দুই সিটিতে নির্বাচনের ‘ঢাক ঢাক গুড় গুড়’
২০২০ সালের শুরুতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে বছরের শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের মনোভাব নেতিবাচক। যথাসময়ে নির্বাচন হোক আর না হোক দুই সিটির নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যেই ‘ঢাক ঢাক গুড় গুড়’ শুরু হয়েছে।
এরইমধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়ররা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পুনরায় প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশায় নগরবাসীর ভোট চাইতে শুরু করেছেন। থেমে নেই দুই সিটির ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। তারাও নিজ নিজ ওয়ার্ডে পোস্টার-লিফলেট দিয়ে এলাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী জানুয়ারি মাসে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভোট হবে। সে হিসেবে চলতি সপ্তাহের যে কোনদিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার কথা। গত ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্তই জানানো হয়।
ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হলে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ছাড়াই করতে হবে ভোট। সে ক্ষেত্রে দুই সিটির প্রায় দুই লাখ নাগরিক ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। যেহেতু সরকারের মনোভাব জানুয়ারিতে নির্বাচনে না যাওয়া তাই এ ইস্যুতেও আটকে যেতে পারে নির্বাচনী হাওয়া।
আগামী নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে অনেকের নাম শোনা গেলেও ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান মেয়রদেরই টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশি। তবে পরিবর্তন চাইছেন অনেকেই। ঢাকা দক্ষিণের দায়িত্ব নিতে চান সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম। এজন্য তার কর্মী-সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে।
নিজের শক্তি জানান দিতে সম্প্রতি তুচ্ছ ইস্যুতে পলাশীর আলিম উদ্দিন খেলার মাঠ উদ্বোধন নিয়ে তুলকালাম করেছেন সংসদ সদস্য হাজী সেলিম। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিকের গায়ে হাত তোলেন তিনি। এ নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও হয়। ওই অনুষ্ঠানেই বেশ কয়েকজনের কাছে জানা যায় আগামী নির্বাচনে ডিএসসিসি’র প্রার্থী হতে চান হাজী সেলিম।
সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও তার মেয়র প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। এরইমধ্যে যারা যারা আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন তাদের অতীত রাজনীতি, দলীয় কর্মকাণ্ড, দলের প্রতি আনুগত্য—এ সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
যদিও ঢাকার দুই মেয়র আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। মেয়র সাঈদ খোকনের আসন নিয়ে একটু জটিলতা থাকলেও দীর্ঘ মেয়াদের পরীক্ষার জন্য পার পেয়ে যেতে পারেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। সরকার চাইছে তিনি যেহেতু অল্প সময় সুযোগ পেয়েছেন তাই আগামী নির্বাচনেও তাকে প্রার্থী করে দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করার সুযোগ করে দিতে।
মেয়র সাঈদ খোকন সম্পর্কে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নানা সমালোচনা থাকলেও প্রয়াত বাবা মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ইস্যুতে ছাড় পেতে পারেন তিনি। তবে সবকিছু নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তিনি যাকে চাইবেন তিনিই হবেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।
এরইমধ্যে মেয়র সাঈদ খোকন ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় করে আগামী নির্বাচনে পাশে থাকার জন্য আহ্বান জানিয়ে বুঝিয়ে দিলেন নির্বাচন আসন্ন। এখন ডিএসসিসি’র পক্ষ থেকে যেসব অনুষ্ঠান নেওয়া হচ্ছে তার মুখ্য উদ্দেশ্য নির্বাচনী শো ডাউন। বিভিন্ন মহলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নিজের ও কাউন্সিলরদের পক্ষে সমর্থন চাওয়া।
তবে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নগরবাসীর কাছে আবার সুযোগ চাই। যদি আমার দল, দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে রাজধানীর চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ সম্পন্ন করে নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে আরও নতুনভাবে নগরকে সাজাতে চাই।
সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আমরা মনে করি এটাই উপযুক্ত সময়। শীতের সময় নির্বাচনের জন্য ভালো সময়। তাছাড়া ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা তাই এটাই বেস্ট সময়। এখন নির্বাচন কমিশন যখন সিডিউল ঘোষণা করবে তখনই নির্বাচন হবে। তবে দল হিসেবে আমরা প্রস্তুত।
এবার প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমাদের সভাপতি বলতে পারবেন। তবে আমাদের কাছে জানতে চাইলে মতামত দেব। প্রার্থী তো পরিবর্তন হতেই পারে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম সভা হয় ওই বছরের ১৪ মে। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম সভা হয় ওই বছরের ১৭ মে। সেই হিসাবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে।
স্থানীয় সরকার সিটি কর্পোরেশন আইন-২০০৯ অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। আর সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ হচ্ছে কর্পোরেশনে প্রথম সভার তারিখ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর।