‘বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত কাদায় পড়ে গেছে’

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি শীর্ষক নাগরিক সংলাপ

বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি শীর্ষক নাগরিক সংলাপ

ভ্রান্তনীতির কারণে দেশের বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত কাদায় পড়ে গেছে। এখন প্রথম কাজ হবে বের হয়ে আসা বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

রোববার (৩০ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণে জ্বালানি সুবিচার প্রতিষ্ঠায় ক্যাব প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি শীর্ষক নাগরিক সংলাপে বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, জ্বালানিকে আমি অনেকটা মানবদেহে রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি, জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব না।

তিনি বলেন, সরকারের কিছু পদক্ষেপ জনমানুষের কল্যাণে হচ্ছে না বলে আমাদের ধারনা। সরকার কি কারণে বিইআরসিকে অকার্যকর করলেন, আমার বোধগম্য হয় না। আমরা আশাকরি সরকার এই পথ থেকে সরে আসবেন। জ্বালানি মিক্সের সঙ্গে পরিবেশের যোগাযোগ রয়েছে। পরিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।

বিজ্ঞাপন

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল ইমাম বলেন, এলএনজি আমদানি জাস্টিফাই করার জন্য অনেক চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এটা জাস্টিফাই করা যায় না। দেশের আর্থিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এলএনজি। আমরা বার বার বলেছি, দেশের মাটির নিচে গ্যাস রয়েছে। অনুসন্ধানে না গিয়ে সহজ একটি পদক্ষেপ নিলাম এলএনজি আমদানি। এখনও যদি সরকারের বোধোদয় হয়, তাহলে গ্যাসের রিজার্ভ বাড়বে। বিশাল আকারে অনুসন্ধান করা গেলে বিশাল মজুদ পাওয়া সম্ভব। আমাদের অনুসন্ধান অপরিপক্ক ও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত কাদায় পড়ে গেছে, প্রথম জিনিসটা হবে বের হয়ে আসা। সাংঘাতিক রকমের সমস্যা হচ্ছে। ভুলগুলোর কারণে আজকের এই সংকট, সেগুলো চিহ্নিত করা জরুরি। কয়েক বছর ধরে অনুসন্ধান বড় রকমের অবহেলা করা হয়েছে। যার মাশুল দিতে হচ্ছে। ১০০ কূপ খনন করতে চায়, কিন্তু বাজেটে বরাদ্দ কোথায়, সরকারের নিজম্ব অর্থায়নে কাজগুলো যেখানে করা দরকার তা করা হচ্ছে না। কে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নিজের গ্যাস অনুসন্ধান বন্ধ করে!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ বলেন, বিএনপির সময় অভিযোগ তুলতাম খাম্বা আছে বিদ্যুৎ নেই। এখন বিদ্যুতের কারখানা আছে, সঞ্চালন লাইন নেই, বিদ্যুৎ নেই সমন্বয়হীনতা রয়ে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াই সামিট গ্রুপ ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে গেছে, যাচ্ছে। এর ফলে ক্রমাগত দাম বাড়ানো হচ্ছে, সেখানে কোন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। সরকার ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সেই সন্দেহেকে আরও জোরালো করে।

তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। আমি মনে করি যদি সদিচ্ছা থাকে, অবিলম্বে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করবেন।

ক্যাবের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার জ্যোতিময় বড়ুয়া বলেন, যদি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ জ্বালানির দাম নির্ধারণ করা হয়, তাহলে বিইআরসি রাখার দরকার কি! বিইআরসি আইনের ৩৪ ধারার সংশোধনী মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। সংবিধানে বলা হয়েছে কোন আইন মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী হলে তা শুরু থেকেই বাতিলযোগ্য। তাই আইনটি অবিলম্বে বাতিল চেয়েছি আমরা। জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ আইনের মাধ্যমে জ্বালানি খাতকে পঙ্গু করতে ভূমিকা রাখছে।অবিলম্বে আইনটি বাতিল করা উচিৎ বলে জানান তিনি।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, জ্বালানির অধিকার মৌলিক মানবাধিকার কিনা এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার এই রকম যতো ধরনের মৌলিক অধিকারের কথা বলা হোক না কেনো, কোনটির ঘাটতি জ্বালানির ঘাটতির মতো বেশি বিপদজনক নয়। উষ্ণমন্ডলীয় দেশের অধিবাসী বলে হিটিং এনার্জির আবশ্যকতা নিয়ে আমাদের অধিকাংশের ধারণা নেই। শীতার্ত অঞ্চলে এমনকি ঘরের ভেতরে তাপমাত্রা সহনসীমার নিচে নেমে গেলে মৃত্যু অনিবার্য। কাজেই কাম্য জ্বালানি সরবরাহ রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হয়, না হলে দুর্ভাগ্যজনক অনিবার্য মৃত্যুর দায় নিতে হয়।

অন্যদের মধ্যে প্রফেসর মোহাম্মদ তানজীমউদ্দীন খান, স্থপতি ইকবাল হাবিব, সিনিয়র সাংবাদিক মোল্লাহ এম আমজাদ হোসেন, শাহনাজ বেগম ও ক্যাবের বিভিন্ন জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ আলোচনায় অংশ নেন।