অগ্নিপরীক্ষায় কন্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম!
সিংগাইর-হরিরামপুর এবং মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে মানিকগঞ্জ-২ নির্বাচনী আসন গঠিত। এই আসনে এবারো নৌকা প্রতীকে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন টানা দু’বারের সংসদ সদস্য কন্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। তবে এবারের ভোটযুদ্ধে মমতাজ বেগম তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে পারেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও নৌকা প্রতীকের মমতাজ বেগমকে লড়তে হচ্ছে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট নয়জনের সঙ্গে। যার মধ্যে স্বতন্ত্র হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে তিনজন। তারা সকলেই আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা ও সমাজসেবক হিসেবে এলাকায় ব্যাপক পরিচিত। নির্বাচনের আগে থেকেই মাঠ পর্যায়ে সরগরম রয়েছে এসব প্রার্থীরা।
নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেতে সিংগাইর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন মুশফিকুর রহমান হান্নান। নৌকা প্রতীক না পেয়ে তিনি লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগসহ মানিকগঞ্জ ২ আসনের আওয়ামী লীগ পরিবারের ভোট প্রত্যাশায় কেটলি প্রতীকে প্রচার প্রচারণা করে যাচ্ছেন এই নেতা।
নির্বাচনী মাঠে মোড়া প্রতীকে সরব রয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান বর্ষীয়ান এই নেতা। তবে জোটগত সিদ্ধান্তের কারণে লাঙল প্রতীকের জন্য এই আসন ছেড়ে দিতে হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংসদ সদস্য হিসেবে তাকে দেখতে চায় বলে দাবি করেন এই নেতা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু। স্বতন্ত্র এই প্রার্থীর কব্জায় রয়েছে নির্বাচনী এলাকার বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। নির্বাচনী এলাকায় বিশিষ্ট দানবীর হিসেবে পরিচিত টুলুর সঙ্গে মমতাজ বেগমের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে এলাকায় রব উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল বর্ষীয়ান নেতা সর্ম্পকে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে বিপাকে পড়েছেন মমতাজ বেগম। এছাড়াও হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের সঙ্গে তার প্রকাশ্য বিরোধ রয়েছে। সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিকে কেন্দ্র করেও মনোমালিন্য রয়েছে সিংগাইরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য প্রচার প্রচারণায় দলীয় কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় সিংগাইর-হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে ভোট চাচ্ছেন নিয়মিত। এতে করে নৌকার ভোট কমে আসছে। যে কারণ মমতাজ বেগমকে এবার অগ্নিপরীক্ষার মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে বলে মন্তব্য করেন নেতাকর্মীরা।
হরিরামপুর উপজেলার একাধিক ভোটারের সঙ্গে আলাপ হলে তারা বলেন, প্রতিনিয়ত পদ্মা নদীর ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে হরিরামপুর উপজেলার মানচিত্র। যে কারণে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য একজন পরিচ্ছন্ন নেতা নির্বাচিত করবেন তারা। তাছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও আওয়ামী লীগের লোক। তাদেরকে ভোট দিতেও কোন বাধা নেই। কাজেই এলাকার উন্নয়নে কাজ করবে এমন প্রার্থীকেই তারা ভোট দিয়ে সংসদে পাঠাবেন বলে মন্তব্য সাধারণ ভোটারদের।
নির্বাচন বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু বলেন, করোনাকালে এলাকার নেতাকর্মীরা যখন লাপাত্তা ছিল তখন তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের মাঝে। নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি গ্রাম-মহল্লায় ব্যক্তি অর্থায়নে তিনি ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। যে কারণে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন বলে জানান।
এসব বিষয় পাত্তা না দিয়ে নৌকা প্রতীকের মমতাজ বেগম বলেন, আওয়ামী লীগ পছন্দ করা পরিবারের লোকজন কখনোই নৌকার বাইরে ভোট দিবে না। শেখ হাসিনার উন্নয়নকে বহমান রাখতে নৌকার কোনো বিকল্প নেই। যে কারণে এবারো তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবির্ক বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আমিনুর রহমান মিঞা বলেন, এই আসনে মোট ১০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। নিজ নিজ প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই প্রার্থীরা শান্তিপ্রিয় পরিবেশে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মানিকগঞ্জ-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৮৯৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৩ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৩২ হাজার ১১৩ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ৩ জন।