অবশেষে জানা গেল দেশের প্রকৃত রিজার্ভ কত

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সবার প্রশ্ন ছিল দেশের প্রকৃত রিজার্ভ কত। অবশেষে দেশের ব্যয়যোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ কত রয়েছে, তার তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) রাতে ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন নামের এক অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ ২০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ডেফিনেশন অনুযায়ী। আগের সরকারের ডেফিনেশন অনুযায়ী নয়।

বিজ্ঞাপন

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রিজার্ভ কত সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, গত এক সপ্তাহে ৩০০ মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ বেড়েছে। এবং আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব নেওয়ার পর একটি ডালারও আমরা বিক্রি করি নাই বাজারে। আমরা বরং রিজার্ভ কিনছি। প্রতিদিন আমরা ৫০ মিলিয়ন ডলার করে বাজার থেকে কিনছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতিকে আগামী ৪-৫ মাসের মধ্যে একটা পর্যায়ে নিয়ে আসা। লাইক ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে। পরবর্তী এক বছরের মধ্যে সেটা ৪/৫ শতাংশে নিয়ে আসা।

বিজ্ঞাপন

এতদিন সেই হিসাব গোপন করে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ না করলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফকে সেটি দেওয়া হতো।

অনেকেই এমন একটা ধারণা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা সরকারের সময় রিজার্ভ নামতে নামতে একেবারে শূন্যের কোটায় নেমে এসে ঠেকেছে। আপনি নিশ্চিয় অনেকে ভালো কাজ করছেন কিন্তু এই ২০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের পুরো কৃতিত্ব নিশ্চিয় আপনার নয়। খালেদ মুহিউদ্দীনের এমন প্রশ্নের জবাবে আহসান এইচ মনসুর বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সময় রিজার্ভ শূন্যের কোটায় নেমে এসেছিল কথাটি সত্য নয়। তবে শেখ হাসিনা সরকার শেষ দিকে আইএমএফের পরামর্শে চলছিল। এবং অনেক ভালো ভালো পলিসিও নিয়েছিল।

গত ২৪ জুন আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণচুক্তির আওতায় তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দেয়। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংস্থাটির অনুমোদিত ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর গত ডিসেম্বরে পেয়েছিল দ্বিতীয় কিস্তি, যা পরিমাণে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। এখন তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের ফলে বাংলাদেশ সব মিলিয়ে তিন দফায় আইএমএফের কাছ থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। ঋণের বাকি ২৩৯ কোটি ডলার আরও চার কিস্তিতে পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের মার্চ শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৯৯.৩০ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৯৩০ কোটি ডলার, গত ডিসেম্বর মাস শেষে যা ছিল ১০০.৬৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৬৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ তিন মাসে বিদেশি ঋণ কমেছে ১.৩৪ বিলিয়ন ডলার বা ১৩৪ কোটি ডলার। নতুন করে ঋণ নিলে আবার ১০০ বিলিয়ন ছাড়াবে বিদেশি ঋণ।

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে, গড়ে জিডিপির ৪০ শতাংশ ঋণ মানসম্মত। এখন বাংলাদেশের ঋণের হার ৩৫ শতাংশ হয়ে গেছে। ঋণের এই হার বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে আমাদের সক্ষমতার চেয়ে ঋণের বোঝা কম নয়। এই চাপ কতটা সামলে সামনে এগোনো যাবে, সে ব্যাপারে আগে থেকেই ভাবা উচিত বলে মত দেন বিশ্লেষকরা।