শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় মরিয়া প্রার্থীরা
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই শেষ হচ্ছে আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। শেষ মুহূর্তের গণসংযোগে ব্যস্ত আওয়ামী লীগের দক্ষিণের প্রার্থী ফজলে নূর তাপস ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা ইশরাক হোসেন। পিছিয়ে নেই উত্তরের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম এবং বিএনপির তাবিথ আউয়ালও। এছাড়া অন্যসব মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলর প্রার্থীরাও শেষ মুহূর্তের প্রচারে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রার্থীদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই।
নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সে হিসাবে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাত ১২টায় শেষ হবে সব ধরনের প্রচারণা। নির্বাচনী এলাকায় কোনো ব্যক্তি কোনো জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান করা এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা সংগঠিত বা তাতে যোগদান করতে পারবেন না।
সময় ঘনিয়ে আসায় নির্বাচনী প্রচারণায় কোন ঘাটতি রাখতে চান না প্রার্থীরা। তাই নিজেদের সবটুকু উজাড় করে গণসংযোগ ও প্রচারণায় নেমেছেন। ভোটারদের সমর্থন আদায়ে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। এতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে নগরজুড়ে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল থেকেই দুই সিটিতে চার হেভিওয়েট প্রার্থী ও তার সমর্থকদের শেষ সময়ের নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। দক্ষিণ সিটির গোপীবাগে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেয়র পদ প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
দুপুর ১২টা থেকে তার প্রচারণা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটির নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা ট্রাক-পিকআপ ও মোটরসাইকেলযোগে মিছিল করে এখানে এসে উপস্থিত হন।
দুপুর সাড়ে ১২টায় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। গণসংযোগের আগে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবে এক সংক্ষিপ্ত পথসভায় তাপস বলেন, নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার আজ শেষ দিন। আমরা যে ইশতেহার ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি সেই প্রতিশ্রুতি ও ইশতেহার জনগণ গ্রহণ করেছে। এবারের নির্বাচনে শেষবারের মতো আপনাদের কাছে আসার সুযোগ হচ্ছে, ভোট চাওয়ার সুযোগ হচ্ছে। উন্নত ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আপনাদের কাছে আসার আজকেই শেষ সুযোগ,আমি সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আপনাদের কাছে এসেছি আপনারাও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে উন্নত ঢাকা বিনির্মাণের সুযোগ নিন। বক্তব্যে তিনি, গোপীবাগ এলাকায় দল-মত নির্বিশেষে সবার কাছে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র পদপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন সকালে কোন ধরনের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ না করলেও তার কর্মী ও সমর্থকরা ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন।
ইশরাকের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেছেন অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার স্ত্রী ও ইশরাক হোসেনের মা। এসময় গণসংযোগ করেছেন ইশরাক হোসেনের ছোট ভাইও।
তবে সকালে প্রচারণায় না থাকলেও বিকেল তিনটা থেকে শেষ সময়ের প্রচারণায় সরাসরি অংশগ্রহণ করবেন ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তিনি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করার আগে নির্বাচনী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দলীয় জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মী ও মিত্র স্থানীয় কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলে জানা গেছে।
শেষ সময়ের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থীরাও।
এদিন সকাল দশটায় রাজধানী ভাষানটেক বাজার এলাকায় ভাষানটেক বস্তির সামনে থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নৌকা মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।
এসময় তার সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন এক ঝাঁক চলচ্চিত্র ও নাট্যশিল্পী। শেষ দিনের প্রচারণায় এই প্রার্থী বলেন, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে ভাষানটেক বস্তি থেকে আর একটি মানুষকেও উচ্ছেদ করা হবে না। বস্তিতে যারা থাকেন তারাও মানুষ। আমাদের কাজ হচ্ছে মানুষের মৌলিক চাহিদা ও সুবিধাগুলো তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। তাই কথা দিচ্ছি, আপনাদের ভোটে যদি মেয়র নির্বাচিত হতে পারি তাহলে আগে পুনর্বাসনে ব্যবস্থা করব তারপর বস্তি খালি করা হবে।
বক্তব্যে তিনি প্রচারণার শুরু দিন দেকে আজকে শেষ দিন পর্যন্ত গণসংযোগ ও প্রচারণায় গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
ভাষানটেক এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে রাতের শেষ সময় পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন বলে জানান মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।
এদিকে, জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে শেষ সময়ের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপরেশনের বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল।
মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষে দেশবাসী আগামী ৪৮ ঘণ্টা নির্বাচন কমিশনের দিকে তাকিয়ে থাকব। এখনো নির্বাচনের দিন ঘিরে শঙ্কা রয়েছে। পোলিং এজেন্টরা কেন্দ্রে থাকতে পারবে কিনা তা নিশ্চিত নই। ইভিএমের বিষয়টা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা আছে। নির্বাচনে কোন অভিযোগ, সংঘর্ষ আসলে মোকাবেলায় নির্বাচন কমিশন ইতিবাচক প্রস্তুত কিনা? তবে আমরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগুচ্ছি। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার উপর নির্ভর করে নিবার্চন কেমন হবে।
প্রেসক্লাবে সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষ করে তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আরো একটি মতবিনিময় সভায় যোগদান করেন। সবার শেষে কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট এলাকায় গণসংযোগে নামবেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।
এদিকে সব প্রার্থী তাদের গণসংযোগ ও প্রচারণায় সুষ্ঠু, সুন্দর আর স্বাভাবিক একটি নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
শেষ সময়ের প্রচারণা ও ১ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিনকে কেন্দ্র করে নগরজুড়ে চোখে পড়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নগরীর আইন-শৃঙ্খলা ঝুঁকিতে নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
সকালে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজিত সরস্বতী পূজা পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা-রক্ষাকারী বাহিনী পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিয়ন্ত্রণে থাকে। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। আমি মনে করি নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পুরো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সুন্দর রয়েছে।
গত ২২ ডিসেম্বর দুই সিটির তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর ১০ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ দেবার পরে প্রচারে নেমে পড়েন প্রার্থীরা। ইতোমধ্যে নিজের নির্বাচনী ইশতেহারও ঘোষণা করেছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে নিয়েছেন নানা কৌশল। টিভি, রেডিও, পত্রিকায় প্রচার করা ছাড়াও ইউটিউব ও ফেসবুকে প্রচারণা হচ্ছে জোরে সোরে। নানা প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি বিভিন্নভাবে প্রচার করে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা।
দুই সিটি নির্বাচনে ১৩ মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলর পদে প্রায় সাড়ে সাতশ’ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৮টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) গঠিত।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) রয়েছে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড। দুই সিটিতে ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে মোট ভোটার রয়েছেন ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ভোটার রয়েছেন ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি দুই সিটিতে ভোট। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। সম্পূর্ণ ভোটগ্রহণ হবে ইভিএমে।