ভোটকেন্দ্র পাঁচ দিন নিরাপত্তা বলয়ে রাখতে চায় ইসি
আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে ও পরে সর্বমোট পাঁচদিন ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা বলয়ের পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভোটগ্রহণের দিন এবং তার আগে ২ দিন এবং পরের একদিন মোট ৪ দিনের জন্য নিয়োজিত থাকবে। তবে অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপি ৫ দিনের জন্য নিয়োজিত থাকবে। অর্থাৎ ভোটের পাহারায় বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের পাঁচ দিন (৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) নিয়োজিত রাখার প্রস্তাব করবে ইসি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনাসহ এ সংক্রান্ত আটটি এজেন্ডা নিয়ে বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকাল ৩টায় বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন। ওই বৈঠকে নির্বাচনের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, পুলিশ, আনসার, র্যাব ও বিজিবি’র মহাপরিচালক, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধান এবং দুই সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থাকতে বলেছে ইসি।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, নির্বাচন পূর্ব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে করণীয় স্থির করা, চিহ্নিত অপরাধী ও নির্বাচন বিঘ্ন সৃষ্টকারী সম্ভাব্য দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া বিষয়ে আলোচনা হবে।
এছাড়াও নির্বাচনী সরঞ্জাম পরিবহন ও সংরক্ষণে নিরাপত্তা বিধান, নির্বাচনী আইন এবং আচরণ বিধিসহ বিভিন্ন নির্দেশনা সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালনের পরিবেশ সুগম করা, নির্বাচনী এলাকায় ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বিষয়ক কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণের বিষয়ও আলোচ্যসূচিতে আছে।
বৈঠকের আলোচনার জন্য তৈরি করা ইসি সচিবালয়ের প্রস্তাবনায় সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৬ জন করে এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েনের প্রস্তাব থাকছে। সাধারণ কেন্দ্রে একজন এসআই অথবা এএসআই’র নেতৃত্বে চারজন পুলিশ সদস্য, অস্ত্রসহ আনসার দুজন ও ১০জন অঙ্গীভূত আনসার মোতায়েন করা হবে।
আর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে পুলিশের সংখ্যা দুইজন বেশি থাকবে। আর ভোটকেন্দ্রের বাইরে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করবে। সেই হিসাবে দুই সিটির ভোটে অর্ধলক্ষাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবে নির্বাচনী দায়িত্বে।
ভোটকেন্দ্রের বাইরের নিরাপত্তা বিষয়ে কার্যপত্রে ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডে পুলিশ ও এপিবিএন সমন্বয়ে ৫৪টি মোবাইল ও ১৮টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র্যাবের ৫৪টি টিম ও ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৭৫টি ওয়ার্ডে পুলিশ ও এপিবিএন সমন্বয়ে ৭৫টি মোবাইল ও ২৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র্যাবের ৭৫টি টিম ও ৩৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সংখ্যা কম-বেশি করার সুযোগও থাকবে।
নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভোটের দু’দিন আগে থেকে পরের দিন পর্যন্ত চার দিন অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোতায়েন থাকবে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। এক্ষেত্রে প্রতিটি সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে পুলিশ ও র্যাবের প্রয়োজনীয় সংখ্যক টহল দল এবং ৩-৪ প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স সংরক্ষিত রাখা হবে।
নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালন ও অপরাধের বিচার কাজের জন্য দুই সিটিতে ১২৯জন নির্বাহী হাকিম ও ৬৪ জন বিচারিক হাকিম নিয়োগ করা হবে। ডিএনসিসিতে ৫৪ জন ও ডিএসসিসিতে ৭৫ জন নির্বাহী হাকিম আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকবেন।
অন্যদিকে, উত্তরে ২৭জন ও দক্ষিণে ৩৭জন বিচারিক হাকিম দায়িত্ব পালন করবেন ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটে এখন পর্যন্ত সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েনের প্রস্তাব রাখছে ইসি। তবে পুলিশ জানিয়েছে প্রয়োজন অনুযায়ী তারা ফোর্স দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
এক্ষেত্রে সাধারণ কেন্দ্রে ২০ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২২ জন ফোর্স মোতায়েনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে কমিশন প্রয়োজন অনুযায়ী ফোর্স মোতায়েনের চাহিদা জানাবে এবং সে অনুযায়ী কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫৪টি ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮টি, ভোটকক্ষ ৭ হাজার ৮৪৬। অন্যদিকে, দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র ১ হাজার ১৫০টি এবং ভোটকক্ষ ৬ হাজার ৫৮৮টি। দুই সিটিতে ভোটকেন্দ্র ২ হাজার ৪৬৮টি।
উল্লেখ্য, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।