চুন্নু ও ফারুকের আসনে আ.লীগের মনোনয়ন ফরম নিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতির শ্যালক

  • কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মজিবুল হক চুন্নু (জাপা), ড. ওসমান ফারুক (বিএনপি)

মজিবুল হক চুন্নু (জাপা), ড. ওসমান ফারুক (বিএনপি)

কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আ.ন.ম নৌশাদ খান, তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতির শ্যালক।

শনিবার (১৮ নভেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরুর প্রথম দিনই তিনি তা সংগ্রহ করেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু। আর বিএনপি থেকে এ আসনে একাধিকার প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন সাবেক মন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক। ড. ওসমান ফারুকের পিতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ড. ওসমান গনি ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এ আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

করিমগঞ্জ ও তাড়াইল উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ -৩ আসনটি আওয়ামী লীগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন। অতীতে এ আসনে বিএনপি বা জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে আসছে। কিশোরগঞ্জের অন্যান্য আসনে আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে বিজয়ী হলেও এ আসনটি দলের হাতছাড়া রয়েছে বহুবছর ধরেই।

উল্লেখ্য, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী থাকলেও কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কোনও প্রার্থী নেই। উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন স্থানীয় নেতা নির্বাচনে আগ্রহ প্রকাশ করলেও সমঝোতার কারণে তা জাতীয় পার্টির ভাগে পড়ে। এবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী বোঝাপড়া হলে তা জাতীয় পার্টি পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে, বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে এবং ড. ওসমান ফারুক প্রার্থী হন, তাহলে 'টাফ ফাইট' হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে স্থানীয় সূত্রগুলো।

বিজ্ঞাপন

তবে বিএনপি নির্বাচনে না আসা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে ড. ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলার কারণে তিনি নির্বাচনে অবতীর্ণ হবেন না বলে স্থানীয় বিএনপির নেতারা মনে করেন। বার্তা২৪.কম'কে তারা জানান, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হলে তিনি সঙ্গোপনে দেশ ছেড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সব ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

এর আগে, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বিএনপি নেতা ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত চলছে বলে জানিয়ে ছিলেন তদন্ত সংস্থার প্রধান আব্দুল হান্নান খান।

জানা যায়, একাত্তরে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত করতে গিয়ে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষকের নাম পাওয়া যায়। যারা স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে ড. ওসমান ফারুকের নামও রয়েছে। তখন তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টার দায়িত্ব পাওয়া ওসমান ফারুকের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় আর তখনই তিনি দেশত্যাগ করেন।

ড. ওসমান ফারুক বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার চাকরি ছেড়ে ১৯৯১ সালে দেশে ফিরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ড. ওসমান ফারুক ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সরকারি বাসায়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গোপনে স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তিনি পাকিস্তানি সৈন্যদের তথ্য প্রদানসহ সেনা কর্মকর্তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। এ ছাড়া আলবদর বাহিনী গঠনে গোপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহযোগিতা করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে ড. ওসমান ফারুক এবং তার এক ভগ্নিপতিসহ ১১ শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। সেই রিপোর্টের সূত্র ধরেই তদন্তে নামে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত সংস্থা।

ড. ওসমান ফারুকের ছোট ভাই মার্কিন নাগরিক ড. ওসমান সিদ্দিকী মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া সাকা চৌধুরীর মামলা চলাকালে তার পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেয়ার জন্য এফিডেভিট করে ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল তার আবেদন গ্রহণ করেননি।