শুধুমাত্র সকাল-সন্ধ্যা বাণিজ্য চালু রেখেছে পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪, বেনাপোল বন্দর

ছবি: বার্তা২৪, বেনাপোল বন্দর

কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে সপ্তাহের সাতদিনই ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্য সেবা চালু না রেখে শুধুমাত্র সকাল-সন্ধ্যা বাণিজ্য সেবা আমদানি-রফতানি চালাতে শুরু করেছে সীমান্তের ওপারের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এতে করে সীমান্তের ওপারে পণ্যজটের কবলে পড়েছেন আমদানিকারকেরা।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যার পর থেকে রাতে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তবে দিনে বাণিজ্য স্বাভাবিক থাকছে। এর আগে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা আমদানি, রফতানি হতো দুই বন্দরের মধ্যেই।

এদিকে, ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্য সেবা বন্ধ হলে ব্যবসায়ীদের লোকসানের পাশাপাশি আমদানি কমে রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে জানিয়েছেন বাণিজ্য সংশিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সন্ধ্যার পর বাণিজ্য বন্ধের কারণ জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে পেট্রাপোল পোর্ট ম্যানেজারকে।

বাণিজ্য সংশিষ্টরা জানিয়েছেন, বাণিজ্য ঘাটতি পূরণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট দুই দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্তে শুরু হয় সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টার বাণিজ্য সেবা।

তার আগে শুধুমাত্র সকাল-সন্ধ্যা বাণিজ্য পরিচালিত হতো। ২৪ ঘণ্টা পণ্য পরিবহনের সুযোগে রাত-দিন এমনকী জরুরি মুহূর্তে শুক্রবারও আমদানি, রফতানি ও পণ্য খালাস কার্যক্রম চলতো। এতে আগের চেয়ে বাণিজ্য ও রাজস্বের পরিমাণ বেড়ে যায় ৪০ শতাংশ। ফলে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে গতিশীলতা ফেরে আমদানি, রফতানিতে।

আমদানির পরিমাণ ৩শ ট্রাক থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৫শ ট্রাকে এবং বছরে রাজস্ব আয় ৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার কোটি টাকার ঘরে।

তবে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্য সেবা বন্ধ করে কেবল সকাল-সন্ধ্যা আমদানি, রফতানি চালানোর নির্দেশ দেয় পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এতে বেনাপোল বন্দরে সন্ধ্যা ৬টার পর ওপার থেকে পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে না পারায় খাদ্যদ্রব্য, শিল্প-কলকারখানার কাঁচা মালসহ বিভিন্ন জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে।

এপারেও আটকে যাচ্ছে, রফতানি পণ্য। এতে কমেছে আমদানি, রফতানির পরিমাণ। আটকেপড়া পণ্যবাহী ট্রাকে লোকসান ও শিল্প-কলকারখানার উৎপাদন ব্যাহতের আশঙ্কা করছেন বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা।

পণ্যবাহী ট্রাকচালক কবির জানান, তিনি রফতানি পণ্য নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বেনাপোল বন্দরে আসেন। তবে সন্ধ্যা ৬টার পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পণ্যবাহী ট্রাকের গেটপাস না দেওয়ায় ভারতে ঢুকতে পারেননি।

আমদানি, রফতানি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জানান, রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা এপথে আমদানি, রফতানি হতো। এখন সন্ধ্যার পরে ভারত বাণিজ্য পরিচালনা করছে না। এতে পচনশীল খাদ্যদ্রব্য নিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

আমদানির চাহিদা বেশি তবে সন্ধ্যার পর পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে না পারায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়বে। বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরে যানজট বাড়ছে আমদানি, রফতানি পণ্যে।

বেনাপোল বন্দরের আমদানিকারক ইদ্রিস আলী জানান, ভারত-বাংলাদেশ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্য থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৭শ ৫ কোটি টাকা। ২৪ ঘণ্টা পণ্য আমদানির সুবিধা বন্ধ থাকলে রাজস্ব আয়ে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম জানান, বেনাপোল বন্দরে রাত, দিন ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্য সেবা চলছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্যবাহী ট্রাক যেতে দিচ্ছে না।

বর্তমানে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত পণ্য আমদানি হচ্ছে ওপার থেকে। সন্ধ্যার পর বাণিজ্য সেবা বন্ধের কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে তাদের কাছে। তারা বাণিজ্য সংশিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে জানাবেন বলে বলেছেন।