দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করতে অর্থ বিল পাস হয়েছে। বিল উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
অর্থবিল আজ শনিবার (২৯ জুন) পাস হলেও বাজেটের উপর দীর্ঘ আলোচনা ও যাচাই বাছাই শেষে আগামীকাল রোববার বাজেট পাস হবে। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবে স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী।
আগামীকাল রোববার (৩০ জুন) নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস হবে জাতীয় সংসদে। যা পরের দিন সোমবার (১ জুলাই) থেকে কার্যকর হবে। এবারের বাজেট আলোচনায় ২৬৪ জন সংসদ সদস্য অংশগ্রহণ করেছিলো।
এর আগে চলতি মাসে গত ৬ জুন আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে এবারের বাজেটের আকার বাড়ছে চার দশমিক ছয় শতাংশ। এটি দেশের ৫৩তম, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট।
বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে 'সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার' স্লোগান সামনে রেখে বাজেট ঘোষণা করা হয়। নতুন বাজেটে খাতভিত্তিক যেহারে বরাদ্দ দেওয়ায় হয়। আগামী বাজেটে ১৫টি খাতে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।
খাতভিত্তিক বরাদ্দ হলো—জনপ্রশাসন খাতে এক লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৪৭ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা খাতে ৪২ হাজার ১৪ কোটি টাকা, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে ৩৩ হাজার ৫২০ কোটি টাকা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে এক লাখ ১১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ৪৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকা, গৃহায়ন খাতে ছয় হাজার ৯২৯ কোটি টাকা, বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম খাতে ছয় হাজার ৭০০ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৪৭ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে পাঁচ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ব্যয় ৮২ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা, সুদ খাতে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং অন্যান্য খাতে আট হাজার ৫৭৬ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোয় তারল্যের জোগান দেওয়ার রেপো নিলাম অনুষ্ঠান কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকে জরুরি প্রয়োজনে তারল্যের জোগান দিতে আগের মতো এখনো দৈনিক ভিত্তিতে প্রচলিত তৎক্ষণিক ঋণ সুবিধা ও তাৎক্ষণিক আমানত সুবিধা অব্যাহত থাকবে। এসব উপকরণ ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ ও আমানত সুবিধা নিতে পারবে।
এ বিষয়ে সোমবার (১ জুলাই) কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এর আগে রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলার জারি করে ব্যাংকগুলোকে তারল্যের জোগান দিতে রেপো সুবিধা প্রতি কার্যদিবসের পরিবর্তে সপ্তাহে দুইদিন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতি সোম ও বুধবার এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। ওই দুইদিনের কোনোদিন সরকারি ছুটি থাকলে পরবর্তী কার্যদিবসে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।
এ সিদ্ধান্তের পর ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিশেষ করে জরুরি প্রয়োজনে তারল্যের জোগান নিয়ে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে। কারণ, ব্যাংকগুলোর প্রায় প্রতিদিনই টাকার প্রয়োজন। সেখানে দুইদিন দিলে তারা সমস্যায় পড়বেন। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে আনা হলে তারা দিনের শেষে নতুন নির্দেশনা জারি করে।
সূত্র জানায়, ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে তারল্যের জোগান দিতে তৎক্ষণিক ঋণ সুবিধা ও তাৎক্ষণিক আমানত সুবিধা- এ দুটি উপকরণ আগে থেকেই চালু আছে। এর নিলামও প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এর ব্যবহার কম হতো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এ দুটি উপকরণ ব্যবহার করে তারল্যের জোগান কম দিত। এখন আইএমএফের শর্তের কারণে রেপো সুবিধা কমাতে হয়েছে। যে কারণে তৎক্ষণিক ঋণ সুবিধা ও তাৎক্ষণিক আমানত সুবিধা উপকরণ দুটিকে এখন আবার সক্রিয় করা হবে।
ব্যাংকগুলো চাইলে প্রতিদিন এসব উপকরণ ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সুবিধা নিতে পারবে।
ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিলামের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে সরকারি খাতের বিভিন্ন বিল ও বন্ড কিনে। এগুলো থেকে পাওয়া অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ঋণ হিসাবে জোগান দেয়।
কোনো কারণে ব্যাংক ফাইন্যান্স কোম্পানির জরুরি ভিত্তিতে অর্থের প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ওইসব ট্রেজারি বিল বা বন্ড পুনরায় বিক্রি বা বন্ধক রেখে ঋণ দিতে পারে। একে বলা হয় রেপো। রেপোর মাধ্যমে আগে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসেই ঋণ দিতে পারত।
এখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপোর সুবিধা প্রতিদিন না দিয়ে সপ্তাহে দুই দিন অর্থাৎ সোমবার ও বুধবার দেবে। ফলে ব্যাংকগুলোকে ওই দুইদিনেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা নিতে হবে।
এর বাইরে অন্য সময় জরুরি অর্থের প্রয়োজন হলে কলমানি মার্কেট বা অন্য ব্যাংক থেকে ধার করতে হবে। এছাড়া সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেট থেকেও ধার করতে পারবে।
তবে সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেট সক্রিয় নয়। অন্য ব্যাংকে তারল্য সংকট থাকায় কলমানিতে লেনদেন কমে গেছে। স্বল্প ও মেয়াদি ধারও কমেছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তহবিল ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের দুটি উপকরণকে আরও বেশি সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এক সময়ের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংককে ছাড়িয়ে এখন শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স আহরণ, ঋণ বিতরণ ও আমানত সংগ্রহ করে ইসলামী ব্যাংক এ শীর্ষস্থান অর্জন করে।
২০২৩ সালে ইসলামী ব্যাংক মোট আমানত পেয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। আর একই বছর ঋণ বিতরণ করেছে মোট এক লাখ ৪১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা।
ঋণ বিতরণ ও আমানত প্রাপ্তি-এ দুই ক্ষেত্রেই দেশের শীর্ষস্থানে থাকা সোনালী ব্যাংককে পিছনে ফেলে শীর্ষস্থান দখল করেছে ইসলামী ব্যাংক। রেমিট্যান্স সংগ্রহে আগে থেকেই ইসলামী ব্যাংক শীর্ষস্থানে ছিল। প্রতি মাসেই ব্যাংকটি ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পেয়ে থাকে। বছরশেষে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ বিলিয়নের মতো। এ পরিমাণ রেমিট্যান্স অন্য কোনো ব্যাংক পায়নি।
আমানত সংগ্রহে এতোদিন শীর্ষস্থানে থাকা সোনালী ব্যাংক ২০২৩ সালে মোট আমানত পায় এক লাখ ৫০ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয় ৬ শতাংশের মতো। ২০২৩ সালে ইসলামী ব্যাংক এক লাখ ৫৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা আমানত পায়। প্রবৃদ্ধি হয় ৯ শতাংশ ।
২০২৩ সালে ইসলামী ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক ১ লাখ দুই হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে।
২০২৩ সালে আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাংক এখন থেকে ইসলামী ব্যাংক পিএলসি।
ই-ক্যাব নির্বাচন: পরিচালক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন টেকনিশিয়ান সিইও সৈকত
নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
অর্থনীতি
আসন্ন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরিচালক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন টেকনিশিয়ান টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং টেকনিশিয়ানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সোরাব হোসেন (সৈকত)।
সোমবার (১ জুলাই) ই-ক্যাবের বনানী কার্যালয়ে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যম কর্মীদের সংগঠন ডিজিটাল মিডিয়া ফোরাম-ডিএমএফ সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন, একিউর নিউট্রিশান লিমিটেডের সিইও আব্দুল মতিন ও ইক্যাব ২৪-২৬ নির্বাচন কমিশনার হাফিজুর রহমানসহ অনেকেই।
আগামী ২৭ জুলাই (২০২৪-২৬) অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে মো. সোরাব হোসেন সৈকতের অংশগ্রহণ ই-ক্যাব সদস্যদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সৈকত বলেন, “আগামী ই-ক্যাব নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরিচালক পদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। আগামী ২৭ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আশাকরি নির্বাচনে জয়ী হয়ে ই-ক্যাবকে একটি এসএমই বান্ধব সংগঠনে পরিণত করতে কাজ করে যাবো।”
তিনি আরও বলেন, "যদি আমি নির্বাচনে জয়ী হই, তাহলে গ্রামের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও ই-ক্যাবের পৃষ্ঠপোষকতা পাবেন। সেজন্য কাজ করে যাবো। শহরে কিংবা প্রান্তিকে কোনো উদ্যোক্তাই অবহেলিত হবেন না। সবাইকে সমানভাবে সহযোগিতার হাত বাড়াবো।আপনাদের সকলের দোয়া প্রার্থী।”
মো. সোরাব হোসেন সৈকত টেকনিশিয়ানের সিইও হিসেবে পরিচিত, তিনি তার নেতৃত্বে টেক কোম্পানিটিকে দেশের অন্যতম অনলাইনভিত্তিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার অভিজ্ঞতা, নেতৃত্ব এবং সেবামূলক মানসিকতা তাকে ই-ক্যাবের পরিচালক পদে একটি শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছে।
মো. সোরাব হোসেন তার নির্বাচনি প্রচারাভিযানে ই-ক্যাবের সদস্যদের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য তুলে ধরেছেন-
মেম্বারদের ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট, ট্রেনিং এবং মেন্টরিং: তিনি সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাদের প্রশিক্ষণ ও মেন্টরিংয়ের মাধ্যমে ই-কমার্স খাতে দক্ষতা উন্নয়নে মনোনিবেশ করবেন।
ইনভেস্টমেন্ট রেডিনেস এবং ক্রাউডফান্ডিং: ই-ক্যাব সদস্যদের জন্য বিনিয়োগ প্রস্তুতি এবং ক্রাউডফান্ডিং সুবিধা প্রদানে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন, যাতে তারা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারেন।
ক্রস বর্ডার ই-কমার্স: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে তিনি ক্রস-বর্ডার ই-কমার্স কার্যক্রমকে উৎসাহিত করবেন এবং সহজতর করবেন।
ই-ক্যাবের আসন্ন নির্বাচন ই-কমার্স খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন দেশের ই-কমার্স শিল্পের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সৈকতের প্রার্থিতা ই-ক্যাব সদস্যদের মধ্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্ভাবনী চিন্তার প্রতিফলন ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া ৬৪ জেলায় আমাদের যে সকল উদ্যোক্তারা রয়েছে তাদেরকে ইকমার্স ভিত্তি ব্যবসা সম্প্রসারণ এর সুযোগ করে দেওয়া। জেলা ভিত্তিক ইকমার্স এর কমিটি ও মিটআপ এর মাধ্যমে দেশীয় বাজার এ ইকমার্স এর উপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য।
ই-ক্যাব নির্বাচন ২০২৪-২৬ এর পরিচালনা কমিটির নির্বাচন ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে ই-ক্যাবের নেতৃত্বে নতুন পরিচালনা কমিটি আসবে, যারা আগামী দুই বছর ই-কমার্স খাতের উন্নয়নে কাজ করবে। মো. সোরাব হোসেন সৈকতের অংশগ্রহণ এই নির্বাচনে নতুন দৃষ্টিকোণ এবং উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
কম্পিউটার যন্ত্রাংশসহ নিত্যপণ্যে কমেছে শুল্ককর, তবে বাজারে প্রভাব নেই
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
অর্থনীতি
বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন ছাড়াই রোববার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে, ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য পাস হওয়া এই বাজেট কার্যকর হচ্ছে সোমবার (১ জুলাই) থেকে।
‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে ৬ জুন জাতীয় সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
এটি দেশের ৫৩তম ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম বাজেট।
প্রতিবারের মতো এবারের বাজেটেও বিভিন্ন ধরনের পণ্যের চাহিদা ও প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে শুল্ক ও কর হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটেছে। এর মধ্যে শুল্ক ও কর হ্রাস করা হয়েছে, এমন কিছু পণ্যের মধ্যে আছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, চিকিৎসা, প্রযুক্তি, নির্মাণসামগ্রীসহ আরো বেশ কিছু পণ্য। তবে বিভিন্ন অংশীজন ও ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে পাস হওয়া বাজেটের প্রভাব টের পাওয়া যায়নি বাজারের কোথাও।
ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের যন্ত্রাংশের মূল্যে বাজেটের প্রভাব
ল্যাপটপ ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশের ওপর বাজেটে শুল্ক কমানো হয়েছে। তবে সে প্রভাব কতটা পড়েছে মার্কেটে, তা জানতে সোমবার (১ জুলাই) আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কম্পিউটার মার্কেট আইডিবি ভবনে গিয়ে হতাশ হতে হয়। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেও পাওয়া যায়নি কোনো ধরনের সুখবর।
‘স্টার টেক কম্পিউটার্স’-এ কম্পিউটার কিনতে আসা যুবায়ের ও সামিউল নামে দুই ক্রেতার সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কম প্রতিবেদকের।
কম্পিউটার কিনবেন বলে অনেকদিন ধরেই খোঁজখবর রাখছেন বিভিন্ন যন্ত্রাংশের মূল্যের। অনলাইন ও অফলাইন দুই জায়গাতেই বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও দোকান ঘুরে মূল্য যাচাই করতে দেখা যায় তাদের। তবে এই এক মাসেরও বেশি সময়ের মধ্যেও মূল্যে কোনো ধরনের পার্থক্য চোখে পড়েনি তাদের।
তারা জানালেন, একেক জায়গায় একেক দাম। তবে এই সময়ের মধ্যে কোনোকিছুর দাম কমেছে বলে মনে হয়নি। দাম আগের মতোই একই তো দেখতে পাচ্ছি!
রায়ান'স কম্পিউটারের বিক্রয়কর্মী ইমন বলেন, 'বাজেটের পর আমাদের নতুন কোনো শিপমেন্ট হয়নি। আমাদের যা প্রোডাক্ট আছে, তা সবই আগের। নতুন এলসি খুলে নতুন পণ্য আনলে তখন হয়ত দাম কমতে পারে। সে ক্ষেত্রে তখন হয়ত ক্রেতারা কিছুটা সুবিধা পেতে পারেন’।
‘কম্পিউটার ভিলেজ’-এর আইডিবি শাখার ম্যানেজার এস এ সাব্বির বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি বিষয়টা নিয়ে এখনো পরিষ্কার না। তবে আমদানিকারকদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত যা জানতে পেরেছি, তাতে মনে হচ্ছে- যেই লাউ, সেই কদু! এক জায়গা থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে আরেক জায়গায় ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে’।
সাব্বির বলেন, ‘তবে সত্যি সত্যিই যদি শুল্ক কমে থাকে, তাহলে অবশ্যই দাম কমবে। আমরা এই সেক্টরে কেউই সাধারণত ২-৫ শতাংশের বেশি লাভ কোনো প্রোডাক্টে করতে পারি না। যদি শুল্ক কমে থাকে, তাহলে সে সুবিধা গ্রাহক পাবেন’।
উল্লেখ্য, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য পাস হওয়া বাজেটে ল্যাপটপ ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশে যথাক্রমে ১০.৫ ও ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ল্যাপটপ ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশে শুল্ক কমানোর বিষয়ে বাজেটে বলা হয়েছে, আমদানিকারকদের বর্তমানে ল্যাপটপ আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্কসহ মোট ৩১ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হচ্ছে। তবে বাজেটে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ এবং ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে শুল্ক-কর ৩১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০.৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সরকার আগে স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের সুরক্ষা দিতে ল্যাপটপ আমদানিতে কর বাড়িয়েছিল। তবে এমন পদক্ষেপে শেষপর্যন্ত গ্রাহকদের খরচ বেড়েছে। কারণ, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ল্যাপটপের মান ও দাম নিয়ে ক্রেতারা সন্তুষ্ট নন।
অন্যদিকে, কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী আমদানির জন্য আমদানিকারকরা কোনো শর্ত ছাড়াই শুধুমাত্র ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রদান করে সব ধরনের কম্পিউটার ও প্রিন্টারের যন্ত্রাংশ ইত্যাদি আমদানি করতে পারেন, যা প্রকৃত কম্পিউটার সামগ্রী উৎপাদকদের জন্য অসুবিধাজনক। তাই, বাজেটে ওই শুল্ক প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যে বাজেটের প্রভাব
একইভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অন্তত ৩০টি প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর কমানো হয়েছে।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে এসব পণ্যে উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, চাল, গম, আলু, মসুর, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, ময়দা, আটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা, সুতা এবং সব ধরনের ফলসহ ৩০ পণ্য।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে বাজেটের প্রভাব দেখা যায়নি। সোমবার দেশের সর্ববৃহৎ কাঁচাপণ্যের পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজেটের কোনো প্রভাব নেই বাজারে।
বাজেটের প্রভাব নিয়ে জানতে চাইলে কাঁচাপণ্যের আড়ৎদার ব্যবসায়ী আজগর আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আজ (সোমবার, ১ জুলাই) সকাল থেকেই বৃষ্টি। সে কারণে বাজারে কাস্টমার (ক্রেতা) কম। তাই, সব কিছুর দামও আজ কিছুটা কম। কিন্তু এখানে বাজেটের কোনো প্রভাব আছে বলে আমার মনে হয় না’।
কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা মার্জিয়া আক্তারও বাজেটের কোনো প্রভাব বাজারে দেখতে পাননি বলে জানান। মার্জিয়া আক্তার বলেন, 'আজকে তো সব কিছুর দামই কিছুটা কম মনে হচ্ছে। তবে এটা বৃষ্টির কারণে হতে পারে। কারণ, এগুলো তো আর রেখে দেওয়া সম্ভব না। তাই, একটু কম দামেই ছেড়ে দিচ্ছে। তবে কাল (মঙ্গলবার) দিন ভালো থাকলে দেখা যাবে, আবার দাম বেড়ে গেছে’!
মার্জিয়া আরো বলেন, ‘দাম তো সব আগেই বাড়িয়ে রেখেছে। এখন ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫ টাকা কমালে আমাদের কী লাভ হবে’!
নির্মাণ সামগ্রীর ওপর বাজেটের প্রভাব
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় সেখানেও কমানো হয়েছে শুল্ক। বাজেটে আবাসনসহ বিভিন্ন নির্মাণখাতে ব্যবহৃত হওয়া রড, বার ও এঙ্গেল তৈরির কাঁচামাল ম্যাঙ্গানিজ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
বাজেটে দাম কমলেও বাজারে সে প্রভাব এখনো পড়েনি। একইদিন কথা হয়, মিরপুর শেওড়াপাড়ার আলাউদ্দিন ট্রেডার্স-এর মালিক মো. আলাউদ্দিন এর সঙ্গে। তবে তিনিও কোনো সুখবর দিতে পারেননি। মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘বাজেটে কমানো হয়েছে কি না, বলতে পারি না। তবে আমাদের এখানে সব কিছু আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। আমরা আগে যে দামে রড কিনে আনতাম, এখনো একই দামে কিনে আনি। যদি সরকার শুল্ক কমিয়ে থাকে, তাহলে হয়ত দাম কমবে। তবে সময় লাগবে’।
এসব পণ্য ছাড়াও ২০২৪-২০২৫ সালের বাজেটে আরো বেশ কিছু পণ্যে শুল্ক-কর কমানো হয়েছে। এর মধ্যে আছে-
প্যাকেটজাত গুঁড়াদুধ প্যাকেটজাত গুঁড়াদুধ আমদানিতে কমানো হয়েছে করের হার। আড়াই কেজি ওজন পর্যন্ত গুঁড়া দুধের ওপর কর হার ৮৯.৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫৮.৬০ শতাংশ করা হয়েছে।
বিদেশি চকোলেট
এবারের বাজেটে বড় ধরনের কর হার কমানো হয়েছে চকোলেট আমদানিতে। এখাতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ২০ শতাংশ।
কিডনি ডায়ালাইসিসের ফিল্টার কিডনি ডায়ালাইসিসে ব্যবহৃত ফিল্টার ও সার্কিট আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করা হয়েছে।
কার্পেট কার্পেট তৈরির প্রধান কাঁচামাল পলিপ্রোপাইলিন ইয়ার্ন আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দেশে তৈরি কার্পেটের দাম কমতে পারে।
ডেঙ্গু কিট ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কিট আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীদের এনএস-১ এন্টিজেন পরীক্ষার খরচ সরকারি হাসপাতালের জন্য ১শ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালের জন্য ৩শ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন পণ্যের মূল্যে বাজেটের প্রভাব এছাড়াও বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত সুইচ-সকেট, ইলেকট্রিক মোটর, উড়োজাহাজের ইঞ্জিন-প্রপেলার, মোটরসাইকেলের সিকেডি ইঞ্জিনের পার্টসে কমানো হয়েছে শুল্ক-কর।ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতেও দেওয়া হয়েছে রেয়াতি সুবিধা। ফলে, ক্যান্সার চিকিৎসায়ও কমতে পারে খরচ।
উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার এই বাজেটে আছে, ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বিশাল বাজেট ঘাটতি। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা।