ব্যবসায়ীদের ২০ হাজার কোটি টাকার কর মওকুফ
সুবিধা ছাড়াই ২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রথম ছয়মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে আমদানি ও সম্পূরক শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও বিশেষ প্রণোদনা বাবদ ১৯ হাজার ৮১১ কোটি ৯০ লাখ টাকার কর মওকুফ পেয়েছে ব্যবসায়ীরা।
দেশীয় শিল্প সুরক্ষা এবং দেশের তৈরি পোশাক খাত ও চামড়া খাতসহ রফতানিমুখী খাতগুলো যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকে সেই লক্ষ্যে সরকার বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃপক্ষ (এনবিআর)।
এনবিআরের তথ্য মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকার ৪৫ হাজার ৭৪৩ কোটি ২১ লাখ টাকার কর মওকুফ সুবিধা পেয়েছে ব্যবসায়ীরা। আর নতুন অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে ১৯ হাজার ৮১১ কোটি ৯০ লাখ টাকার কর মওকুফ পেয়েছে তারা।
অর্থাৎ গত দেড় বছরের সাড়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকার কর মওকুফ পেয়েছে ব্যবসায়ীরা। এই সুবিধা নিয়েছে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন, রানার এবং প্রাণ আরএফএল গ্রুপসহ দেশি সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য খন্দকার মোহাম্মদ আমিনুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, কর মওকুফ সুবিধা সরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো পাচ্ছে। বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেসব কোম্পানি বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রফতানি করে তারা আমদানি ও রফতানি দুই ধরনের কর মওকুফ সুবিধা নিচ্ছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, দেশি কোম্পানিগুলো ছাড়াও তৈরি পোশাক খাত, ওভেন এবং নিটওয়ার কোম্পানিগুলোর আমদানি-রফতানি পণ্যে কর মওকুফ সুবিধা পাচ্ছে। এছাড়াও সরকার আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নগদ অর্থের প্রণোদনা দিচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমইএ’র সদস্যরা।
এদিকে গত ছয়মাসে এনবিআর ১ লাখ হাজার ৫ হাজার ১৬১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার রাজস্ব আহরণ করেছে। এর পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩১ হাজার ৫০৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ঘাটতি। আর শতাংশের হিসেবে ২৩ দশমিক ০৫ শতাংশ কম আদায় হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম ছয়মাসে এখনো বড় অংকের ঘাটতি রয়েছে।
বিগত জুলাই-ডিসেম্বর সময় অর্থাৎ ৬ মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩৬ হাজার ৬৬৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। কর, ভ্যাট এবং কাস্টমস এই তিন বিভাগ থেকে এনবিআর এই পরিমাণ রাজস্ব আহরণ করেছে।
এনবিআর বলছে, ছয়মাসে আমদানি-রফতানি থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩১ হাজার ৪২৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা, স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট ৪১ হাজার ৯০ কোটি ২২ লাখ টাকা ও আয়কর-ভ্রমণ করে ৩২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ ২৩ দশমিক ০৫ শতাংশ আদায় করতে পারেনি।
সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরের ৬ মাস শেষে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের হার ১০-১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে না। তাই এখন পর্যন্ত রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩১ হাজার কোটি টাকা।
তবে গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
খাতওয়ারি রাজস্ব আদায়ের দিক দিয়ে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি আয়কর আদায় হয়েছে। এনবিআরের এই বিভাগ টার্গেটের ৮১. দশমিক ৪৬ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এরপরই ভ্যাটের অবস্থান। ভ্যাটে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭৯ দশমিক ০৩ শতাংশ আদায় হয়েছে। সবচেয়ে কম ৭০ দশমিক ৪৬ শতাংশ আদায় হয়েছে শুল্কে।
এ বিষয়ে রাজস্ব আদায় কম হওয়া নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এ বছর রাজস্ব আদায়ে একটু পিছিয়ে আছি। বড় ঘাটতি হলেও ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। তবে বিগত পাঁচ বছরে প্রায় ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কম অর্জন নয়।
তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে রাজস্ব আদায় কয়েকগুণ বাড়বে। এতে দেশে উন্নয়ন গতিশীল হবে। সব বন্দরে স্ক্যানিং মেশিন বসানো হবে। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বন্দরে পণ্য জট কমাতে হবে। বন্দর গতিশীলে এনবিআরকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে সোয়া এক লাখ কোটি টাকা আদায় হয়। আর গোটা অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায় হয় প্রায় দুই লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। এতে ঘাটতি ছিল ৫৬ হাজার কোটি টাকা।
এমন ঘাটতির মুখে এনবিআরকে চলতি অর্থবছরে সোয়া তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়। এর মধ্যে ভ্যাট খাতে সর্বোচ্চ এক লাখ ১৭ হাজার ৬৭১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। আর আয়কর খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক লাখ ১৫ হাজার ৫৮৮ কোটি ১৬ লাখ ও শুল্ক খাতে ৯২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়।