আমরা উদ্বিগ্ন, দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান: আমিন হেলালী

  • আশরাফুল ইসলাম পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে চলমান কর্মসূচিতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, যান চলাচলে বাধা প্রদানসহ নাশকতায় উদ্বেগ জানিয়ে আন্দোলনকারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব চেম্বার কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিন হেলালী।

বৃৃহস্পতিবার দুপুরে কোটা আন্দোলনে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বার্তা২৪.কম এর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বিবেচনায় একদিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির থাকলে দেড় থেকে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির আশাঙ্কা আছে জানিয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ২-৩ মাসেও এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয়।

বিজ্ঞাপন

আমিন হেলালীর কাছে প্রশ্ন ছিল, চলমান কোটা আন্দোলন সহিংসহ কর্মকাণ্ডকে ব্যবসায়ীরা কিভাবে দেখছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গেল কয়েক দিনের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজ যেটা দেখছি তাতে আমরা ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। ব্যবসায়ীদের জন্য প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। মিটিং-মিছিল, আন্দোলন, দাবি-দাওয়া থাকবে। বিগত ১৫ বছরে আমাদের যে কালচার ক্রিয়েট হয়েছে তার জন্য আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে গেছে।’

‘সরকারের মাত্র ১৪ লক্ষ এমপ্লয়ী। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতি বছর ২৭ লক্ষ ছেলে-মেয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করে। এই বিপুল সংখ্যক তরুণদের যদি কর্মসংস্থান দিতে হয় তবে অর্থনীতিকে বন্ধ রেখে তো চলবে না। আমি মনেকরি দায়িত্বশীল নাগরিক আমাদের সবাইকে হতে হবে’-বলেন এফবিসিসিআই’র এই নেতা।

বিজ্ঞাপন

চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে আমিন হেলালী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে, সে বিষয়েও আমরা মনে করি এর একটা যৌক্তিকতা আছে। তবে বিষয়টি এখন আইন-আদালতে রয়েছে। সমাধান পর্যন্ত তো আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। নট এ বিগ ডিল। তবে এ নিশ্চয়ই একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে।’

তিনি মনে করেন, এমন কোন ঘটনা ঘটে নাই যে আজকেই করতে হবে। আমরা সরকার, ছাত্র-ছাত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে বলব, দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন করতে হবে। নিয়ম তো প্রতিপালন করতেই হবে। কিন্তু অবস্থা এমন হয়েছে যে আমরা কোর্ট মানি না। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকেই শ্রদ্ধা করতে হবে।

সহিংস কর্মসূচিতে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে আমিন হেলালী বলেন, ‘রাষ্ট্রের অর্থনীতি যদি সম্বৃদ্ধ না হয়, কোষাগারে যদি রাজস্ব জমা না হয়, তাহলে কর্মসংস্থান কোথা থেকে হবে। রাজস্ব আসতে হলে বেসরকারি খাত বা অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য যেখানে আছে সেগুলোকে নির্বিঘ্ন রাখতে হবে। এখানে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এখানে প্রত্যেকেরই এজেন্ডা আছে। আমরা বলতে চাই, পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। রাষ্ট্রের ইন্টারেস্টে সবাইকে এক থাকতে হবে।’

বৈশ্বিক আর্থিক মন্দাদশায় সহিংস কর্মসূচি দীর্ঘায়িত হলে কি প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে, এমন প্রশ্নে আমিন হেলালী বলেন, ‘যদি আমরা হিসাব করি, একদিনের অর্থনীতি যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তিন মাসেও তা পূরণ করা যায় না। পুরো পৃথিবীতে এখন এডভার্স সিচুয়েশন। প্রতিদ্বন্ধিতামূলক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। তার মধ্যেও যদি আবার অস্থিতিশীল অবস্থা ফিরে আসে তবে সেই ক্ষতি কাটানো কঠিন।’

‘বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে গেছে। করোনা, ইউক্রেন যুদ্ধ-নানা মেরুকরণে পুরো পৃথিবীতে এখন একটা সংকটজনক অবস্থা। এর প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিও আক্রান্ত। সেই সংকট পেরিয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রয়োজন। এখন যদি অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয় তা হলে তাহলে আমরা আরও সংকটে পড়ব’-যোগ করেন তিনি।

কোটা সংস্কার দাবিতে চলমান আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এখন যা হচ্ছে...আমরা মনেকরি এটি স্পষ্ট যে এখানে শুধু ছাত্র না। এখানে অনেক ইন্ধনদাতা ইনভলব হয়ে গেছে। সরকারের দায়িত্ব আছে এদের চিহ্নিত করা এবং ছাত্রদের যে দাবি আছে সেটাকে ডেকে নিয়ে কিভাবে সুষ্টু সমাধান করা যায়।’

আমিন হেলালী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘নাগরিক হিসাবে প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু সেটা নিয়মতান্ত্রিক হতে হবে। অনিয়ম আমরা চাই না এবং আমরা সেটাকে নিরুৎসাহিত করি। এবং ছাত্ররা তাদের ক্যাম্পাসে আন্দোলন করবে...আন্দোলনটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজকে যে সহিংসতাটা এটা তাদের পক্ষে করা সম্ভব না। আমি মনে করি এখানে মুরুব্বি ঢুকে গেছে। যারা মুরুব্বীয়ানা করছে, ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে ছাত্রদেরকে।’