বিদেশি বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত করতে এসএস পাওয়ার নিয়ে অপপ্রচার

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিদেশি বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত করতে এসএস পাওয়ার নিয়ে অপপ্রচার

বিদেশি বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত করতে এসএস পাওয়ার নিয়ে অপপ্রচার

পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র অংশ হিসেবে এস এস পাওয়ার ওয়ান লিমিটেডের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত করতেই এই ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেছে এসএস পাওয়ার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।

এস এস পাওয়ার ওয়ান লিমিটেড দেশের বেসরকারি খাতে একমাত্র বৃহৎ যৌথ (চীন-বাংলাদেশ) মূলধনি কোম্পানি। এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ কেন্দ্রটি ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে জাতীয় গ্রিডে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগে বলা হয়, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিক ও দৈনিকটির অনলাইন ভার্সনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ন্যাক্কারজনকভাবে ভিত্তিহীন ও মনগড়া তথ্য পরিবেশন করে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপ বিদ্যুৎ প্রকল্পটির মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি না করে ১৮৪টি ভূয়া ইনভয়েস ব্যবহার করে ৮১ কোটি ৫৭ লাখ ৮০ হাজার (৮১৫ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করেছে।

এসএসপিএল কর্তৃপক্ষ তার ব্যাখ্যায় বলেছে, কোনো রকম যাচাই-বাছাই না করে একতরফাভাবে মনগড়া তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বৃহত্তর বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে এবং ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে যা শেষ পর্যন্ত দেশের জন্যই বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে এসএসপি ওয়ান লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ট্যান ঝেলিং জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটিতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ২৫০ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। এরমধ্যে চীনের ছয়টি ব্যাংক যৌথভাবে মোট ১৭৮ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার এবং দেশীয় রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান রূপালী ব্যাংক ৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর বাইরে চীন সরকার ইক্যুইটি (প্রাথমিক মূলধন) হিসেবে ২৩ কোটি মার্কিন ডলার সরবরাহ করেছে। এস আলম গ্রুপের ইক্যুইটির (মূলধন) পরিমাণ ৫০৭ মিলিয়ন ডলার।

২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর ঋণচুক্তি অনুযায়ী চীনের সরকার এবং দেশটির ছয় ব্যাংক একটি কনসোর্টিয়াম তহবিল গঠন করে বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন করে। প্রকল্পে চীন সরকার ও দেশটির ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৮০ শতাংশ। প্রকল্পের যাবতীয় নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে চীনের ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন (ইপিসি) ঠিকাদার।

বিদ্যুৎ প্রকল্পটির যাবতীয় আমদানি ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছে চীনা বিনিয়োগের টাকায় দেশটির ছয় ব্যাংকের যৌথ তহবিল থেকে। এজন্য কোনো এলসি (আমদানি ঋণপত্র) খুলতে হয়নি। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়েছে ‘ইমপোর্ট পারমিট’ নিয়ে। এর মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে চীনের বিনিয়োগকারীদের তহবিল থেকে এবং বাংলাদেশ থেকে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়নি। এছাড়া ইপিসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাওনা পরিশোধ করা হয় ফ্যাসিলিটি এজেন্ট ব্যাংক অব চায়নার সিঙ্গাপুর শাখা থেকে।

এ প্রকল্পের সকল ব্যয় নির্বাহ করার কাজ তত্ত্বাবধান করে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকৃত আন্তর্জাতিক প্রকৌশলীবৃন্দ, বিনিয়োগকারী ও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাক অ্যান্ড বিচ ও মট ম্যাকডোনাল্ড, রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংক। যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে ক্লিয়ারেন্স বা ছাড়পত্র দেয়ার পরই সকল বিল ও ইনভয়েসের বিপরীতে পাওনাদি পরিশোধ করা হয়েছে। এখানে সকল লেনদেন প্রক্রিয়া জবাবদিহি, স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার তত্ত্বাবধানে প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে এস আলম গ্রুপ কর্তৃক অর্থ পাচারের দাবির কোনো যৌক্তিকতা নেই।

উপরন্তু, বিদ্যুৎ প্রকল্পটির সকল যন্ত্রাংশ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আমদানি-রফতানি পরিদফতরের প্রধান নিয়ন্ত্রকের অফিস। রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক সিন্ডিকেটেড ওই বিদেশি ঋণদাতাদের অন-শোর সিকিউরিটি এজেন্ট হিসেবে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত রিপোর্টিং করার দায়িত্ব নির্ভুলভাবে পালন করেছে।

বিবৃতিতে এসএসপি ওয়ান এমডি ট্যান ঝেলিং বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে অর্থপাচারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছি। কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো অনুমোদনহীন লেনদেন করা হয়নি বলেও আমরা দৃঢ়তার সাথে দাবি করছি। চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ বিদ্যুৎ কারখানার সকল আর্থিক আয়-ব্যয়ের বিপরীতে মোট ১ হাজার ৬০৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব (আয়কর, ভ্যাট, আমদানি ও সম্পূরক শুল্ক এবং সরকারি ফি) হিসেবে সরকারি কোষাগারে পরিশোধ করা হয়েছে।

পত্রিকাটিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঋণপত্র নং ০০০০০২৬৩১৯১৫০০০৫ (তারিখ-২৯-০১-২০১৯) এর বিপরীতে ১২ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং ঋণপত্র নং ০০০০০২৬৩২১১৫০০৩৮ (তারিখ-৩০-০৫-২০২১) এর মাধ্যমে ৭৯ কোটি ২৪ লাখ ডলার দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এসএসপি ওয়ান কর্তৃপক্ষ জানায়, এ ধরনের লেখনী মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, ইপিসি কন্ট্রাক্ট সম্পর্কে প্রতিবেদকের কোনো ধারণা নেই।