতো যেসব এলাকায় সুপার সাইক্লোন হয় তারা কি ব্যবস্থা নেন, সেগুলো অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
সামিট গ্রুপের ভাসমান ওই টার্মিনালটি দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ দিতে পারে। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সারাদেশেই তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মেরামত করার জন্য যদি ডকে (সিঙ্গাপুর) নিতে হয় তাহলে প্রায় ১ থেকে দেড় মাসের মতো সময় লাগবে। প্রচণ্ড গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই সময়ে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ার চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে বছরান্তে ঈদের সময় চাহিদা কম থাকায় নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস ফিল্ড বিবিয়ানা। গ্যাস ফিল্ডটির দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। যা বাংলাদেশের মোট উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেকের বেশি। গত ঈদেও আংশিক হারে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। ঈদের দিনে (১১ এপ্রিল) সরবরাহ করা হয়েছিল ৬২৩ মিলিয়ন ঘনফুট। এবারও ঈদের সময় ফিল্ডটি রক্ষণাবেক্ষণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওই ফিল্ডের মালিকানায় থাকা শেভরন বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই একটি প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে বলে পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে। শেভরন বাংলাদেশ ১৬ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত আংশিক হারে উৎপাদন বন্ধ রেখে রক্ষণাবেক্ষণ করার প্রস্তাব করেছে। অন্যদিকে তাদের জালালাবাদ গ্যাস ফিল্ড ১৮ ও ১৯ জুন পুরোপুরি বন্ধ রাখার অনুমতি চেয়েছে।
একদিকে সামিটের এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ, অন্যদিকে সবচেয়ে বড় গ্যাস ফিল্ড বিবিয়ানার গ্যাস সরবরাহ যদি কমে যায়, আর জালালাবাদ বন্ধ থাকে। তাহলে অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও ঈদের সময়ে শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় গ্যাসের চাহিদা অনেকটা কমে যায়।
বাংলাদেশে মোট ২৯টি গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কৃত হয়েছে। ২০টি গ্যাস ফিল্ডের ১১৪টি কূপ দিয়ে দৈনিক (জুন ৩, ২০২৪) ২০৩২ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এক সময় ২৮০০ মিলিয়ন পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। মজুদ কমে আসায় অনেক কূপেই উৎপাদন কমে এসেছে। ৫টি গ্যাস ফিল্ড (রূপগঞ্জ, কামতা, ফেনী, ছাতক ও সাঙ্গু) পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ৩টি গ্যাস ফিল্ড (কুতুবদিয়া, ভোলা ও জকিগঞ্জ) বন্ধ রয়েছে গ্যাস সঞ্চালন ব্যবস্থা না থাকায়।
অন্যদিকে চাহিদার ঘাটতি দূর করতে ২টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল দিয়ে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করা হয়। যার মোট সরবরাহ সক্ষমতা রয়েছে ১১০০ মিলিয়ন। এরপরও প্রায় দেড় হাজার মিলিয়নের মতো ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।