করোনার আঘাতে এবার রেমিট্যান্সে ভাটা
রেমিট্যান্স ছাড়া রফতানি বাণিজ্য এবং নতুন বিনিয়োগসহ দেশের অর্থনীতির প্রায় সবকয়টি সূচক ছিল নেতিবাচক ধারায়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আঘাত হেনেছে এবার প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে। ফলে মার্চ মাসে প্রবাসী আয়ে ভাটা পড়েছে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। এর আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ১৪৫ কোটি ২২ লাখ ডলার। যা শতাংশের হিসেবে রেমিট্যান্স ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ কমে আয় হয়েছে।
শুধু তাই নয়, গত বছরের মার্চ মাসের তুলনায়ও ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম রেমিট্যান্স এসেছে। ২০১৯ সালের মার্চে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। যা গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ১২০ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল।
এ বিষয়ে এবি ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করেছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্য, চীন, ইতালি, কানাডা, জার্মানি, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বেশিরভাগ দেশগুলোতে আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে। অফিস-আদালত, কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। কোনোরকম প্রাণে বেঁচে থাকতে ঘরে বন্ধী রয়েছে মানুষ। করোনায় পুরো বিশ্বই এখন অচল। তাই এ সময় রেমিট্যান্স কমেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একদিকে কাজ নেই। অন্যদিকে প্রাণে বেঁচে থাকার আশায় এসব দেশ ছাড়ছেন প্রবাসীরা। আবার অনেকের চাকরি চলে গেছে। ফলে ইনকাম নেই বললেই চলে। এমন অবস্থায় প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠাবে তো দূরের কথা তাদের খরচ মেটানোই এখন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
খুব শিগগিরই এই অবস্থা স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা যাচ্ছে না। রেমিট্যান্স আমাদের একটা বড় শক্তি। এটি কমে যাওয়া মানে অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত বলে জানান এই ব্যাংকার।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের জিডিপিতে প্রবাসীদের আয়ের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ। করোনার কারণে এখন পুরো বিশ্ব অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ঘর থেকে বের হতে পারছে না মানুষ। তাই রেমিট্যান্স পাঠানো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থা যত দীর্ঘায়িত হবে ততই দেশের অর্থনীতির জন্য অমঙ্গল হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড সংখ্যক রেমিট্যান্স আসে। প্রবাসীরা বছরটিতে ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। যা অর্থবছর হিসেবে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আয়। এই ধারা অব্যাহত রাখতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। এছাড়া প্রবাসীরা যেন সহজে অর্থ পাঠাতে পারে, সেজন্য বেশ কিছু শর্ত শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রণোদনার অর্থ পরিশোধের জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। ফলে বৈধ পথে বাড়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ। কিন্তু করোনার কারণে রেমিট্যান্স ভাটা পড়েছে। কবে উপরিস্থিত উন্নতি হবে কেউ বলতে পারছে না।