মির্জাপুরে শিক্ষার্থী সংকটে কিন্ডারগার্টেন স্কুল
উপজেলার ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় আমার চারটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল। করোনা পরিস্থিতির আগে সব শাখা মিলিয়ে আমার প্রায় সাড়ে ৪শ’ শিক্ষার্থী ছিল। এরমধ্যে একটি ছিল নতুন শাখা। ওই শাখায় কেবলই শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়া শুরু করেছিল। কিন্তু করোনা এসে সব থামিয়ে দেয়। করোনা পরিস্থিতির এই দেড় বছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাবদ আমি প্রায় ২ লাখ টাকার মতো দায়গ্রস্থ হয়ে পড়েছি। দুটি শাখা ইতিমধ্যে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। বাকি দুটো শাখা বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। ভেবেছিলাম স্কুল খুললে হয়তো শিক্ষার্থী মুখর হয়ে উঠবে আমার বিদ্যালয়গুলো। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তিনভাগের দুই ভাগ শিক্ষার্থীই আমরা হারিয়েছি। সামনে কি হবে জানিনা। শিক্ষার্থী হারিয়ে এভাবেই দুরবস্থার বর্ণনা দিচ্ছিলেন উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের কবি নজরুল কিন্ডারগার্টেনের প্রধান মো. সাইফুল ইসলাম।
উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের বাঁশতৈল আইডিয়াল স্কুলের পরিচালক আলম হোসেন বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। স্কুল খোলার পর তিনভাগের দুই ভাগ শিক্ষার্থীই আর বিদ্যালয়ে ফিরেনি। কোন কোন শিক্ষার্থী পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিনমজুরি করছে বলেও জেনেছি।
মির্জাপুর পৌরসভা এলাকার নূর আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন এর প্রধান নুরুল ইসলাম বলেন, করোনা আগে আমার প্রতিষ্ঠানে ৮০ জনের উপর শিক্ষার্থী ছিল। স্কুল খোলার পর মাত্র ৫-৬ জন শিক্ষার্থী পেয়েছি। ধার দেনা করে প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি সামনে কি হবে জানি না।
করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ বিরতি শেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন উপজেলার অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল প্রধানরা। ফলে শিক্ষার্থী সংকটের কারণে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার দেড় শতাধিক কিন্ডারগার্টেন সংশ্লিষ্টরা। এ খাতে সম্পৃক্তদের দাবি করোনাকালে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী হারিয়েছেন তারা।
উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন সূত্রে, করোনা পরিস্থিতির আগে উপজেলার দেড় শতাধিক কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৫-১৮ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতো। আর এ কাজে শিক্ষক কর্মচারি মিলে প্রায় দুই হাজার মানুষ নিয়োজিত ছিল। এখানেই ছিল তাদের জীবন-জীবিকা। কিন্তু করোনার কষাঘাতে ওলট-পালট হয়েছে মির্জাপুরের কিন্টারগার্টেন শিক্ষা ব্যবস্থা ও এর সাথে সম্পৃক্তরা। অধিকাংশ শিক্ষক কর্মচারীই বেকার হয়েছেন, কেউবা আবার এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। কোন কোন প্রতিষ্ঠান প্রধান বাধ্য হয়েছেন প্রাণের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে দিতে। তবে ধার দেনা করে হলেও প্রতিষ্ঠান ধরে রাখার চেষ্টা করছেন অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।
মির্জাপুর উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন এর সভাপতি ও জ্ঞানজ্যোতি কিন্ডারগার্টেনের প্রধান মো. আবুল কাশেম খান বলেন, সারাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খোলা থাকায় করোনাকালে আমরা বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী হারিয়েছি। অপরদিকে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কোন
সহায়তাও পাইনি। ফলে মির্জাপুরে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রনাধীন নয়। তাই তাদের ব্যাপারে কোন মন্তব্য নেই। তবে বন্যা পরিস্থিতির কারনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও সন্তোষজনক।