ভোটের দিন বন্ধ থাকবে নৌযান
উল্লেখ্য, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
ইসি গঠনে সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান (সিইসি) করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হয়েছে। যারমধ্যে আছেন চারজন নির্বাচন কমিশনার।
আগামী রোববার (২৪ নভেম্বর) নবনিযুক্ত সিইসিসহ চার নির্বাচন কমিশনার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেবেন। ওইদিন দুপুর দেড়টায় নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও নবনিযুক্ত ৪ কমিশনারকে শপথ পাঠ করাবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া আরেকটি প্রজ্ঞাপনে চার নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়।
নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনাররা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব বেগম তহমিদা আহ্মদ এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সংবিধান ও আদালতের মাধ্যমে অগাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই অগাধ ক্ষমতা প্রয়োগে সমস্যা ছিলো। এজন্য এই সমস্যা দূর করতে হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
বুধবার (২০ নভেম্বর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সংস্কার কমিশনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিমের নেতৃত্বে ইসির প্রতিনিধি দল মতবিনিময় করে এ প্রস্তাব দেয়।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিবের নেতৃত্ব কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করেছি। উনারা আগে নির্বাচন করেছেন, ভবিষ্যতেও করবেন। উনারা অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। কী বিষয়ে আমাদের মনযোগ দেওয়া দরকার এবং অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার, সে মতামত নিয়েছি আমরা। খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। উনারা অনেকগুলো বিষয় আলোকপাত করেছেন। সুস্পষ্ট বিষয়ে আমাদের তারা লিখিত দেবেন। আলোচনা ফলপ্রসু হয়েছে।
সুজন সম্পাদক বলেন, উনারা আইন-কানুন, বিধি-বিধান যেগুলো আরো শক্তিশালী করা দরকার, কমিশনের কার্যকারিতা কিভাবে বাড়ানো যায়, সেগুলোর ব্যাপারে পরামর্শ ছিল। মাঠ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ যারাই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করে তারা যেন আরো সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, একটা বিষয় সুস্পষ্টভাবে এসেছে। সেটা হলো আমাদের আইন-কানুন বিধি-বিধানের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, সেগুলো দূর করা দরকার। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রয়োগ। নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান ও আদালতের মাধ্যমে অগাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আপিল বিভাগের একটা রায়ে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের অন্তর্নিহীত ক্ষমতা আছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের খাতিরে তারা বিধি-বিধানের সঙ্গে সংযোজনও করতে পারে। অগাধ ক্ষমতা দেওয়া ছিল, তবে এটা প্রযোগের সমস্যা ছিলো। এই সমস্যাটা দূর করতে হবে।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মোহাম্মদ আবু হেনা বলেছেন, যোগ্য সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার দরকার। তা না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সেই সাথে আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়নও দরকার। বর্তমান সিস্টেম পরিবর্তন না করেও কার্যকর নির্বাচন করা সম্ভব।
সোমবার (১১ নভেম্বর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংস্কার কমিশনের সাথে বৈঠকে বসেন মোহাম্মদ আবু হেনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
কী মতামত দিয়েছেন এমন প্রশ্নে সাবেক সিইসি আবু হেনা বলেন, কমিশনের আমন্ত্রণে এসেছি। আমি ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করেছি। এই সুযোগে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। আমাদের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে যারা আহত, নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। আগামী নির্বাচন নিয়ে আমার সুপারিশ কিছু আছে। আমি তাদের বলেছি, আশা করি তারা বিবেচনা করবেন। আমার সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমি চাই দেশে আগামীতে যে নির্বাচন হবে, সেগুলো সাধারণ বা অন্যান্য নির্বাচন যাই হোক, সেগুলো সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় এবং দেশের কল্যাণ যেন হয়।
তিনি বলেন, আইন যতই ভালোই হোক না কেন, প্রয়োগ না হলে সুফল আসে না। যত রিফর্ম করেন না কেন, নির্বাচন কমিশনে যোগ্য মানুষ দরকার, যোগ্য কমিশন দরকার। যোগ্য সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনার দরকার। তারা যদি যোগ্য না হন তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আর আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন দরকার। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রার্থী নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার দরকার। ওপর থেকে আরোপ করা নয়। নিচ থেকে উঠে আসতে হবে। ভোটের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী দিতে হবে। এটা যদি সবগুলো দল বাস্তবায়ন করে তবে দেশের জন্য কল্যাণ হবে।
আবু হেনা বলেন, আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে- নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই। এই সিস্টেমই কার্যকর হতে পারে। নতুন কোনো সিস্টেম দরকার আছে বলে মনে করি না। যে সকল দেশে সংখ্যানুপাতিক সিস্টেম আছে, সেই সব দেশে যে এটা ভালোভাবে চলছে এটা মনে করবেন না। এটা আমি জানি। আমাদের যে সিস্টেম আছে, যেটা মানুষের কাছে পরীক্ষিত এই সিস্টেমই কার্যকর করে তোলা দরকার। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সংসদ কয় কক্ষের হবে এটা দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়া ভালো।
সাবেক এই সিইসি বলেন, আইন খালি সংশোধন করলেই হয় না। আইনের প্রয়োগ দরকার যোগ্য লোককে দিয়ে। কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই সুনাম আছে এরকম লোক দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিটমেন্ট থাকলে সেটা করা যায়।
বদিউল আলম বলেন, উনি যা বলেছেন আমরা এতে উৎসাহিত হয়েছি। উনি বলেছেন আমরা সঠিক পথেই আছি। উনার অভিজ্ঞতার আলোকে সঠিক আছে। আমরা আইন-কানুন গভীরভাবে পর্যালোচনা করছি। আমাদের অগ্রগতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। দলগুলোর কিছু মতামত পেয়েছি। গণমাধ্যমের সঙ্গেও বসবো।
তিনি বলেন, অনেক ধরনের মতামত আছে। এক্ষেত্রে অনেক মতামত বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট কমিশনের সঙ্গেও বসবো বলে জানান বদিউল আলম মজুমদার।
নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় না করলেও দলগুলোর কাছ থেকে সুস্পষ্ট মতামত নেবে সংস্কার কমিশন।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সংস্কার কমিশনের বৈঠক শেষে এ কথা বলেন বদিউল আলম মজুমদার।
বদিউল আলম মুজমদার বলেন, সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নয়। নির্বাচন ব্যবস্থা বা নির্বাচন কার্যক্রম সুন্দরভাবে করার জন্য আমাদের কাজ হলো কিছু সুপারিশ করা। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই আমাদেরকে সুপারিশের সময় দেওয়া হয়েছে। আমরা এর মধ্যেই সুপারিশ করব।
আজ সার্চ কমিটির প্রজ্ঞাপন হয়েছে, আপনারা সার্চ কমিটির সংস্কারের প্রস্তাব দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার আগেই সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে দিয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমানে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন, আর নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। সার্চ কমিটি তার নিজস্ব গতিতে কাজ করবে এবং আমরা আমাদের মতো কাজ করব। আমরা যে প্রস্তাবগুলো দিব সেই প্রস্তাবগুলো কিছু বাস্তবায়ন সরকার এবং কিছু করবে নির্বাচন কমিশন তাই সার্চ কমিটির সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা নেই। প্রবাসী ভোটাররা যেন ভোট দিতে পারে সেই বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি।
বৈঠকে সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ, জেসমিন টুলী, ড. মো. আব্দুল আলীম, ডা. জাহেদ উর রহমান, মীর নাদিয়া নিভিন, মোহাম্মদ সাদেক ফেরদৌস, সদস্য ও ছাত্র প্রতিনিধি সাদিকাল আরমান, ইসির সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন এবং ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান উপস্থিত ছিলেন।