জ্বালানিতে তেলের দামে অনেক মুনাফা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়ম করপোরেশন (বিপিসি)। আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুযায়ী জ্বালানি তেলের দাম লিটার প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা কমানোর সুযোগ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) হোটেল লেকশোরে সিপিডি আয়োজিত মার্কেট ভিত্তিক জ্বালানির মূল্য শীর্ষক ডায়লগে সিপিডির পক্ষ থেকে উত্থাপিত প্রবন্ধে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়।
সিপিডির প্রবন্ধে আরও বলা হয়, বিপিসি যে ফরমুলা অনুযায়ী বর্তমান দর নির্ধারণ করছে তার ভিত্তিতে ওই টাকা কমানো সম্ভব। আর যদি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মেথড না লাভ না লোকসান (কষ্ট বেজড) ভিত্তিক হয় তাহলে আরও বেশি কমানোর সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণের এখতিয়ার বিইআরসির হাতে ছেড়ে দেওয়ার ইস্যুতে সরকার দ্বিধায় রয়েছে, যে কোনো সময় যে কোনো কিছু (হঠাৎ দাম বৃদ্ধি) হতে পারে, তখন ভোক্তারা বহন করতে পারবে কিনা। আমি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি, আমি জানিয়েছি, তেমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সরকার বিইআরসির মাধ্যমেও ভর্তুকি দিতে পারবে। বিইআরসি সহসা এই তেলের দাম নিয়ে কাজ করবে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করতেছি। বিপিসি যে তালিকা (ফরমুলা) করেছে, সেই তালিকা চূড়ান্ত নয়, অবশ্যই অনেক বিষয় উঠে আসবে। ভোক্তাদের মতামতও নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রশ্ন রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসি মুনাফা করবে কেন? বিপিসির মূল্য কাঠামো কষ্ট প্লাস নয়, হতে হবে কষ্ট বেজোড়। বিপিসি ২০২৩ সালে মুনাফা করেছে। ২০২৪ সালেও মুনাফা করবে।
বিপিসি চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বিপিসির করা ফরমুলা প্রসঙ্গে বলেন, অনেকগুলো খাত নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, অন্তত একটি কথা বলার জায়গা তৈরি হয়েছে, আগেতো কিছুই ছিল না। সরকারও মার্কেট ভিত্তিক মূল্যের দিকে যাচ্ছে। মার্চ থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমন্বয় করা হচ্ছে।
তিনি বলেন,ট্যাক্স-ভ্যাট কর্মাশিয়াল এনভয়েজ অনুযায়ী হওয়ার কথা। কিন্তু হচ্ছে হচ্ছে ট্যারিফ ভিত্তিক। আমরা কর্মাশিয়াল এনভয়েজ অনুযায়ী দিয়ে যাচ্ছি, এনবিআর আমাদের নামে বাকির খাতায় লিখে রাখছে। ট্যারিফ ভিত্তিক হলে লিটারে ৫ থেকে ৬ টাকা দাম বাড়বে।
তিনি বলেন, আমাদের ডিজেলে কার্বনের পরিমাণ প্রায় ৩০০ পিপিএম। এটা নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ৫০ পিপিএম এর নিচে হওয়া উচিত। সিস্টেম লস কমানোসহ অনেক জায়গায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তাহলে জনগণ সুফল পাবে।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিগত সরকার ব্যবসায়ীদের সরকার ছিল, তারা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে তেলের দাম নিজেদের হাতে রেখেছিলেন। কিন্তু আজকের সরকার কেন হাতে রাখতে চায়, কার স্বার্থে? তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে সরকার কার স্বার্থ কাজ করছে। কেন এটা বিইআরসির হাতে ছেড়ে দিচ্ছে না এটা বড় প্রশ্ন।
তিনি বলেন, বিপিসি লাভ করে কতো! তারা কষ্ট প্লাস নয়, ট্রিপল প্লাস মুনাফা করে। বিপিসির কাছ থেকে করপোরেট ট্যাক্স নেয়, আবার ডিভিডেন্ড নেন। রেগুলেটরি কমিশন নিষ্ক্রিয়, হাইকোর্ট বারবার বলেছে নিষ্ক্রিয় থাকা অবৈধ। প্রয়োজন হলে ক্যাব আবার কোর্টে যাবে। কেন এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের সংস্কার কমিশন হয় না!
জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালিদ আহমেদ বলেন, জেট ফুয়েলের প্রাইসিং কমিটিতে আমি ছিলাম, আমাদের দেশে দাম কম থাকলে বিদেশি ফ্লাইটগুলো এখানে এসে তেল নিবে, তখন একটি ক্রাইসিস হতে পারে, সে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা হয়েছে। স্বাধীনতার এতোদিন পরেও আমরা একটি রিফাইনারি করতে পারিনি। পুরাতন রিফাইনারির (ইআরএল) লাইফ টাইম অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। আমদানির চেয়ে দাম বেশি পড়ে, এটা আমরা পাবলিকলি বলি না, কারণ তখন বলা হবে এটা বন্ধ করে দাও।
সিপিডিরি রিসার্চ ডিরেক্টর খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেনের সঞ্চালনায়, রিসার্চ পেপার উপস্থাপন করেন, সিপিডিবির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটস হেলেন মাশিয়াত প্রীতি, প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট ফয়সাল কাইয়ুম। অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, এনার্জি প্যাকের সিইও হুমায়ুন রশীদ, বিপিএমআই এর রেক্টর মো. আলাউদ্দিন, ইমা পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিকী প্রমুখ।