নির্বাচনের মাঠে জাপাকে পাশে পাননি মিলন
পাশে নেই দল, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে একাই লড়ে গেলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন।
অনেকটা রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের মতো, নেতাকর্মীরা যে যার মতো যে দিকে খুশি কাজ করেছেন। রংপুরের মতো ঢাকা দক্ষিণেও অনেক শীর্ষ নেতা হাত গুটিয়ে বসেছিলেন। কেউ কেউ আবার নিজেদের অনুসারিদের আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন। সিটি নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হলেও কোনো সহযোগিতা পাননি জাতীয় পার্টির একমাত্র মেয়র প্রার্থী।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচন পরিচালনার জন্য সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার নেতৃত্বে গঠিত কমিটির কোন ভূমিকা নজরে আসেনি নির্বাচনের মাঠে। এ কারণে জাতীয় পার্টির এই মেয়র প্রার্থীর হতাশারও শেষ নেই!
সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বার্তা২৪.কমকে বলেন, সবাইকে তো মাঠে পাওয়া যায়নি। আমি প্রচারণার শেষ দিন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে গেছি। সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারলে আমি ভালো ফল আশা করছি। শুধু জাতীয় পার্টির দলীয় ভোটে নির্বাচিত হওয়া সম্ভব নয়। যদি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয় তাহলে লাঙল জয়ী হবে।
জাপার এই মেয়র প্রার্থী বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর হাজারীবাগ, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, বিডিআর কলোনি, জিগাতলা, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুল, বাংলামোটর, মগবাজার, মৌচাক, শাহাজাহানপুর, শান্তিনগর, কাকরাইল, পল্টন, গুলিস্তান, ফকিরাপুল, মতিঝিল, বংশাল, চকবাজার ও রহমতগঞ্জে শেষ দিনের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন।
গণসংযোগকালে ভোটারদের উদ্দেশে সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, লাঙলে ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করলে আপনাদের পরিচ্ছন্ন, দুর্নীতিমুক্ত ও বাসযোগ্য ঢাকা উপহার দেব। অতীতেও মানুষ লাঙলে ভোট দিয়ে সুফল পেয়েছিল। এই মেগা সিটিকে বাসযোগ্য করতে হলে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। নির্বাচিত হলে সব রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে উন্নয়ন কমিটি করা হবে।
তিনি বলেন, যানজট, জলাবদ্ধতা, মশার প্রাদুর্ভাব, অবৈধ দখল, আর্বজনা, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসের ঘাটতি, বছর বছর ট্যাক্স বাড়ানোসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত নগরবাসী। ঢাকাবাসী নিয়মিত ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে গেলেও তারা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। ঢাকা সিটিকে পরিবর্তন করতে হলে সর্বাগ্রে নগর ভবনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে।
সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, ঢাকাবাসী যদি তাদের ভোট দিতে পারে উন্নয়নের চাকাকে সচল করতে নগরবাসী লাঙলে ভোট দেবে। কারণ বড় দুটি দলকে ভোট দিয়ে মানুষ বারবার প্রতারিত হয়েছে।
শেষ দিনের প্রচারণার সময়েও মিলনের সঙ্গে জাপার কোনো কেন্দ্রীয় বা মহানগরের নেতাকে দেখা যায়নি। প্রচার মিছিলে মিলনের দুই ছেলে রাকিব উদ্দিন আবির, সাকিব উদ্দিন শিফান, স্থানীয় জাপা নেতা হাজী জাহিদ হোসেন, মো. খালেক, কামাল হোসেন, মকবুল হোসেন অংশ নেন।
সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলনের প্রচারণায় জাতীয় পার্টির মাত্র দুইজন প্রেসিডিয়াম সদস্যকে মাঝে মধ্যে দেখা গেছে। বিশাল বহরের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতাই দক্ষিণ সিটির বাসিন্দা হলেও একদিনের জন্যও তাদের মাঠে দেখা যায়নি।
ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র প্রার্থী দিয়েছিল জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। কিন্তু উত্তরের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় বাতিল হয়ে যায়। দক্ষিণের প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ কৌশলগত কারণে এতে আগ্রহ দেখায়নি।
মেয়রের পাশাপাশি কাউন্সিলর পদেও জাতীয় পার্টির ভাটার টান লক্ষণীয়। পঁয়ত্রিশ জনের মতো কাউন্সিলর মনোনয়ন দাখিল করলেও শেষ পর্যন্ত ১২ জন মাঠে রয়েছেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা উত্তরে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছি। দক্ষিণে আমাদের প্রার্থী রয়েছে, জয়-পরাজয় জনগণের হাতে নির্ভর করছে। আমরা সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করছি। ফল যাই হোক মেনে নেব।
জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রওশনপুত্র রাহগীর আর মাহি সাদ এরশাদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সেখানে সিনিয়র অনেক নেতা ঘোষণা দিয়ে মাঠের বাইরে থাকেন। অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। কিন্তু তাদের বিষয়ে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দলে নতুন একটি ট্রেন্ড চালু হচ্ছে হাত গুটিয়ে থাকার। এতে খারাপ নজির তৈরি হচ্ছে বলে জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতারা মনে করছেন।