অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে ক্ষোভে ফুঁসছেন অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তারা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড কয়েক বছর ধরে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মে জর্জরিত। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত পদত্যাগ করেছেন। তবে, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত শীর্ষ কর্মকর্তারা দায়িত্বে বহাল থাকায় ব্যাংকের কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

কর্মকর্তাদের মতে, দুর্নীতিবাজ ও অনভিজ্ঞ এসব কর্মকর্তাদের দায়িত্বে রাখা হলে ব্যাংকটি ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মুর্শেদুল কবির কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাসহ নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রয়োগ করে আসছেন।

উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ওয়াহিদা বেগম এবং মহাব্যবস্থাপক একেএম ফজলুল হকসহ তার সহযোগীরা, সাবেক সরকারের উচ্চপদস্থ সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে অবৈধ ঋণ বরাদ্দ, পোস্টিং বাণিজ্য এবং অন্যান্য দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।

বিজ্ঞাপন

ব্যাংকটিতে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মধ্যে, অনেক ব্যাংক কর্মকর্তা দুর্নীতিবাজদের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ব্যাংকের মধ্যেই বিক্ষোভ করার ইঙ্গিতও দিয়েছেন কয়েকজন কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যারা ব্যাংকিং খাতে সুশাসন আনার অঙ্গীকার করেছে, অগ্রণী ব্যাংকের এসব দুর্নীতিবাজ শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।

ঊর্ধ্বতন এসব কর্মকর্তাদের অব্যবস্থাপনা এবং অপেশাদার আচরণের কারণে ব্যাংকটির অনেক গ্রাহক তাদের ব্যবসা অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরিত করেছে বলে জানা গেছে।

মুন ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানের একটি ঋণ মামলায় ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি অগ্রণী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মুরশেদুল কবিরসহ চার কর্মকর্তাকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। যদিও একদিন পরই রায় স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্ট।

অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে করপোরেট গ্যারান্টির ভিত্তিতে বড় ঋণ প্রদান এবং অসাধু গ্রাহকদের জাল কাগজপত্র বন্ধক নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে ব্যাংকটি পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

ওই সময় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ব্যাংকটিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে মুর্শেদুল কবিরের মতো অদক্ষ কর্মকর্তাদের অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করেছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বহাল তবিয়তে আছেন তারা।

মুরশেদুল কবিরকে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ব্যাংকটিকে ভুল পথে নিয়ে গেছেন এবং এর কার্যক্রমকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছেন। যার ফলে ব্যাংকটি প্রতিকূল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে পড়েছে।

আর্থিক সূত্রগুলো অভিযোগ করেছে, মুর্শেদুল কবির ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাংক তথা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিপন্ন করছে এবং সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে কিনা তা গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত করা উচিত।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে কিছু দুর্নীতিবাজ আমলা তার বর্তমান ভূমিকায় মুর্শেদুল কবিরকে সমর্থন করছেন। ক্লায়েন্টদের লেনদেনের প্রোফাইল প্রকাশ করার অভিযোগ, ব্যাংকিং নৈতিকতার গুরুতর লঙ্ঘন এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
একাধিকবার চেষ্টা করেও মুর্শেদুল কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।