ভোটের তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে বৈঠকে বসছে ইসি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

সরস্বতী পূজার কারণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

জানা গেছে, রোববার (১২ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে তিনটায় ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কমিশনারদের নিয়ে বৈঠকে বসছে কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন চার নির্বাচন কমিশনার।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনের তারিখ পেছাতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দাবির পর দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চিঠি দেয় জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা। এরই প্রেক্ষিতে ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনা করতে কমিশনকে চিঠি দেন দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন।

তবে ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, আমরা সরকারি ছুটির যে তালিকা সেটি দেখেই তারিখ নির্ধারণ করেছি, সেদিন কোনো সরকারি ছুটি নেই। নির্বাচন কমিশনের তারিখ পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই, কেবিনেট যদি তারিখ পরিবর্তন না করে কমিশনের কিছুই করার নেই। কেবিনেট যেভাবে তারিখ নির্ধারণ করবে কমিশন সেভাবেই সিদ্ধান্ত নেবে।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার ঘোষিত সরস্বতী পূজার ছুটির তারিখ ২৯ জানুয়ারি। আমরা তো ওইভাবেই ভোটের তারিখ নির্ধারণ করেছি। এখন আমাদের সামনে আর ভোট পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। সামনে এসএসসি পরীক্ষা। সব মিলিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ ছাড়া আমাদের ভোট পেছানোর কোনো চিন্তা নেই।

ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ভোট পেছানোর সুপারিশ করে একটি চিঠি দিয়েছেন। সম্প্রতি আবদুল বাতেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বরাবর পাঠিয়েছেন। চিঠির ব্যাপারে বিষয়টি আমরা নির্বাচন কমিশনারদেরক জানিয়েছি। তবে কমিশন ভোট পেছানোর কোনো চিন্তা করছে না। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে সরকার নির্ধারণ করেছে ২৯ জানুয়ারি। সে অনুযায়ী সব হওয়ার কথা।‘

অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, এক রিটের কারণে হাইকোর্টের একটি আদেশ দেওয়ার কথা ছিল আজ। হাইকোর্ট যদি কোনো আদেশ দেন তাহলে ভিন্ন কথা। তবে পূজার কারণে ভোট পেছানোর সুযোগ নেই।

গত ৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা এক চিঠিতে পূজার জন্য ভোট পেছাতে দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। ওই পত্র আবেদনের ভিত্তিতেই নির্বাচন পেছানোর জন্য ১০ জানুয়ারি পত্রযোগে নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে- ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখের ১৭.০০.০০০০.৩৪.৩৭.০০৯.১৯-৪৮৪ নং প্রজ্ঞাপনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ০১-২৫ নং ওয়ার্ড এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর ০১.৭৫ নং ওয়ার্ডের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ জানুয়ারি ২০২০ তারিখ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু আগামী ৩০/০১/২০২০ তারিখে সনাতন ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব বিদ্যার দেবী শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত পূজা লগ্ন বা তিথির মধ্যে সম্পন্ন করতে হয় বিধায় পূজার তারিখ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এর অধিভুক্ত এলাকাসমূহে ব্যাপক সংখ্যক সনাতন ধর্মালম্বীদের বসবাস। এখানে সনাতন ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ পূজা মণ্ডপ রামকৃষ্ণ মিশন অবস্থিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ও উক্ত এলাকাতে অবস্থিত। উক্ত রামকৃষ্ণ মিশন ও জগন্নাথ হলে অত্র এলাকার আশপাশের অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে পূজা উপলক্ষে প্রচুর সনাতন ধর্মালম্বী লোকের সমাগম ঘটে। এছাড়া নির্বাচন উপলক্ষে যে সকল প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যেহেতু পুরাতন ঢাকা একটি ঘন জনবসতি এলাকা। সেহেতু উক্ত এলাকার সনাতন ধর্মালম্বীদের এসকল প্রতিষ্ঠান ছাড়া উক্ত পূজা পালন করা অনেকাংশেই সম্ভব হবে না।’

‘এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হল শাখা নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের জন্য একটি পত্র অত্র কার্যালয়ে দাখিল করেছে। সার্বিক বিবেচনায় সনাতন ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় কাজ সুচারুরূপে পালন করার স্বার্থে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করার সুপারিশের যৌক্তিকতা বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত আবেদন পত্রটি মহোদয়ের নিকট প্রেরণ করা হলো।’

চিঠির অনুলিপি তিনি ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশ কমিশনার, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্ম সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের পাঠিয়েছেন।