'দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা ছাড়া আর কিছুই দেখছি না'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান বলেছেন, 'সামগ্রিকভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা ছাড়া আর কিছুই দেখছি না।'
'এখন পর্যন্ত দেশের কোন সরকার শিক্ষকদের মান উন্নয়নে কোন নীতিমালা তৈরি করেনি। শিক্ষা ব্যবস্থার যাই হোক না কেন, শিক্ষকদের মান নির্ধারণ করতে না পারলে কোন শিক্ষা ব্যবস্থায় কার্যকর হবেনা। একজন গাড়িচালকের বেতনে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের এই পেশায় আনবেন, এই শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়ন করা কতখানি সম্ভব ?'
শনিবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত 'পরিকল্পিত শিক্ষা ধ্বংসের সংক্ষিপ্ত কালপুঞ্জি: (১৯৭২-২০২২)' শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা।
ড. তানজিম উদ্দিন খান বলেন, '১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় সকলের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত হচ্ছে না। সবাইকে একই ধরনের পোশাক দেওয়া হচ্ছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। সবাইকেই ১০ নম্বর জুতা পড়তে দেওয়া হচ্ছে। যার ৮ নম্বর জুতা প্রয়োজন তাকেও দেওয়া হচ্ছে ১০ নম্বর জুতা অন্যদিকে যার প্রয়োজন ১২ নম্বর জুতো তাকেও দেওয়া হচ্ছে ১০ নম্বর জুতা। এমন একটা শিক্ষা ব্যবস্থার সংক্রমণ আমরা দেখছি। এই সংক্রমনের আমরা শেষ পর্যায়ে এসে পড়েছি। ভবিষ্যতে আমরা যে প্রজন্ম তৈরি করতে চাচ্ছি, এমসিকিউর মাধ্যমে আমরা তোতা পাখি তৈরি করার চেষ্টা করছি।'
তিনি বলেন, 'পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের কথা বলে আমরা মেকানিক্যাল রোবটিক মানুষ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছি। চার পাশের মানুষের প্রতি যার কোন অনুভূতি থাকবে না। ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যেসব শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় রয়েছেন তাদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্যই তারা এটা করেছেন। তাদের ক্ষমতা নিয়ে আমরা যেন প্রশ্ন করতে না পারি, শুধুমাত্র আমরা মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে শ্রম দিতে পারি। তাদের জন্য রেমিটেন্স দেশে পাঠাতে পারি। তারা অনেক টাকা খরচ করে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল দেখিয়ে আমাদের সমর্থন আদায় করবেন। এরকম প্রেক্ষাপটে এই শিক্ষাক্রম যথা উপযুক্ত।'
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, 'পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত এমন একটি দেশ পাবেন না, যে দেশে তার মাতৃভাষা ব্যতীত শিক্ষায় উন্নত হয়েছে। এমন একটা উদাহরণ কেউ দিতে পারবে না। চাইনিজ ও জাপানিরা তারা তাদের নিজের মাতৃভাষায় পড়ালেখা করে। কারণ প্রত্যেকটি ভাষার একটি মেন্টাল ইমেজ আছে। আপনি যখন মাতৃভাষায় পড়বেন, তখন একটি মেন্টাল ইমেজ তৈরি হয়। মানুষের যখন নাম বলা হয়, তখন তার একটা চেহারা মানুষের মনে ভেসে ওঠে। তেমনি শব্দের একটা চেহারা আছে। বিদেশি ভাষায় পড়লে সেই চেহারা তৈরি হবে না। কিন্তু বর্তমান যে শিক্ষাক্রম চালু হল, শিক্ষায় যেন বরাদ্দ কম লাগে ও মানুষ যেন ইংরেজি শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে আরও ধাবিত হয় এই হচ্ছে সেই শিক্ষা ব্যবস্থা। এর ফলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংরেজি শিক্ষার ব্যবসা ভালো হবার উদ্দেশ্যর দিকে এই শিক্ষা ব্যবস্থা।
সেমিনারের বক্তব্য রাখেন কারিকুলাম স্পেশালিস্ট অধ্যাপক সাত্তার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর রাজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আজম, শিক্ষা ও শিশু রক্ষা (শিশির) আন্দোলন এবং সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা প্রমুখ।