ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন

৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে: সিইসি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ১শ ৫৬টি উপজেলায় ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী হাবিবুল আওয়াল।

মঙ্গলবার (২১ মে) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

ভোট কম পড়ার কারণ জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী হাবিবুল আওয়াল বলেন, আমি নিঃসন্দেহভাবে মনে করি, ৩০ শতাংশ ভোট কখনো উৎসাহ ব্যাঞ্জক মনে করি না।

ভোটের হার কম হওয়ার একটা প্রধানত বড় কারণ হতে পারে, দেশের প্রধান বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রকাশ্য ও ঘোষণা দিয়ে ভোট বর্জন করেছে। জনগণকে ভোট প্রদানে নিরুৎসাহিত করেছে।

বিজ্ঞাপন

গণতান্ত্রিক দেশে পক্ষে বিপক্ষে থাকতে পারে। সংকট হচ্ছে, রাজনীতিতে। রাজনীতি যে সংকট রয়েছে, সেটা কাটিয়ে সুস্থ ধারায় রাজনীতি প্রবাহিত হবে। ভোটাররা উৎসাহিত হয়ে ভোটকেন্দ্রে আসবেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, দ্বিতীয় ধাপে ১শ ৫৬ উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১শ ৩২টি উপজেলায় ব্যালটে ও ইভিএমের ২৪টি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়েছে।

নির্বাচনে তেমন কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। কয়েক জায়গায় শুধু হাতাহাতি হয়েছে। দুই-একজন হয়ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য কোনো সহিংসতা হয়নি। নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পূর্ণ হয়েছে।

নির্বাচনে ভোটের হার আমরা যে পর্যন্ত পেয়েছি, সেটা ৩০ শতাংশের বেশি হতে পারে। তবে নির্ভুল তথ্য বুধবার (২২ মে) পাবেন।

ভোটকেন্দ্রে একজন সাধারণ ভোটার এবং একজন আনসার সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ২ জন নিহত হয়েছেন। তবে সেটি ভোটকেন্দ্রের সহিংসতাকে কেন্দ্র করে নয়। আমরা তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, বিভিন্ন জায়গায় হাতাহাতিতে ৩৪ জনের মতো আহত হয়েছেন। সোমবার রাতে একজন আহত হয়েছেন। যেখানে অনিয়ম হয়েছে, সেখানে প্রশাসন তৎপরতা দেখিয়েছে।

বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনায় ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে। ভোট কারচুপির কারণে ১০ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলার বিষয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আওয়াল বলেন, আজকে কয়েকটি জায়গায় সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।
নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের ঢুকতে বাধা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এই তথ্য আমাদের কাছে নাই। আপনারা লিখিত আমাদের দেন, কোন কেন্দ্রে, কোথায় বাধা দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। আমাদের সহযোগিতা আপনাদের প্রতি থাকবে।

উল্লেখ্য, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ১শ ৫৬ উপজেলায় মঙ্গলবার (২১ মে) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে টানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে।

নির্বাচনে তিনটি পদে এক হাজার ৮শ ২৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে ৬শ ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬শ ৯৩ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫শ ৯৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।

এই ধাপে তিন পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২২ জন প্রার্থী। রাউজান ও কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় সব পদেই প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

১শ ৫৬ উপজেলায় মোট তিন কোটি ৫২ লাখ চার হাজার ৭শ ৪৮ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছেন। ভোটগ্রহণ করা হয় ১৩ হাজার ১৬টি কেন্দ্রের ৯১ হাজার ৫শ ৮৯টি ভোটকক্ষে।

এর মধ্যে ২৪ উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে এবং ১শ ৩২ উপজেলায় ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ করা হয়।

ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের ১৭ থেকে ২১ জনের ফোর্স মোতায়েন করা হয়। এছাড়া উপজেলা ভেদে দুই থেকে চার প্লাটুন বিজিবি নিয়োজিত রয়েছেন। ১৬টি উপজেলায় নিয়োজিত করা হয়েছে অতিরিক্ত ফোর্স।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিন লাখ ৫৩ হাজার ৭শ ২০ জন সদস্য ভোটের দায়িত্বে মাঠে রয়েছেন। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবির ৪শ ৫৮ প্লাটুন, ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ৪৭ হাজার ৮শ ২৯ জন, স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিম হিসেবে পুলিশ ১৯ হাজার ৫৭ জন, র‍্যাবের দুই হাজার ৭শ ৬৮ জন ও আনসার সদস্য রয়েছেন এক লাখ ৯৩ হাজার ২শ ৮৭ জন।

নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালনের জন্য প্রতি তিন ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। প্রতি উপজেলায় নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচারকাজের জন্য ছিলেন একজন করে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভোটের নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণের দু’দিন পর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।

অন্যদিকে, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ গঠন করা হয়েছে বিশেষ টিম। রয়েছে মাঠ পর্যায় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মনিটরিং ও সমন্বয় সেল। এ সেল যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। ইতোমধ্যে, যান চলাচলও সীমিত করা হয়েছে ভোটের এলাকায়।

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর এর আগে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করবে। ভোটাররাও আগের নির্বাচন যেহেতু শান্তিপূর্ণ হয়েছে, তাই দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারবেন।

দেশের ৪শ ৯৫টি উপজেলার মধ্যে ৪শ ৭৬টি উপজেলায় চার ধাপে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। গত ৮ মে প্রথম ধাপে ১শ ৩৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়েছে। অন্যগুলোতে আগামী ২৯ মে ও ৫ জুন ভোটগ্রহণ করা হবে। কয়েকটি উপজেলার মেয়াদ পূর্তি না হওয়ায় ভোটের তফসিল এখনো দেয়নি ইসি।