‘১৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল বিদেশিদের বিভ্রান্তিকর বার্তা দেবে’

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সিপিডি, ছবি: সংগৃহীত

সিপিডি, ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যুৎ খাতে বিদেশি বিনিয়োগে বাস্তবায়নাধীন প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন প্রকল্পের ৩০টি চুক্তি অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মিশ্র বা বিভ্রান্তিকর বার্তা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত ওই সব প্রকল্পের 'রিভার্স অকশন' বা বিপরীত নিলামে সংশ্লিষ্ট বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুযোগ করে দিতে পরামর্শ দিয়েছে দেশের শীর্ষ এই বেসরকারি গবেষণা সংস্থা। আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ মেয়াদে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ওই চুক্তিগুলো করা হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

সিপিডি জানায়, বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া এসব চুক্তির বেশির ভাগই রিনিউয়েবল এনার্জি বা নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্প এবং এগুলো বৈশ্বিক 'ওভারসিজ ইনভেস্টমেন্ট ইন দ্য রিনিউয়েবল এনার্জি সেক্টর' বাচ শীর্ষক আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবমুক্ত হতে প্রতিশ্রুতির আওতাভুক্ত।

এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ জড়িত এবং ওই সব চুক্তি বাতিলের ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এমন কিছু ঘটলে তা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের লগ্নি করা অর্থের সুরক্ষা চান। ভবিষ্যতে বাংলাদেশেরও অনেক বিদেশি বিনিয়োগ দরকার হবে। তাই বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেওয়া জরুরি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত 'ওভারসিজ ইনভেস্টমেন্ট ইন দ্য রিনিউয়েবল এনার্জি সেক্টর' শীর্ষক আলোচনায় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি এসব তথ্য ও পরামর্শ তুলে ধরে।

মূল প্রবন্ধে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, গত ২৭ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় মোট ৪২টি বিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এর মধ্যে ৩০টি প্রকল্পে চীনসহ মোট ১৫টি দেশ ও সংস্থার বিনিয়োগ রয়েছে। সরকারি নথিপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সিপিডি জানায়, সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১৫ বিলিয়নের মতো। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

সিপিডির মূল প্রবন্ধে উল্লিখিত তথ্যে জানা যায়, ওই ৪২টি বিদ্যুৎ প্রকল্পের মোট সক্ষমতা ৫ হাজার ৩২২ মেগাওয়াট এবং এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুতের সক্ষমতার পরিমাণ ৩ হাজার ১০২ মেগাওয়াট।

সিপিডি জানায়, বাতিল করা ওইসব প্রকল্পে যেসব দেশের বিনিয়োগ রয়েছে তা হলো চীন, ফ্রান্স, নরওয়ে, জার্মানি, হংকং, ভারত, জাপান, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। ইতোমধ্যে দেশে ১১টি নবায়নযোগ্য শক্তি বা বিদ্যুৎ প্রকল্পে মোট সাড়ে ৯ বিলিয়ন বা ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে। ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আরও ৩৯ বিলিয়ন ডলার বৈশ্বিক বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

সিপিডি জানায়, বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রতিবছর নবায়নযোগ্য শক্তিতে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ দরকার। বিদেশি বিনিয়োগ এ ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম তার প্রবন্ধে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজে এই পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিমুক্ত করতে 'থ্রি জিরো' বইতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং সারা বিশ্ব তাকে একজন কার্বন নিঃসরণবিরোধী যোদ্ধা হিসেবে চেনে। তাই নবায়নযোগ্য শক্তিসংশ্লিষ্ট চুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা দিতে তিনি নিশ্চয়ই সচেষ্ট হবেন।

তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ দেশে বহুবিধ ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করতে আসেন। এর মধ্যে রয়েছে মুদ্রার বিনিময় হার, শ্রম ঝুঁকি বা দক্ষ শ্রমিকের অভাব, প্রশাসনিক দৌরাত্ম্য, প্রকল্প বরাদ্দে দুর্নীতি, রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন বিধি ও প্রক্রিয়ায় অসামঞ্জস্য, উৎপাদিত বিদ্যুৎ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহে অনুমতি না দেওয়া ও স্থানীয় ঋণ বা অর্থায়ন না পাওয়া। তিনি বলেন, এ ছাড়া বিদ্যমান কর ও শুল্ক রেয়াত সুবিধাও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য যথেষ্ট সহযোগিতামূলক নয়।

সিপিডি এর আগে (পতিত সরকারের শেষ সময়ে) বলে আসছিল দেশে চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং এর বেশির ভাগই রাজনৈতিক সুবিধা দিতে করা হয়েছে। সে সময়ে সিপিডি এও দাবি করে যে, বিদেশি বিনিয়োগে যেসব বিদ্যুৎ প্রকল্প করা হয়েছে সেগুলোর চুক্তি রিনেগোশিয়েট বা পুনর্মূল্যায়ন করার দরকার আছে। তা না করা হলে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় হবে।

বিদ্যুৎ খাত নিয়ে সিপিডির পূর্বের ও বর্তমান অবস্থান জানতে নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের পাওয়া যায়নি।