আন্দোলনের পর গ্যাস সংকটে ব্যাহত শিল্প উৎপাদন

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: গ্যাস কূপ

ছবি: গ্যাস কূপ

রাজধানী ঢাকা ও পাশ্ববর্তী এলাকায় গ্যাস সংকট আবারও বেড়ে গেছে। যেখানে ১৫ পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি) চাপ পাওয়ার কথা সেখানে পাওয়া গেছে আড়াই থেকে ৪ পিএসআই।

জেনারেটর চালাতে গেলে কমপক্ষে ৬ পিএসআই চাপ প্রয়োজন। সেই চাপ না থাকায় অনেক বিড়ম্বনায় শিকার হন শিল্পো উদ্যোক্তারা। কোটা বিরোধী আন্দোলনের কারণে বন্ধ থাকা শিল্প কারখানা খুললেও স্বস্তি পাচ্ছেন না। অনেক এলাকায় গ্যাসের চরম সংকটের খবর পাওয়া গেছে। সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। তবে ঢাকার তুলনায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা ভালো থাকার খবর পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

নারায়ণগঞ্জ শিল্প এলাকায় অবস্থিত একটি শিল্প কারখানার জেনারেল ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করাল শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, জেনারেটর চালাতে গেলে কমপক্ষে ৬ পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি) চাপ প্রয়োজন হয়। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সাড়ে ৩ থেকে ৪ পিএসআই চাপ পাওয়া গেছে। বিকেলের পর সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ পিএসআই চাপ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন এন্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া, গাজীপুর এলাকায় ৪ থেকে ৫ পিএসআই চাপ পাওয়া গেছে। রাজধানী ঢাকার সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে ৩ থেকে ৪ পিএসআই চাপ পাওয়া গেছে। আমাদের সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে ১৫ পিএসআই চাপ পাওয়ার কথা। চাপ কম থাকায় যানবাহনে গ্যাস দিতে সময় লাগছে বেশি এতে করে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ৩ থেকে ৪ পিএসআই চাপ থাকলে সিলিন্ডারে এক-তৃতীয়াংশের বেশি লোড হওয়ার কথা না। তবে যদি একটু সময় নিয়ে সিএনজি দেওয়া হয় তাহলে কিছুটা বেশি পাওয়ার কথা।

একদিকে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর উৎপাদন কমে আসছে, অন্যদিকে আমদানিকৃত গ্যাসের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এক সময় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যেতে। মজুদ কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। উৎপাদন কমতে কমতে ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। সংকট সামাল দিতে বিদেশ ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এলএনজি আকারে) গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে।

দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে দৈনিক ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি করা হয়। ঘুর্নিঝড় রিমালে সামিট গ্রুপের ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই ঘটনার পর থেকেই এফএসআরইউটি (ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সারাদেশেই তার প্রভাব পড়েছে। ১৫ জুলাই নাগাদ চালু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু মেরামত না হওয়ায় এখনও সার্ভিসের বাইরে রয়েছে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালটি।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, সামিটের ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল ৩০ জুলাইয়ের দিকে আসতে পারে। ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে অনেক ঝুঁকি। সমাধান হচ্ছে ল্যান্ডবেজড এলএনজি টার্মিনাল। আমাদের সেদিকে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জ্বালানি আমদানির উপর নির্ভরশীল হতে চাই না, তবে সবপথ খোলা রাখতে চাই। এজন্য এলএনজি আমদানির পাশাপাশি দেশীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জোর দেওয়া হচ্ছে। ৪৬টি কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছি এতে সাড়ে ৬শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়বে, আবার একই সময়ে কিছু কূপের উৎপাদন কমে যাবে। আরও ১০০ কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগে লক্ষ্য ছিল শতভাগ বিদ্যুতায়ন, আমরা সফল হয়েছি। এখন লক্ষ্য হচ্ছে সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। এটা করতে হলে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

মজুদ বিবেচনায় সবচেয়ে বড় গ্যাস ফিল্ড বিবিয়ানার উৎপাদন প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। ২০২০ সালে ১৫ নভেম্বর গ্যাস উত্তোলন করা হয় ১৩৩৪.৯ মিলিয়ন ঘনফুট। পরের বছর ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর উৎপাদন নেমে আসে ১২৪৬.৮ মিলিয়নে। আর বর্তমানে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুটের আশপাশে রয়েছে। দেশীয় গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদন হ্রাসের জন্য অনুসন্ধানে স্থবিরতাকে দায়ী করে আসছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।