বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন, স্বস্তিতে পিডিবি

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন, স্বস্তিতে পিডিবি

বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন, স্বস্তিতে পিডিবি

ভারতীয় কোম্পানি আদানি গ্রুপ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে যখন প্রচ্ছন্ন হুমকি মধ্যে রেখেছে, তখন বাঁশখালী ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পুরোমাত্রায় উৎপাদন অনেকটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। দেশে বৃহৎ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী হিসেবে পরিচিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পূর্ণমাত্রার উৎপাদন গড় মূল্য কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

ন্যাশনাল লোড ডেসপার্স সেন্টার (এনএলডিসি) সূত্র জানিয়েছে, তাদের চাহিদা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ১০টা প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট এবং দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ৬৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে বাঁশখালীর (চট্টগ্রাম) গন্ডামারা এলাকায় অবস্থিত বাঁশখালী ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লা ভিত্তিক বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী হিসেবে পরিচিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। যে কারণে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের লিস্টকস্ট জেনারেশনের তালিকায় সবার আগে থাকে বাঁশখালীর নাম। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে জ্বালানি খরচ হয় প্রায় ৭.৫৬ টাকার মতো। অন্যান্য কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন খরচ এরচেয়ে বেশি। একই পরিমাণ বিদ্যুৎ ফার্নেস অয়েল দিয়ে সরবরাহ দিতে গেলে পড়বে প্রায় ১৮ টাকার মতো। ১৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোমাত্রায় উৎপাদনে করলে মাসে প্রায় ৯৫ কোটি বিদ্যুৎ ইউনিট বিদ্যুৎ দিতে পারে। একই পরিমাণ বিদ্যুৎ কয়লার পরিবর্তে ফার্নেস অয়েল থেকে পেতে হলে সরকারকে বাড়তি ৯৫০ কোটি টাকা গুণতে হবে। যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। শুধু আর্থিক দিক থেকে নয়, কারিগরিভাবেও ওই পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া বেশ জটিল।

ধারাবাহিকভাবে পুরোমাত্রা উৎপাদন অব্যাহত রাখা গেলে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ অনেক কমে আসবে বলে মনে করছে পিডিবি। দেশে কয়লা ভিত্তিক বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে ৪টি, যেগুলোর প্রত্যেকটির উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াটের ওপরে। আর ছোট ছোট ইউনিট রয়েছে ৪টি, যেগুলো একটি ৩০৭ মেগাওয়াট (বরিশাল), ১টি ২৭৫ মেগাওয়াট (বড়পুকুরিয়া) ও ২টি ১২৫ মেগাওয়াট (বড়পুকুরিয়া) ক্ষমতা সম্পন্ন।

বিজ্ঞাপন

পাশাপাশি ভারতীয় কোম্পানি আদানির কাছ থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। আদানি গ্রুপের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিল বকেয়া পড়ে। এ কারণে কোম্পানিটি ঘোষণা দিয়ে গত ৩১ অক্টোবর থেকে একটি ইউনিট বন্ধ করে দেয়। ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করা না হলে দ্বিতীয় ইউনিটও বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। পরে তারা সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। বাংলাদেশও কিছু কিছু করে বকেয়া পরিশোধ অব্যাহত রেখেছে।

বকেয়ার পাশাপাশি আদানির ওই চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট রিট দায়ের করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ শুধু বাংলাদেশে সরবরাহ করার কথা ছিল। বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর আদানি ভারতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করার বিকল্প ব্যবস্থা অনুমোদন করে নেয়। সব মিলিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে এক ধরনের দূরত্ব বাড়ন্ত রয়েছে।

আদানির চুক্তি বাতিলের রির্টের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট–সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অনুসন্ধান গঠন করতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বরের চুক্তির (ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি) বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে আদেশ গ্রহণের এক মাসের মধ্যে কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। কমিটি গঠনের ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

বিশেষ আইনে সম্পাদিত ওই চুক্তি সম্পাদনে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না, তা অনুসন্ধান করে আদেশ পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে (বিবাদী) নির্দেশ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির চুক্তি নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় এসএস পাওয়ার-১ লিমিটেডের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পূর্ণমাত্রার উৎপাদন সরকারকে স্বস্তি এনে দিয়েছে।