সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র জমা দেয়নি কেউ

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সাড়া দেয়নি কোন প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত সময় সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা পর্যন্ত কোন প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়নি বলে বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ৭টি আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা কোম্পানি দরপত্র কিনেছিল। ২টি কোম্পানি ডাটা কিনেছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউই দরপত্র জমা দেয়নি।

বিজ্ঞাপন

কেনো দরপত্র জমা দেয়নি এর কোন কারণ জানা গেছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, কোন কোম্পানি সেভাবে কিছু জানায়নি, তবে কেউ কেউ ধারণা করছে গ্যাসের দরের বিষয়টি এখানে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। গ্যাসের দর ক্রড অয়েলের দামের সঙ্গে উঠানামা করার শর্ত রয়েছে। বর্তমানে ক্রড অয়েলের দাম ৭২ ডলারের মতো, এটা কারণ হলেও হতে পারে।

এখন কি করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি অবগত করবো। এরপর প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বসবো। তারপর আবার দরপত্র আহ্বান করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং অগভীর সমুদ্রে ১১টি ব্লক আছে। অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে অনুসন্ধান পরিচালনা করছে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি। বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলে ২৪টি ব্লকে (গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং অগভীর সমুদ্রে ৯ টি) তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র আহ্বান করা হয় চলতি বছরের ১১ মার্চ। দরপত্র জমার জন্য ৬ মাস (৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) সময় দেওয়া হয়। সময় শেষ হওয়ার আগেই কেউ কেউ ৬ মাস পর্যন্ত সময় চাইলেও ৩ মাস বাড়িয়ে ৯ ডিসেম্বর করা হয়।

এর আগে, সর্বশেষ ২০১৬ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এরপর ২০১৯ সালে নতুন পিএসসি আপডেট করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি।

সাগর সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। ২০১০ সালে গভীর সমুদ্রে ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ ব্লকে কাজ নেয় কনোকো ফিলিপস। তারা ২ডি জরিপ শেষে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি করে। সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যায়। এছাড়া চুক্তির পর কাজ ছেড়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার স্যান্তোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু। বাংলাদেশের পাশের ব্লক থেকে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস উত্তোলন করছে মিয়ানমার। যে কারণে বাংলাদেশ অংশে গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশের সাগরাঞ্চলে গ্যাসের মজুদের বিষয়ে আশাবাদী জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছে দেশের গ্যাস সংকট কাটাতে বিশাল ভূমিকা পালন করতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, গ্যাসের অবস্থান নিয়ে কোন সংশয় নেই, কোন কোম্পানি এমন তথ্য জানায়নি। গ্যাস রয়েছে এটা অনেকটা নিশ্চিত। আমরা মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের ডাটাও হাতে পেয়েছি, সেগুলোও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করে তোলার জন্যই আকর্ষণীয় করা হয় পিএসসি (উৎপাদন ও বন্টন চুক্তি)। আগের পিএসসিগুলোতে গ্যাসের দর স্থির করা দেওয়া হলেও এবার ব্রেন্ট ক্রডের দরের সঙ্গে মিল করে দেওয়া হয়। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রডের ১০ শতাংশ দরের সমান। যা আগের পিএসসিতে যথাক্রমে অগভীর ও গভীর সমুদ্রে ৫.৬ ডলার ও ৭.২৫ ডলার স্থির দর ছিল।

দামের পাশাপাশি বাংলাদেশের শেয়ারের অনুপাতও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মডেল পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশের অনুপাত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর কমতে থাকে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার। গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের হিস্যা ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠানামা করবে। কিন্তু তারপরও কোন আগ্রহী প্রতিষ্ঠান না পাওয়াটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে চলমান গ্যাস সংকট ও উৎপাদনরত খনিগুলোর মজুদ কমিয়ে আসাটা উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।