বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চাইলেন মেনন



সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের গণঅনশন কর্সূচিতে বক্তব্য দেন রাশেদ খান মেনন , ছবি: বার্তা২৪

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের গণঅনশন কর্সূচিতে বক্তব্য দেন রাশেদ খান মেনন , ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে খায়রুল হোসেনের নিয়োগপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। একই সঙ্গে তার পদত্যাগের দাবি তুলেছেন তিনি।

রাশেদ খান মেনন বলেন, আইন লঙ্ঘন করে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে খায়রুল হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাই আমি খায়রুল হোসেনের পদত্যাগসহ বিনিয়োগকারীদের ১২ দফা দাবির সাথে একমত প্রকাশ করছি। আগামী বাজেটের আগেই বিএসইসিতে পরিবর্তন দেখতে চাই।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে ‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’ -এর প্রতীকী গণঅনশন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, সংসদে প্রশ্নোত্তরে অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন- পুঁজিবাজারে সংকট আছে। পুঁজিবাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সংসদে সত্য কথা বলায় আমি অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।

তিনি বলেন, সমস্যা যখন সৃষ্টি হয়, তার সমাধান আছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন- আগামী বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হবে। এই প্রণোদনা কী হবে, সেটা যদি বিস্তারিত বলেন, তাহলে ভালো। আগামী ১৩ জুন বাজেট আসবে। আমি আশা করব, ওই বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কী প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার বিবরণ থাকবে।

খায়রুল হোসেন পরপর তিনবার বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে কীভাবে থাকেন, প্রশ্ন তোলেন রাশেদ খান মেনন।

তিনি বলেন, আগামী জুন মাসে বাজেটের আগেই বিএসইসিতে পরিবর্তন দেখতে চাই। কারণ আপনারা আইন ভঙ্গ করেছেন। আমরা পার্লামেন্টে আইন করেছি, আপনারা সেই আইন ভঙ্গ করেছেন।

মেনন বলেন, গত নয় বছরে কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) ইস্যু করতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, আমরা তার তালিকা চাই। তারা কারা, তাদের পরিচয় চাই। তাদের বর্তমান অবস্থা কী? আমরা তার তালিকা চাই।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আইপিও নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছে, আমি তাদের বিচার চাই। সেই সঙ্গে, খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করুন এবং অধিকতর তদন্তের পদক্ষেপ নিন। আমাদের বাংলাদেশে প্রথিতযশা অনেক ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ আছেন; যারা এই অধিকতর তদন্ত করতে পারবেন।

আর্থিক খাতের বর্তমান অবস্থা তুলেন ধরে অন্যতম এই বাম নেতা বলেন, আমরা দেখছি ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। গত ১০ বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা থেকে ঋণ খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আজকে কী করছেন আপনারা? ১ মে থেকে চালু করবেন সেই রীতি। রীতিটা হলো- ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দেবেন, ৯ শতাংশ সুদ দেবেন, আর ১২ বছরে ঋণ পরিশোধ করবেন। আবার দেখলাম বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে দরকার হলে আরও ছয় মাস বাড়িয়ে দেওয়া হবে।

‘কী হবে এতে? যারা ঋণ নেন বা সাধারণ ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা তারা কোথায় যাবেন? আপনি ঋণ খেলাপি হয়ে ৯ শতাংশ সুদ দেবেন। আর আমি ভালো ঋণগ্রহীতা হয়ে ১৩ শতাংশ সুদ দেব। এটা কি হয়? আপনি ঋণ খেলাপি হয়ে ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দেবেন, আর আমি ভালো ঋণগ্রহীতা হয়ে ১০-১২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দেবেন। এটা কি হয়? তাহলে আমরা সকলে এখন ঋণ নিয়ে ঋণ খেলাপি হব, ওটাই করার জন্য ব্যবস্থা করছেন আমাদেরকে।’

   

পাল্লা দিয়ে বেড়ে যে দামে বিক্রি হচ্ছে মসলা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কোরবানির ঈদের বাকি মাত্র ১ দিন। ঈদ এলেই মসলার বাজার গরম হয়ে ওঠে। কারণ ঈদের রান্নার জন্য মসলার চাহিদা অন্য সময়ের চেয়ে বেড়ে যায়। আর সবকিছুর সাথে পাল্লা দিয়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মসলার দামও।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের মসলা পণ্যের খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই মাসের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে এলাচি বিক্রি হচ্ছে ৩২০০ থেকে ৪০০০ টাকায়। দারুচিনি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, ১০০ টাকা বেড়ে জিরা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, ২০০ টাকা বেড়ে লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১৫৫০ থেকে ১৮০০ টাকা কেজি, জয়ত্রী সাড়ে ৩ হাজার টাক দরে।


এছাড়া কালোজিরা ৩৫০-৪০০ টাকা, তেজপাতার কেজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, ধনের বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৬০ টাকা, দেশীয় রসুনের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, দেশী হলুদ ৩১০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, আলুবোখারা ৪৫০ টাকা, কালো গোলমরিচ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২৭৫০ টাকা, কিশমিশ ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, যায়ফলের পিস ৮ টাকা, কাঠবাদাম ১০৮০ টাকা, কাঁচাবাদাম ১৬৫ টাকা, মরিচের গুঁড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, হলুদের গুঁড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, ধনের গুঁড়া ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

;

ট্রেনে পচনশীল দ্রব্য পরিবহন না করার অনুরোধ রেল কর্তৃপক্ষের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ট্রেনে পচনশীল দ্রব্য মাছ-মাংস পরিবহন না করার অনুরোধ রেল কর্তৃপক্ষের

ট্রেনে পচনশীল দ্রব্য মাছ-মাংস পরিবহন না করার অনুরোধ রেল কর্তৃপক্ষের

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানী ছেড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। ছুটি ও ঈদ উৎসব উপভোগ শেষে আবারও রাজধানীতে ফিরবেন সাধারণ মানুষ। তবে ফিরতি যাত্রায় ট্রেনে মাছ-মাংসসহ পচনশীল খাদ্যদ্রব্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নিয়ম মানতে নারাজ সাধারণ মানুষ। তাই ট্রেনে মাছ-মাংস সহ পচনশীল যেকোন ধরনের খাদ্যদ্রব্য পরিবহন না করার অনুরোধ জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

তবে নিতান্তই এসব দ্রব্য পরিবহনে বিশেষ ভাবে প্যাকেজিংয়ের অনুরোধ জানানো হয়।

রোববার (১৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার এ অনুরোধ জানান।

মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে আমাদের রাষ্ট্রিয় সম্পদ। আমাদের সম্পদ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।

তিনি বলেন, ট্রেনে মাংস পরিবহন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আমরা সেগুলো মানি না। কোরবানি ঈদের পর বাড়ি থেকে ফেরার সময় অধিকাংশ মানুষ কাঁচা মাংসসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পরিবহন করে। যার ফলে আমাদের রাষ্ট্রিয় সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রেলে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ অসুবিধার সন্মুখীন হয়। কাঁচা মাংসের রক্ত পরে গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট হয়। যাত্রীরা গন্ধ ও রক্তের কারনে বিব্রতকর পরিস্থিতির সন্মুখীন হয়। তাই আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ রেলের ক্ষতি হয় ও সাধারণ মানুষ বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পরে এমন মাংস পরিবহনসহ কোন ধরনের খাদ্যদ্রব্য পরিবহন না করার অনুরোধ করছি সাধারণ মানুষের প্রতি। তারপরও যারা মাংস পরিবহন করবে তাদেরকে বিশেষ ভাবে প্যাকেজিং-এর অনুরোধ করছি। যাতে ট্রেনের ভেতরে কোন ধরনের রক্ত না পরে এবং দুর্গন্ধ না ছড়ায়।

;

বিকাশ পেমেন্টে ওয়াটার পার্ক ‘ম্যানা বে’-তে ২০% ডিসকাউন্ট



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বিকাশ

বিকাশ

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদের ছুটিতে ‘ম্যানা বে’ ওয়াটার পার্কে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়ানো আরও আনন্দময় ও সাশ্রয়ী করতে অনলাইনে এন্ট্রি টিকেট কিনে বিকাশ পেমেন্ট করলেই গ্রাহকরা পাচ্ছেন ২০% ডিসকাউন্ট। ৩০ জুলাই পর্যন্ত চলা এই ক্যাম্পেইনে গ্রাহকরা যতবার খুশি ততবার এই ডিসকাউন্ট উপভোগ করতে পারছেন।

ঢাকার অদূরে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় অবস্থিত প্রায় ৬০ হাজার বর্গমিটার বিস্তৃত বাংলাদেশের প্রথম প্রিমিয়াম ওয়াটার পার্কটিতে সব বয়সী মানুষের জন্য বৈচিত্র্যময় আয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ওয়াটার স্লাইড ট্যুর, ওয়েভ পুল, ফ্লোরাইডার ডাবল, বাচ্চাদের জন্য আলাদা জোন, কৃত্রিম নদীসহ নানা আয়োজন। ওয়াটার পার্কটিতে প্রবেশ মূল্যের মধ্যেই সব রাইড অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ ভেতরে ঢোকার পর আলাদা করে কোনো রাইডের জন্যে টিকেট কাটার প্রয়োজন নেই।

বিকাশ অ্যাপ, পেমেন্ট গেটওয়ে ও ইউএসএসডি কোড *২৪৭# ডায়াল করে পেমেন্ট করতে পারবেন গ্রাহকরা। অফারের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে https://www.bkash.com/campaign/mana-bay-discount লিংকটিতে। টিকেট কেনা যাবে https://www.manabay.com/ লিংক থেকে।

;

উৎসবে কেন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়?



ড. মাহফুজ পারভেজ
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

মাঠের ক্রিকেট রোমাঞ্চকর ভঙ্গিতে চলছে হাট-বাজারে। আলু হাফ সেঞ্চুরি করেছে আগেই। কিছু কিছু সবজি সেঞ্চুরি করেছে। ডিম দেড় সেঞ্চুরি আর মরিচ ডাবল সেঞ্চুরি। মাছ-মাংসের দাপটে স্কোর বোর্ড লাফিয়ে চলেছে। অন্যদিকে, প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ ‘ক্লিন বোল্ড আডট’ হচ্ছে সাধারণ নাগরিকগণ।

সাম্প্রতিক সময়ে দ্রব্যমূল্য কিছুদিন পর পরই বেড়ে চলছে। একবার বাড়লে সেটা আর কমছে না। বাজার ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাই যেন কর্তৃপক্ষের নেই। বলা হয়, সিন্ডিকেটের হাতের মুঠো বন্দি বাজারের কর্তৃত্ব। সবাই যেন তাদের হাতে অসহায় ও জিম্মি।

বিশেষ করে, উৎসব উপলক্ষ্যে মূল্যবৃদ্ধি অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। রোজার আগে আগে, ঈদের সময়ে, কোরবানির সময়ে দাম বাড়ানো যেন দস্তুর। সব ধরনের পণ্যে কমবেশি দাম বাড়লেও কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধির মতো ঘটনাও ঘটে। যেমন, রোজার আগে পেয়াজ আর কোরবানির আগে মশলা মাত্রাছাড়া দামে কিনতে বাধ্য হয় সাধারণ মানুষ। মনে হয়, এই অনাচার, অত্যাচার, জুলুম ও বাড়াবাড়ির কবল থেকে আম-জনতার নিস্তার নেই।

বাজারের এই বেলাগাম অবস্থা কেন? বিশেষত, উৎসবের সময়ে জনতার পকেট-কাটার আয়োজন কেন থামানো যাচ্ছে না? এই অব্যবস্থা সম্পর্কে কে বা কারা উত্তর দেবেন? প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে কে?

এমন নয় যে, দ্রব্যমূল্য হঠাৎ বৃদ্ধি পায় এবং হঠাৎ কমে যায়। মাঝে মাঝে এমন হলে মানুষ সেটা সামালও দিতে পারে। কিন্তু যখন দ্রব্যমূল্য প্রতিদিনই বাড়ে, বাড়লে আর কমে না এবং উৎসবের উপলক্ষ্যে আকাশচুম্বী হয়, তখন নির্দিষ্ট আয়ের সাধারণ মানুষ সেটা সামলাবেন কেমন করে? শুধু দ্রব্যমূল্যই নয়, বাড়িভাড়া থেকে ইউটিলিটি বিল সব কিছুই যখন বাড়ে, তখন সে ধকল মোকাবিলা করতে পারে না সীমিত ও নির্ধারিত আয়ের মানুষজন। এমনকি, বাজেটের সময় মানুষ আতঙ্কে থাকে দাম বাড়ার ভয়ে।

এসব কারণেই কিছু সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে, অনেক মধ্যবিত্তের মানুষ নিম্ন আয়ের কাতারে নেমে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই নিরুপায় হয়ে পরিবার-পরিজন-সন্তানদের গ্রামে রেখে আসতেও বাধ্য হচ্ছেন। কারণ জীবনযাত্রার ব্যয় ও আনুসাঙ্গিক খরচ যে হারে বাড়ছে, বেতন ও আয় সে হারে বাড়ছে না। ফলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের বিন্যাস ভেঙে যাচ্ছে। অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ছেন। অনেকে ঘুষ, দুর্নীতি, অপরাধ, অপকর্মের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছেন।

এভাবেই আর্থিক সমস্যার কারণে শুধু অর্থনীতিতেই নয়, সামাজিক সমস্যার বিস্তারও ঘটছে। যার কুফল বহুমাত্রিক ও ভয়াবহ। অনেক সময় আর্থিক ও সামাজিক অবক্ষয় ও ধস এতোটাই প্রবল আর মারাত্মক হয় যে, রাজনীতি সেটা সামাল দিতে পারে না। এমনকি, রাজনৈতিক অর্জনও তলিয়ে যায় অর্থনীতিক চাপ ও সামাজিক স্থিতিহীনতার অভাবে। অতএব, বাজার ব্যবস্থা তথা মানুষের আর্থিক ও সামাজিক জীবনকে স্থিতিশীল রাখা রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের সামনে এক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে এড়িয়ে গিয়ে নয়, মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে দমন করাই রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। আর এতেই নিহিত রয়েছে তাদের সাফল্য।

কাগজেকলমে বাজার ব্যবস্থা ও পণ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে দায়িত্ব পালনের জন্য নানা রকমের সংস্থা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা আছে। সেসব বেতনভুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ সজাগ হলে পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ হতো না এবং সব কিছুর জন্য রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষকে উত্তর দিতে হতো না। প্রতিটি পর্যায়ে জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত হলে সকল প্রশ্ন মন্ত্রীর সামনে উত্থাপিত হওয়ারও সুযোগ হ্রাস পেতো।

সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীলতা না থাকায় দফায় দফায় কেন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, তার সঠিক কারণ ও সদুত্তর কেউ দিতে পারে না। বিশেষত নানা উৎসবের আবহে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না। বছর বছর রোজা, ঈদে দাম বাড়লেও এহেন মূল্যবৃদ্ধির কারণ চিহ্নিত হয় না। অথচ প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে এবং সরকারের নানা সংস্থায় গবেষণার ব্যবস্থা আছে। তাদের পক্ষ থেকে এজন্য উপযুক্ত কারণগুলোকে চিহ্নিত করে উপস্থাপনও করা হয় না। হলে সবাই তা জানতে পারতো এবং সেসব কারণগুলোকে সমাধানের পথে এগিয়েও নিয়ে যেতে পারতো।

বাস্তবে তেমনটি হচ্ছে না। দাম বাড়লে হৈচৈ ও কিছু চিৎকার হয়। কাজের কাজ কিছুই হয় না। একটি দুটি কারণকে সমাধানে এনে বিশেষ উপলক্ষ্যে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির প্রবণতাও ক্রমশ কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অত্যাচার সহ্য করেই মানুষ আর্থিক ও সামাজিক জীবনে পিছিয়ে পড়ছে। যার চাপ এক পর্যায়ে প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের জন্য বিরাট ঝুঁকির কারণ হচ্ছে।

‘বারো মাসের তের পার্বণের দেশ বাংলাদেশ‘ সম্পর্কে পৌরনীতি ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বইগুলোতে যে বিহ্বলতা ও আবেগ লিপিবদ্ধ রয়েছে, বাস্তবে সেটা আংশিক সত্যে পরিণত হচ্ছে দিনে দিনে। প্রকৃত সত্য উদ্ধৃত করতে ‘পার্বণে উৎসবে বাংলাদেশে দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ ঘটনা‘ মর্মে বাক্যটিও জুড়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে চলে আসবে আর্থিক, সামাজিক বিপর্যয় ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার কথাও। এসব প্রসঙ্গ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্রকে ম্লান করবে, যা মোটেও কাম্য নয়। ফলে উৎসবে কেন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় সেটা খতিয়ে দেখে সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়াই সংশ্লিষ্টদের জরুরি কর্তব্য।

লেখক: অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম; চেয়ারম্যান ও প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।

;