জ্বালানি খাত এবারও উপেক্ষিত থেকে গেল

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদে বাজেট বরাদ্দ কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু সত্যিই কি বরাদ্দ বেড়েছে।এমন প্রশ্ন তোলাই যায়, কারণ বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে বরাদ্দ বাড়লেও সংশোধিত বাজেটের তুলনায় কমেছে বরাদ্দ।

ওই খাতে ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বরাদ্দ ছিল ৯৯৪ কোটি টাকা আর সংশোধিত বাজেটে আকার দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। বাজেটের প্রবৃদ্ধি ছাড়াই সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৫৬ কোটি টাকা কম প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম বাজেট।

জ্বালানি ও খনিজ বিভাগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। পরের অর্থবছরে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয় বরাদ্দ। প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩টি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়াকওভার কূপের কথা বলা হয়েছে। ৭০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ, বাপেক্স কর্তৃক ৮০ লাইন কিলোমিটার ভূতাত্ত্বিক জরিপ, নতুন গ্যাস ক্ষেত্র চিহ্নিত করার জন্য বাপেক্স কর্তৃক ১২০০ লাইন কিলোমিটার ২ডি, ৯০০ কিলোমিটার ৩ডি সার্ভে, বর্ধিত চাহিদা পূরণের জন্য ৫ মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি, ৬২ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন, ৫০ কিলোমিটার জ্বালানিতে তেলের পাইপ স্থাপন, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৫০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেছিলেন, আমাদের চলমান ৪৮ খনন কূপ প্রকল্পের অর্থের সংস্থান রয়েছে। আরও ১০০ কূপ খনন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে ২০২৬ সাল থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হবে। ওই প্রকল্পে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ৭ হাজার কোটি টাকা। সরকারের কাছে প্রত্যেক বছরে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা করে অর্থায়ন চাওয়া হয়েছে। তবে তা প্রস্তাবিত বাজেটে প্রয়োজন পড়ছে না। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বরাদ্দ প্রয়োজন হবে। আমরা এখন থেকেই কাজ শুরু করেছি।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন, জ্বালানি বিভাগকে গুরুত্ব কম দেওয়ার কারণে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। প্রাথমিক জ্বালানির সংকটের কারণে শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বসে থাকছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতে একদিকে জনগণ লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, অন্যদিকে বসিয়ে রেখেও কোটি কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচেছ।

গ্যাস সংকট মোকাবিলায় অস্থিতিশীল আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানিতে পা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু চড়াদামে এলএনজি আমদানি করতে গিয়ে চরম মাশুল দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রতি ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটারের একটি করে কূপ খননের লক্ষ্যে কাজ করছে, আমেরিকা প্রতি ১৪ বর্গকিলোমিটারের ১টি এবং ভারত ১৮.৬ বর্গকিলোমিটারের ১টি কূপ খনন মানদণ্ড বিবেচনায় কাজ করছে। শুধুমাত্র অনুসন্ধান কার্যক্রমের ঢিলেমির কারণে দেশকে চরম মাসুল দিতে হচ্ছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত স্থবিরতা দেশকে চরম সংকটের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। বাংলাদেশে প্রচুর গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে, প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানো।

তবে আশা কথা হচ্ছে কয়েক দশকের স্থবিরতার আড়মোড়া ভেঙে ছুটতে শুরু করেছে পেট্রোবাংলা। সে কারণে অনেকে আশা করেছিলেন এবারও হয়তো বাজেটে অগ্রাধিকার পাবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।