বরিশাল বিভাগে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থান নির্ধারণের কাজ বেশ জোরেশোরেই এগিয়ে চলেছে। মোট পাঁচটি স্থানের বিষয়ে প্রাক সমীক্ষা চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আনোয়ার হোসেন।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) সচিবালয়ে তার নিজ কক্ষে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

বিজ্ঞাপন

আনোয়ার হোসেন বলেন, মোট পাঁচটি জায়গার বিষয়ে পরিবেশ, প্রতিবেশ, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সমীক্ষা করা হচ্ছে। সবগুলো স্থানই বরিশাল, বরগুনা ও পটুয়াখালী অঞ্চলে। প্রধানমন্ত্রী চান, দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বরিশাল বিভাগের মধ্যেই নির্মিত হোক।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চাই, জমি রেডি করে রাখতে। রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে গেলে কাজটি শুরু করতে চাই। তখন আমাদের বেশ কিছু দক্ষ লোক বেরিয়ে আসবে। যাদের সংস্পর্শে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চূড়ান্ত পরিণতির দিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, যথা সময়েই উৎপাদনে আসতে সক্ষম হবে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

বিজ্ঞাপন

অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও উচ্চ প্রযুক্তির পারমাণবিক বিদ্যুৎকে সাশ্রয়ী বিবেচনা করা হয়। যদিও ফুকুশিমা ও চেরনোবিল দুর্ঘটনার কারণে অনেকটা বিতর্কের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এ খাত। পাবনার রূপপুরে রুশ ফেডারেশনের কারগরি সহায়তায় দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলছে প্রথম প্রকল্পের কাজ। এখান থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এর কয়েক মাসের ব্যবধানে উৎপাদনে আসবে দ্বিতীয় ইউনিট।

কারিগরি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান রোসাটম (রাশিয়ান স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন) দাবি করেছে, সর্বাধুনিক ভিভিআর প্রযুক্তিতে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এতে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় কোনো রকম ঝুঁকি নেই।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রূপপুরের বর্জ্য রাশিয়ায় ফেরত নিয়ে যাবে। তবে এটি ফলাও করে প্রচার হোক, তা চান না রাশানরা। ফলাও হলে রোসাটম বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যেখানে যেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে, সব জায়গা থেকে আবেদন উঠতে পারে। তাই তারা ফলাও করে প্রচারের বিপক্ষে। তবে বর্জ্য নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রোসাটম।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বর্জ্য ফেরত সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। মন্ত্রী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, এটি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই, সব কিছু ঠিকঠাক চলছে।

তিনি বলেন, আমি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দেখে এসেছি, এটি হাইটেক কোনো বিষয় নয়। মাটির নিচে নির্দিষ্ট গভীরে কন্টেইনারে করে রেখে দেওয়া হয়। বর্জ্যের ৯০ শতাংশ পুনরায় শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এক সময় আসবে, আমাদের সন্তানরা বলবে, এ মূল্যবান সম্পদ আমরা বিদেশে পাঠাবো কেন। আমরাই সংরক্ষণ করব।

বিশ্বের ৩০টি দেশে ৪৪৯ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে উৎপাদনে আসবে নতুন ১৭৩ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। চলমান এসব প্রকল্পের মধ্যে নতুন দেশ হিসেবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ জগতে প্রবেশ করবে ৩০টি দেশ।

ভারতে ২১টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। ছয়টি নির্মাণাধীন ও ২৪টি রয়েছে পরিকল্পনাধীন। ভারত ২০২৪ ও ২০৫২ সাল নাগাদ যথাক্রমে ২৭ হাজার ৪৮০ মেগাওয়াট ও ৬৩ হাজার মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। চীনে বর্তমানে ৩০টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। ২৪টির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ চলমান রয়েছে।