আব্দুস সামাদ লাবুর আমলে এআইবিএলে কোন দুর্নীতি হয়নি
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের (এআইবিএল) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ লাবুর সময়ে ব্যাংকে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি বলে জানিয়েছেন নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান খাজা শাহরিয়ার। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের (এআইবিএল) পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে নতুন পরিচালনা পর্ষদ প্রধান কার্যালয় ও শাখাসমূহ নিরীক্ষা করে এস আলম গ্রুপের নামে-বেনামে কোনো বিনিয়োগ খুঁজে পায়নি।
ওই সাক্ষাৎকারে খাজা শাহরিয়ারও বলেছেন, এস আলম গ্রুপের কোনো ঋণ এই ব্যাংকে নেই। অন্য ব্যাংকগুলোর তুলনায় এ ক্ষেত্রে আল-আরাফাহ্ ব্যতিক্রম।
সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ লাবুর আমলে ব্যাংকে সুশাসন বজায় ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের গ্রাহক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। বর্তমানে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের পর থেকে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্যক্তিগতভাবে ব্যাংকে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ না থাকার পরও অনেক কর্মকর্তাকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। শুধু নিয়োগদাতার রেফারেন্স দেখে অনেক কর্মকর্তাকে বিনা কারণে মানবসম্পদ ও বিভিন্ন জোনাল অফিসে ওএসডি করে হয়রানি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থেকে আদেশ প্রাপ্তির অজুহাত দেখিয়ে বিভিন্ন শাখা ও বিভাগের নির্বাহী ও কর্মকর্তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। পদত্যাগ না করলে চাকরিচ্যুত করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, সিলেটসহ বিভিন্ন দূরবর্তী শাখা ও জোনে বদলির ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। চল্লিশ-পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সের কর্মকর্তাকে পর্যন্ত বদলির আদেশ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে দৌড়াতে হচ্ছে।
বদলির শিকার হওয়া সন্তানসম্ভবা এক নারী কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, 'আমি কর্মজীবনে কোনো অনিয়ম করিনি। আমার শরীরের এ অবস্থায় কীভাবে চট্টগ্রাম থেকে সিলেট গিয়ে চাকরি করব? মানবসম্পদ বিভাগ মানবিক হতে না পারলে আমরা কার কাছে যাব?'
এ পরিস্থিতে তারা প্রত্যাশা করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মনোনীত পর্ষদ তাদের ওপর অর্পিত অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব শেষে আবদুস সামাদ লাবুর নেতৃত্বাধীন পূর্বের পর্ষদকে ব্যাংক পরিচালনার দায়িত্ব ফিরিয়ে দেবে। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, 'দেশে দ্বিতীয় বৃহৎ ইসলামি ব্যাংক হলো আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। তার মানে আগে থেকেই দেশে এ ব্যাংকের খুব ভালো একটি অবস্থান আছে। আগে থেকেই এই ব্যাংকে মোটামুটি সুশাসন ছিল। সেটি আরও বেশি জোরদার করা হয়েছে।'
জানা গেছে, বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ আবদুস সামাদ লাবু তিন দফায় পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকদের প্রত্যক্ষ ভোটে ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার দায়িত্বকালীন তিনি ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ব্যাংক পরিচালনায় পূর্ণ স্বাধীনতা দেন। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার জন্য অডিট বিভাগকে অতীতের চেয়েও বেশি শক্তিশালী বিভাগে পরিণত ও পর্যাপ্ত স্বাধীনতা প্রদান করেন, যাতে ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র উঠে আসে। কোনো বিভাগে ও শাখার স্বাভাবিক কার্যক্রমে তিনি হস্তক্ষেপ করেননি। বরং তার সময়ে ব্যাংকটি অনেক বেশি শক্তিশালী ও টেকসই ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। যথাসময়ে প্রাপ্য প্রমোশন, ইনক্রিমেন্ট, বোনাস প্রদানের কারণে ব্যাংকের নির্বাহী-কর্মকর্তা- কর্মচারীদের মাঝে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। ব্যাংকের করপোরেট ও রিটেইল গ্রাহকরাও সাবেক চেয়ারম্যানের সময়ে ব্যাংকের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নবনিযুক্ত গভর্নর দেশের ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেন, যার অন্যতম আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। এই ব্যাংকে এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট মালিকানা থাকলেও তারা ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা রাখেনি। অন্য ভালো ব্যাংকগুলোর মতো করপোরেট এলাকায় এই ব্যাংকের সুনাম রয়েছে। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট হলেও এই ব্যাংকে ছিল উল্টো। বরং এই সময়ে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে নগদ তারল্য সহায়তা দিয়েছে। ফলে এই ব্যাংক গ্রাহকদের কাছে চূড়ান্তভাবে আস্থার জায়গায় পৌঁছেছে। তবে কোনো প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা না ঘটলেও ব্যাংকের মালিকানায় থাকা একটি গোষ্ঠী পরিচালনা পর্ষদকে প্রভাবিত করে কয়েক শ কর্মকর্তাকে অযৌক্তিকভাবে দূরবর্তী এলাকায় বদলি করেছে। পরিচালনা পর্ষদকে বোঝানো হয়েছে এই কর্মকর্তারা সবাই চট্টগ্রামের পটিয়ার ও এস আলমের নিয়োগকৃত।
ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের কোনো বিনিয়োগ কিংবা সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাবুর সময়ে কোনো অনিয়ম না হওয়ার পরেও ব্যাংকে সাম্প্রতিক সংঘটিত বিতর্কিতভাবে নির্বাহী ও কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি, বদলি, প্রধান কার্যালয়ে ওএসডি করার মাধ্যমে বিশেষ কোনো মহলের এজেন্ডা বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, সেটা খুঁজে দেখা প্রয়োজন। পরিচালনা পর্যদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত নিরপরাধ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা। নইলে দেশের অন্যতম সেরা ব্যাংক অল্প সময়ে জনগণের আস্থা হারাবে।