‘বাজেট সাহসী হলেও বাস্তবায়নে তদারকি ও নজরদারির প্রয়োজন’

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান

ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সাহসী হলেও বাস্তবায়নে যথাযথ তদারকি ও নজরদারির প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান।

‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ বাজেট প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সময়ে যথোপযুক্ত ও সাহসী পদক্ষেপ হলেও তা বাস্তবায়নে যথাযথ তদারকি ও নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে।

খলিলুর রহমান বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের জন্য ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তার যথাযথ তদারকি এবং সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা না গেলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে। বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ বরাদ্দ কমানোর ফলে জনগণের জীবনাযাত্রার খরচ বাড়তে পারে।

বিজ্ঞাপন

নিয়মিত কর প্রদানকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর করের বোঝা না বাড়িয়ে নতুন করদাতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব প্রদানসহ পরিবহন ও যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান এ শিল্পপতি।

তিনি মনে করেন, করদাতাদের হয়রানি কমাতে আয়কর রিটার্ন অ্যাসেসমেন্টের বিধান বাতিল করায় ব্যক্তি ও কোম্পনি দুই শ্রেণির করদাতাই কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে। যেহেতু, বিশ্ব অর্থনীতি মন্দা। তাই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধি, ডলার সংকট এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হেতু মূল্যস্ফীতি ১০ এর কোটায় উঠায় বর্ধিত উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে প্রতিকূল অবস্থা সেহেতু দেশের বৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী পোশাক শিল্প টিকিয়ে রাখতে রফতানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে ০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন তিনি।

কাস্টম আইন ২০২৩ এ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে বলে দাবি করেন শিল্পপতি খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, কাস্টম অ্যাক্ট ১৯৬৯ এর ৩২ ধারায় সৎ ও ব্যবসায়ীদের রক্ষায় ভুল এবং অসত্য ঘোষণা উভয়ের মধ্যে ১০০০ টাকা শুল্ক ব্যবধানে যে মানদণ্ডটি ছিল কাস্টম আইন ২০২৩ এর ৩৩ ধারায় তা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত বিপদে পড়বে সৎ ব্যবসায়ীরা। কাস্টমস্ অফিসারের করুণায় থাকতে হবে। যার ফলে দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাই উক্ত ৩৩ ধারা বাতিল করে কাস্টম অ্যাক্ট ১৯৬৯ এর পুনর্বহাল করার অনুরোধ করছি। এ ছাড়া কাস্টম অ্যাক্ট ২০২৩ এর ৮২ ধারায় আমদানিকারকের কোনো ভুল বা আমদানি দলিলে কোনো গড়মিল থাকলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকেও দায়ী করা হবে বলে উক্ত ৮২ ধারায় এরূপ লেখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে আমদানিকারকের দলিলে বা বিদেশ থেকে আমদানিকারকের কাছে পাঠানো দলিলে কোনো গড়মিল থাকলে তা কাস্টম এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের জানার কথা নয়। তাই উক্ত ধারাটি প্রত্যাহার করা উচিত।

কাস্টম আইন ২০২৩ বিষয়ে আমরা চেম্বার থেকে বলতে চাই, উক্ত আইনে আরও যেসব অসঙ্গতি রয়েছে তা নিরসনে এফবিসিসিআই ও রাজস্ব বোর্ড আলোচনার প্রেক্ষিতে উক্ত আইনের সংশোধনী আনা আবশ্যক।

এই বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ এ আনার যে প্রত্যাশা রাখা হয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা রক্ষায় দেশের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে দেশি শিল্প উৎপাদন প্রবৃদ্ধির প্রয়াসে বিশেষ করে টেক্সটাইল সেক্টরে যথা প্রয়োজনীয় সহায়তা আবশ্যক। পাশাপাশি রফতানি শিল্প এবং দেশের যাবতীয় মেশিনারিজ/ প্ল্যান্টস্ আমদানিতে সব প্রতিবন্ধকতার অবসান করে শুধু প্যাকিং লিস্ট মতে মেশিনারি চালান ছাড় দিয়ে তার যাবতীয় কার্যক্রম প্রতিস্থাপন ইত্যাদির তদারকি ভ্যাট বিভাগের ওপর ন্যাস্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করি। যার ফলে চট্টগ্রাম কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের দ্বৈত আনুষ্ঠানিকতা পরিহার হবে। শুধু ভ্যাট বিভাগ শিল্প চালান মেশিনারিজ ইত্যাদি স্থাপন বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

যেহেতু কোনো মেশিনারিজ বা প্ল্যান্ট আমদানি হলে তা দেশের যেকোনো স্থানে প্রতিস্থাপন হবে এবং দেশের উৎপাদন বাড়বে। জিডিপি বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। মেশিনারিজ বা শিল্পায়নে সরকার বহমুখী রাজস্ব আয়ের সুযোগ পাবে। মেশিনারি/ প্ল্যান্ট এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি আমদানির বহুরকম শর্ত প্রত্যাহার করে সব ধরনের মেশিনারি বা প্ল্যান্ট আমদানিতে বিদ্যমান হার ১ শতাংশ শুল্ক আদায়ে মেশিনারি আমদানি উন্মুক্ত করা উচিত।

বাজেটে ঘাটতি মোকাবিলায় দেশি বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতনতার প্রয়োজন বলে মনে করেন শিল্পপতি খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক তদারকি এবং জবাবদিহির আওতায় আনলে ব্যয় বৃদ্ধি ও সময়ক্ষেপণ কমবে। এ ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালকের বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার জবাবদিহির জন্য প্রতি ত্রৈমাসিক অন্তর প্রকল্প অগ্রগতির রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর দফতরে প্রেরণসহ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।

‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদের অধিবেশনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।