নেত্রকোনা-৪: জমে উঠেছে ৩ নারী প্রার্থীর ভোট যুদ্ধ
নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) আসনে তিন নারী প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচনী লড়াই জমে উঠেছে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রতিটি রাজনৈতিক দল থেকে ৩০ ভাগ নারীকে মনোনয়ন দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বিভিন্ন সময় নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যাপ্ত পরিমাণ নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে প্রতিটি দল অনেকটাই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন বলে সচেতন মহলের ধারণা।
নেত্রকোনা জেলার ৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে নেত্রকোনা-৩ (আটপাড়া-কেন্দুয়া) আসনে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য নূরুল আমিন তালুকদারের মৃত্যুর পর ২০০৩ সালের উপনির্বাচনে প্রথমবার তার স্ত্রী খাদিজা আমিনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুল মমিনের মৃত্যুর পর তার সহধর্মিনী রেবেকা মমিনকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি এ আসন থেকে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এমপি নির্বাচিত হন। এবারও তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
একই আসন থেকে ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে লুৎফুজ্জামান বাবর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি দুটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। এ আসনে তার পরিবর্তে এবার তার সহধর্মিনী তাহমিনা জামান শ্রাবণীকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
এ আসনে আরেক নারী প্রার্থী হলেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য এবং গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক কমরেড জলি তালুকদার।
প্রতীক বরাদ্দের পরপরই তিন নারী প্রার্থীই পথসভা, কর্মীসভা ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিন নারী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরাও সাধারণ ভোটাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করছেন। এই প্রথম এক আসনে তিন নারী প্রার্থীর নির্বাচনী লড়াই এই আসনের ভোটারদের ছাড়াও জেলাবাসীর মাঝে ব্যাপক কৌতুহল সৃষ্টি করেছে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেবেকা মমিন ভোটারদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, নির্বাচনী পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর। যেখানে যাচ্ছি সেখানেই স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি। আমি ১০ বছর ধরে এ আসনের এমপি হিসেবে জনগণের পাশে ছিলাম। আমি হাওরাঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন এবং হাওরবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে যে অবদান রেখেছি এতে আশা করি, জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে পুনরায় এমপি নির্বাচিত করবেন।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাহমিনা জামান শ্রাবণীর কাছে একই প্রশ্ন করলে তিনি জানান, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। আমার স্বামী (লুৎফুজ্জামান বাবর) এবং আমার জনপ্রিয়তা দেখে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ঈর্ষানিত হয়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাঁধা সৃষ্টি করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় ৬ শতাধিক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরো সহস্রাধিক নেতাকর্মীর নামে ৩টি গায়েবি মামলা দায়ের করে নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হানা দিচ্ছে এবং গণগ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে নেতাকর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে ভোটাররা যদি ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে এবং নিরাপদে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তাহলে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী জলি তালুকদার জানান, নির্বাচন করার কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা রাতের আঁধারে আমার পোস্টার ছিড়ে ফেলছে। দলীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমার গণসংযোগে হামলা চালিয়ে আমিসহ ৭ জন নেতাকর্মীকে আহত করেছে। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন এদের ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হতে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।