৯৪ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ স্বাভাবিক: গভর্নর
ডিসেম্বর ২০১৯ সাল শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার কোটি টাকা। এই খেলাপি ঋণ মোটেই অস্বাভাবিক কিছু না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এর চেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ। কারণ এটা গ্রস খেলাপি ঋণ। আর নীট খেলাপি ঋণ ২ শতাংশের নিচে রয়েছে।
বুধবার (৪ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র আগারগাঁওয়ে সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলন ২০২০ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ব্যাংকের সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আতাউর রহমান প্রধান এর সভাপতিত্বে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সম্মানিত সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী প্রমুখ।
কেলেঙ্কারির ভয় ভীতি কাটিয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়ার পরামর্শ দিয়ে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, হলমার্কের ঘটনার পর সোনালী ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক সংকোচ ও ভীতি রয়েছে। এটি একেবারে থাকা উচিত নয়।
এ ভয় দূর করে ঋণ দেয়ার পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেন, আপনারা (কর্মকর্তারা) যদি সব ধরনের নিয়ম পরিপালন করে ঋণ প্রদান করে থাকেন তাহলে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
খেলাপি হলে শুরুতেই মামলায় না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেন, প্রতিষ্ঠান কোনো সমস্যায় পড়লে তাকে যতটুকু প্রয়োজন সহায়তা করে কর্মযজ্ঞে ফিরে যাওয়ার সহযোগিতা করতে হবে। কারণ মামলা করলে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কর্মসংস্থানে বাধা সৃষ্টি হয়।
বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার প্রতি অভিযোগ এনে গভর্নর বলেন, দেশি ও বিদেশি কিছু গবেষণা সংস্থা দেশের মোট ক্ষতিগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে। প্রকৃতপক্ষে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক কম।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সুতরাং এই ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অনেক। বর্তমানে দেশের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। যা মোট বিতরণের ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। একটি দেশের অর্থনীতির জন্য এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে সেপ্টেম্বর শেষে এটা অনেক বেশি ছিল। খেলাপি কমিয়ে আনতে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ১০ বছর মেয়াদী রিসিডিউল পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকারদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে গভর্নর বলেন, এটা যেন পরবর্তীতে ফোর্স লোনে পরিণত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, মুজিববর্ষে আর্থিকভাবে যেন আমরা পিছিয়ে না যাই সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান জানান, সোনালী ব্যাংকের এবছরের স্লোগান ‘দীপ্ত শপথ মুজিববর্ষে, আমরা যাব সবার শীর্ষে।’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ব্যাংকিং খাতে আমরা শীর্ষে যেতে চাই। আগামী বছর খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক অংকে নামিয়ে আনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।