পুঁজিবাজার ক্যাসিনোতে পরিণত হয়েছে
দেশের পুঁজিবাজার ক্যাসিনোতে পরিণত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ।
তিনি বলেন, গত ১০-১২ বছরে দেশের পুঁজিবাজারকে সরকারের কিছু লোক লুটপাট করে খেয়েছে। পুঁজিবাজার হচ্ছে অর্থনীতির প্রাণশক্তি। উদ্যোক্তারা এখান থেকে বিনা সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন। কোম্পানিগুলো ভালো পারর্ফম করে, বছর শেষে ভালো লভ্যাংশ দেয়। আর শেয়ারহোল্ডার এই লভ্যাংশ পায়। কিন্তু সরকারের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার জায়গায় এমন কিছু মানুষকে বসানো হয়েছিলো, যাদের মধ্যে কোনো প্রফেশনালিজম ছিলো না।
শনিবার (২০জুন) ‘সিপিডির বাজেট সংলাপ ২০২০’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সংলাপটি সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
আমির খসরু বলেন, শুধু তাই নয়, এই সরকার পুঁজিবাজারের ভালো চায় না। যদি চাইতে তবে দেখুন বাজেটে নন-লিস্টেড কোম্পানির করপোরেট কর ২দশকি ৫ শতাংশ কমিয়েছে। বিনা শর্তে অন্যান্য খাতে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। আর পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে ৩ বছরের লক ইনও দিয়েছে। তা হলে কেন মানুষ পুঁজিবাজারে আসবে। বাজেটে কালোটাকা সাদার এই সেনটিভ অবিশ্বাস্য। সরকার এই টাকা কেবল শিল্প ও বাণিজ্য খাতে বিনিয়োগের জন্য সুবিধা দিতে পারতো। এর ফলে শিল্প ও বাণিজ্য খাতে নতুন করে কর্মসংস্থান হতো। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখত।
তিনি বলেন, দেশের ৮০-৮৫ শতাংশ মানুষ ইনফরমাল সেক্টরে কাজ করে। জীবন- জীবিকা নির্বাহ করে। এর মধ্যে ৪-৫ কোটি লোক রয়েছে যারা দিন এনে দিনে খায়। আর ৩-৪ কোটি মানুষ আছে যারা চাকরি হারাচ্ছেন। বাজেটে তাদের স্বাস্থ্য ও খাদ্য সহায়তা দেয়ার দরকার ছিলো। এটা নাগরিকদের অধিকার। এই লোকদের হাতে টাকা দিতে হবে। তাদের খরচ করতে হবে। তাইলে সাপ্লাই চেইন ঠিক থাকবে। তারা অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। না হলে অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
কিন্তু অর্থমন্ত্রী সেটা না করে স্বর্ণ আমদানির ওপর শুল্ক কমিয়েছেন। মোবাইল সার্ভিসের ওপর নতুন করে ৫ শতাংশ হারে কর বাড়িয়েছেন।
অমির খসরু বলেন, স্বাভাবিক নিয়মেই স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখার প্রয়োজন। কিন্তু এখন দেশে বিশেষ অবস্থা চলছে। কিন্তু এখনো জিডিপির ১ শতাংশের কম বরাদ্দ রয়েছে। বরাদ্দ বাড়লে দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে কেন ক্যাপাসিটি বাড়ে না। এর পেছনে কারা জড়িত তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে।
সরকারের মেগাপ্রকল্পগুলোতে অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো ৩-৪ গুণ অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এগুলোর বরাদ্দ বাড়ানোর আগে ডিবেট হওয়া দরকার। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ অর্জন করতে হলে নতুন করে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে জানান তিনি।
সরকার ব্যাংক ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে উল্লেখ্য করে সাবেকই এই মন্ত্রী বলেন, এভাবে চললে দেশের অর্থনীতি তলানিতে চলে আসবে। ব্যবসায় দুর্নীতি হচ্ছে। যারা এ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তারা দেশের বাহিরে গিয়ে ভালো আছেন।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সার্বিকভাবে আমাদের ভারসাম্যরক্ষা করতে হবে। টাকা ছাপিয়ে বেতন দিতে হবে এটা আমরা কেউই চাই না। প্রতি দুই মাস পর পর বাজেটের বিষয় পর্যালোচনা করার প্রস্তাব দিয়ে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে আমাদের কিছুই হবে না। অর্থনীতি সামনে অগ্রসর হবে না।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করছেন, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, ইন্টার পার্লামেন্টিরিয়ান ইউনিয়ানের (এআইপিইউ) চেয়ারম্যান এবং পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, নাইম রাজ্জাক এমপি, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহেমদ, পলিসি রিচার্চ ইনিষ্টিটিউট অব বাংলাদেশের(পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের(এমসিসিআই) প্রেসিডেন্ট ব্যরিস্টার নিহাদ কবীর প্রমুখ।