ডিএসইর সম্পদ লোপাট, ১৬ কোটির ট্রেক ৫ লাখে বিক্রির উদ্যোগ!
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে প্লেসমেন্ট বাণিজ্য, ভালো কোম্পানির পরিবর্তে খারাপ কোম্পানি এনে দেশের পুঁজিবাজারকে ধ্বংস করে বিনিয়োকারীদের ফকির বানিয়েছে একটি চক্র। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের পুঁজিবাজারের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে।
সেই চক্রটি এখন সক্রিয় হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সম্পদ লোপাটে। চক্রটি সম্প্রতি অন্তত ১৬ কোটি টাকার ডিএসইর ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট (ট্রেক) মাত্র ৫ লাখ টাকায় বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে।
তারা লবিংয়ের মাধ্যমে টোকেন মূল্যে ডিএসইর সম্পদ বিক্রি করবে। আর নিজেদের পকেট ভারী করবে। আর ডিএসইর হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করবে। ডিএসইকে দেওলিয়া করবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন ডিএসইর সদস্যরা।
এ লক্ষ্যে মাত্র ৫ লাখ টাকা ট্রেক আর ১ লাখ টাকা আবেদন ফি'র বিধান রেখে ‘ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা ২০২০’ খসড়া করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
জনমত যাচাইয়ের মাধ্যমে এ খসড়া চূড়ান্ত করতে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে মতামত চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। মতামতে খসড়ার কোনো বিষয়ে আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে তা জানাতে বলা হয়েছে।
পুঁজিবাজারে এখন চলছে রক্তক্ষরণ। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দেশে বিরাজ করছে অনেকটাই অচলাবস্থা। সরকার, সাধারণ মানুষ এমনকি পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরাও প্রাণে বেঁচে থাকার তাগিদে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, ঠিক তখনই এ উদ্যোগ নিলেন ডিএসইর সাবেক সভাপতি বর্তমান প্রভাবশালী পরিচালক। তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক (ডিবিএ) সভাপতি, ডিএসইর একাধিক স্বতন্ত্র পরিচালক এবং সর্বপরি মাথার ওপর রয়েছেন বিএসইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এমন উদ্যোগে ব্রোকারেজ হাউজের মালিক হওয়ার সুযোগ রাখায় বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেছেন ব্রোকারেজ হাউজের বর্তমান মালিকরা।
নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসইর এক পরিচালক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের আগে ডিএসই ১২টি মেম্বারশিপ বিক্রি করেছে ৩২ কোটি ২ লাখ টাকা করে।
তিনি বলেন, স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে চীনের কাছে ট্রেক ছাড়াই কেবল শেয়ার বিক্রি করেছি ১৬ কোটি টাকায়। সেই হিসাবে ট্রেকের দাম দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ২ লাখ টাকা। কিন্তু কি অদ্ভূত ব্যাপার দেখেন, সেখানে মাত্র ৫ লাখ টাকা দিয়ে ট্রেক কেনার সুযোগ রাখা হচ্ছে। এটা কিছুতেই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না। তাতে মূলত ডিএসই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শুধু তাই নয়, ট্রেডিং রাইট সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়াটি এমন সময় জনমত জরিপে দেওয়া হয়েছে, যখন করোনাভাইরাস রোধে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া কিছুতেই ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি।
বিএসইসির খসড়ায় বলা হয়, নতুন ট্রেক পেতে স্টক এক্সচেঞ্জকে দিতে হবে ৫ লাখ টাকা। তবে ট্রেক নেওয়ার জন্য থাকতে হবে কমপক্ষে ৩ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জে ২ কোটি টাকা জামানত দিতে হবে।
এক্সচেঞ্জের প্রত্যেক প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডার ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনের আওতায় একটি করে ট্রেক (ব্রোকারেজ হাউজ) পাওয়ার অধিকার রাখেন।
প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডারদের বাইরে ট্রেক পাওয়ার যোগ্যতার শর্তে রাখা হয়েছে- কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কমিশন থেকে অনুমোদন যেসব প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন ৩ কোটি টাকা বা তার বেশি রয়েছে, তারা ট্রেক পাওয়ার যোগ্য হবেন। তবে নিট সম্পদের পরিমাণ সব সময় পরিশোধিত মূলধনের ৭৫ শতাংশের বেশি থাকতে হবে।
ট্রেক পাওয়ার জন্য ১ লাখ টাকা ফি দিয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এ ফি ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে এক্সচেঞ্জ বরাবর জমা দিতে হবে। আবেদন পাওয়ার পর তা যাচাইবাছাই করে এক্সচেঞ্জ ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা মঞ্জুর করবে অথবা বাতিল করবে। আবেদন মঞ্জুর হলে নিবন্ধন ফি বাবদ ৫ লাখ টাকা এক্সচেঞ্জ বরাবর ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার করতে হবে। অর্থাৎ মাত্র ৬ লাখ টাকা দিয়েই হওয়া যাবে ব্রোকারেজ হাউজের মালিক।
কোনো প্রতিষ্ঠান ট্রেক পেলে তা হস্তান্তর করা যাবে না। আবার নিবন্ধন পাওয়ার এক বছরের মধ্যে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা ২০০০ অনুযায়ী, স্টক-ডিলার বা স্টক-ব্রোকারের সনদ নিতে হবে। এ সনদ নেওয়ার ৬ মাসের মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে না পারলে ট্রেক বাতিল হয়ে যাবে।
জনমত যাচাইয়ের মাধ্যমে এ খসড়া চূড়ান্ত করতে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে মতামত চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। মতামতে খসড়ার কোনো বিষয়ে আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে তা জানাতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর সাবেক এক পরিচালক বলেন, ডিএসইর আগের পর্ষদের কাছেও ট্রেক বিক্রির প্রস্তাব করা হয়েছিল। তৎকালীন ডিএসই এমডিসহ বোর্ডে এ প্রস্তাব অনেকটা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। তখন নতুন করে ট্রেক বিক্রির জন্য পরিশোধিত মূলধন ১৫ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করেছিল আমাদের বোর্ড।