মোশাররফ ভাইয়ের সঙ্গে তুলনা করলে এটি আমার এচিভমেন্ট: রাশেদ সীমান্ত

  • বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রাশেদ সীমান্ত ,ছবি: বার্তা২৪

রাশেদ সীমান্ত ,ছবি: বার্তা২৪


ব্যক্তি জীবনে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের মার্কেটিং ইনচার্জ পদে কর্মরত থাকলেও অভিনেতা হিসাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন রাশেদ সীমান্ত। ২০১৮ সালে বেনা শর্মা রচিত ‘যেই লাউ সেই কদু’ নাটকের মাধ্যমে অভিনয় জগতে যাত্রা শুরু। এ পর্যন্ত তার অভিনীত ১৬টি নাটকই পেয়েছে দর্শকপ্রিয়তা। সম্প্রতি এই অভিনেতা মুখোমুখি হয়েছেন বার্তা২৪.কমের। ময়মনসিংহের শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যানে তার সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছেন উবায়দুল হক।


বার্তা২৪.কম: মার্কেটিং ইনচার্জ থেকে অভিনেতা হয়ে গেলেন কীভাবে?

রাশেদ সীমান্ত: ২০১৮ সালের ঈদুল ফিতরে একটা নাটকের প্লেনিং ছিল আমাদের বৈশাখী টেলিভিশনের। নাটকটা আমরা যাকে নিয়ে করতে চাচ্ছিলাম তাকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। এরপর আমাদের টেলিভিশনের কর্ণধার টিপু আলম মিলন স্যার একদিন আমাকে ডেকে বললেন যে এই গল্পটা তোমাকে করতে হবে। তারপর আমি ‘যেই লাউ সেই কদু’ নামের সেই নাটকটা করি। ওইটাই প্রথম কাজ ছিলো আমার। এটি টিআরপিতে ৭ম অবস্থানে ছিল ৬০০ নাটকের মধ্যে এবং ইউটিউবে ভিউ ৪৮ লাখ ছাড়িয়েছে। এভাবেই শুরু পথচলা। এরপর তো আলহামদুলিল্লাহ বাকিটা সবাই জানেন...

বিজ্ঞাপন

বার্তা২৪.কম: আপনার কি অভিনয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল?

রাশেদ সীমান্ত: অভিজ্ঞতা ছিল দর্শক হিসেবে। নাটক দেখতাম একটুকই, অভিনয়ের আর অন্য কোন অভিজ্ঞতা ছিলো না। কিন্তু অভিনয়টা আমি এনজয় করতাম। আমার কিছু প্রিয় অভিনেতা আছে, তাদের অভিনয় দেখতাম। কিন্তু আমার কোন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না।

বিজ্ঞাপন

বার্ত২৪.কম: তাহলে কেন মনে হল যে আপনি এটা পারবেন ?

রাশেদ সীমান্ত: আমি বৈশাখী টেলিভিশনের প্রি-ভিউ বোর্ডের মেম্বার। আমরা নাটকগুলো দেখতাম, আমরা তো দর্শকের চোখে দেখি। সেখানে ভুল ত্রুটিগুলো ধরতাম। আমি যখন দর্শক তখন অনেক কিছুই ভুল মনে হবে। এটি শুধু নাটকের ক্ষেত্রেই না, খেলার ক্ষেত্রেও দেখবেন যে বিশ্বসেরা ক্রিকেটার বা ফুটবলারদের আপনি ভুল ধরছেন কিন্তু আপনি ওই কাজটি করতে গেলে সেটি খুবই কঠিন হবে। আমরা মাশরাফি-সাকিব এমনকি মেসিরও ভুল ধরি। মেসি পেলান্টি মিস করলো! কিন্তু আপনাকে পেলান্টি দিতে গেলে কিন্তু আপনার হাটু কাঁপবে। তো ওই জায়গাগুলো থেকে আমরা যে বিশ্লেষণগুলো করতাম, সেটি আমাদের টেলিভিশনের যিনি মালিক তিনি বিষয়টি অবজারভেশনে নিয়েছেন যে আমি কোন কোন জায়গাগুলো ধরতাম। ওই জায়গাগুলোতেই আসলে উনি মার্ক করেন এবং মনে করেন যে এবারের কাজটা আমরাই করি কি দাঁড়ায়।

বার্তা২৪.কম: আপনার প্রিয় অভিনেতা কে?

রাশেদ সীমান্ত: মোশাররফ ভাইকে আমার খুব ভাল লাগে। মনে হয় একটা লোক কত প্রতিভা নিয়ে জন্মাতে পারে। ব্যক্তিগতভাবেও আমার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক। এছাড়াও আমাদের প্রয়াত হুমায়ুন ফরিদী ভাইয়ের অভিনয় তো দুর্দান্ত ছিল। জাহিদ হাসান ভাইয়ের অভিনয় ভাল লাগে, তিনি ব্যক্তি হিসেবেও অনেক ভাল।

মোশাররফ করিম ও রাশেদ সীমান্ত

বার্তা২৪.কম: প্রিয় অভিনেতা সেজন্যই কী মোশারফ করিমের সাথে আপনার অভিনয় অনেকটা মিলে যায়...

রাশেদ সীমান্ত: ফলো বলতে পারি না কিন্তু আমি উনাকে খুব পছন্দ করি। আর মোশাররফ ভাই আমার দৃষ্টিতে উনি জন্মগত ভাবেই অভিনেতা। আমার মনে হয় যারা অভিনেতা হয় তাদের জন্মগত ভাবেই গুণাবলি থাকা অত্যাবশ্যকীয়। আপনি শিখে পড়ে একটা জায়গায় যাবেন কিন্তু অভিনেতা হতে হলে আপনার মধ্যে এই জিনিসটি থাকতে হবে। প্রাকৃতিক ভাবেই আপনাকে অভিনেতা হয়ে উঠতে হবে। এই জিনিসটি মোশাররফ ভাইয়ের মধ্যে আছে। মোশাররফ ভাই চরিত্র যেভাবে ভাঙ্গে, তা অনেকের পক্ষেই কঠিন। তাকে ভালো লাগে বাট তার অভিনয়ের মিল কিছুটা আমার মধ্যে আছে কিনা সেটা জানিনা তবে দর্শকরাও সেটা বলে। কিন্তু আমি যেহেতু অভিনেতা না শুধুই শখে একটা দুইটা করি বিশেষ দিবসে। তো উনার সাথে তুলনা করলে আমি বলব এটি আমার এচিভমেন্ট।

বার্তা২৪.কম: আপনার ‘মধ্যরাতের সেবা’ নাটক প্রচারের পর মূলত আপনি সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়তা বা পরিচিতি পেয়েছেন, তখন কি ভেবেছিলেন এটা এমন ভাইরাল হবে কিংবা আপনার এতো জনপ্রিয়তা এনে দিবে ?

রাশেদ সীমান্ত: না, এইটা আমি কখনই চিন্তা করিনা। এক্টিং করার ক্ষেত্রে এখনো না। জনপ্রিয় বা অ জনপ্রিয় আমাদের চেষ্টা মাত্র। সিদ্ধান্তটা কিন্তু উপরওয়ালা থেকে আসে। আল্লাহ চাইলেই আপনাকে সম্মানিত করবেন বা আপনি অসম্মানিত হবেন। আমরা হয়তো একটি প্রক্রিয়ায় মধ্যে দিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য জনপ্রিয় হই আবার আমাদের কর্মকাণ্ডের জন্য সমালোচিতও হই কিন্তু ডিসিশানটা উপর থেকেই আসে। এখন আপনাকে যে জায়গাটি দেয়া হয়েছে সেটি আপনি কতখানি প্রপার ইউটিলাইজেশন করলেন এটার ওপর ডিপেন্ড করে ভবিষ্যতে আপনি কতদূর যাবেন। তবে আমি যেহেতু অভিনেতা না এবং এটা আমার কাজও না কিন্তু আলহামদুলিল­াহ সেটুকু হয়েছে এটুকু আমি এক্সপেক্ট করি নি। আল্লাহ চেয়েছেন, প্রিয় দর্শক পছন্দ করেছেন তাই হয়েছে হয়তো।

নাটকটির একটি দৃশ্য

বার্তা২৪.কম: আপনাকে সাধারণত আমরা ঈদে দেখি কিন্তু দর্শকরা তো আপনাকে আরও বেশী দেখতে চায়। সেক্ষেত্রে ঈদের বাইরে নাটক করার চিন্তা ভাবনা আছে কিনা ?

রাশেদ সীমান্ত: না, না। আমার আসলে এমন কোন চিন্তা-ভাবনা নাই। প্রিয় দর্শকদের একটি অভিযোগ হচ্ছে আমি কেন রেগুলার কাজ করি না। কিন্তু আমি ত সমসময়ই বলি যে অভিনয় আমার প্রফেশন না। শখে করি বিশেষ দিবসে এবং আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান বৈশাখী টেলিভিশনের জন্যই করি। প্রতিনিয়ত প্রচুর স্ক্রিপ্ট আসছে আমার কাছে, প্রতিনিয়ত ফোন পাচ্ছি। মহান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া তবে এটিকে প্রফেশান হিসেবে নেওয়ার কোন চিন্তা-ভাবনা নাই। বিশেষ দিনগুলোতে কাজ করতে চাই একটি-দুটি, অবশ্যই মানসম্মত গল্পনির্ভর কাজ করতে চাই।

বার্তা২৪.কম: অনেক তরুণ যাদের অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ আছে, তারা আসলে ভাল প্লাটফর্ম পাচ্ছে না, তাদের আসলে কি করণীয়, কিভাবে কাজ করবে...

রাশেদ সীমান্ত: আমি মনে করি যারা ভালো অভিনয় করে এবং যাদের ট্যালেন্ট আছে তাদের জন্য এখনকার সময়টা হচ্ছে স্বর্ণযুগ। কারণ নিজেই কিন্তু একেকজন একেকটা চ্যানেলের মালিক। আপনার একটি ফেসবুক একাউন্ট আছে, ইউটিউব চ্যানেল আছে আপনি হচ্ছেন একজন মালিক। আপনার যদি ট্যালেন্ট থাকে তাহলে আপনি আপনার নিজের সেই জায়গায় উপস্থাপন করুন। আপনি দেখেন আমাদের কয়জন মাত্র অভিনেতা-অভিনেত্রী। ঘুরেফিরে আপনি ১০-১৫ জনের নাটকই আপনি দেখছেন। কারণ হচ্ছে আমাদের ট্যালেন্ট নাই। আপনার যদি সেই যোগ্যতা থাকে তাহলে আজ বা কাল আপনি সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন।

রাশেদ সীমান্ত

বার্তা২৪.কম: ময়মনসিংহ নিয়ে একটু কথা বলি, ময়মনসিংহ আপনার কেমন লাগে? কি কি ভাল লাগে ?

রাশেদ সীমান্ত: আমার ছোট বোনের শ্বশুরবাড়ি হচ্ছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে। ময়মনসিংহ তো আসলে ঐতিহাসিক দিক থেকেই হেলদি একটা জায়গা। কারণ এখানে বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির বিশাল ভূমিকা আছে ময়মনসিংহের। এই ব্রহ্মপুত্র নদ, জয়নুল উদ্যান, এসব অনেক শুনে আমি বড় হয়েছি। কি চমৎকার ভিউ এখানে, নৌকা চলছে। শতশত মানুষ আসে। এত মানুষ কিন্তু কোন বিশৃঙ্খলা নেই। যার যার মত করে সবাই এই জায়গাটাতে সময় কাটাচ্ছে। সেখানে একটি বিশাল মাঠ দেখলাম, সার্কিট হাউস মাঠ। এরপর বেশ কিছু মঞ্চ দেখলাম বিভিন্ন ভাগে ভাগে। সাংস্কৃতিক চর্চা রয়েছে। সামাজিক বন্ধনও খুব দৃঢ় আর এখানকার মানুষের মন মানসিকতা খুব বিশুদ্ধ। আমরা ইট-পাথরের শহরে থাকতে থাকতে আমাদের মন মানসিকতাও ইট-পাথরের মতই শক্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখানকার সবাই খুবই আন্তরিক। সেই সাথে খাবার-দাবারও খুব মজার। সবমিলিয়ে খুবই ভালো লেগেছে ময়মনসিংহ। এটি একটি পরিচ্ছন্ন শহরও বটে।

বার্তা২৪.কম: বরিশালের ভাষায় আপনি অনেকগুলো নাটক করেছেন। ময়মনসিংহের ভাষায় নাটক করার ইচ্ছা আছে কি ?

রাশেদ সীমান্ত: আমি এখন পর্যন্ত ময়মনসিংহের কোন স্ক্রিপ্ট হাতে পাইনি। যদি পাই, কেন না? একজন অভিনেতাকে তো সবই করতে হবে। আমি এবারের ঈদে যে তিনটি নাটক করেছি এর একটি চলিত ভাষায়, একটি বরিশাল আর অন্যটি পাবনা-সিরাজগঞ্জের ভাষায়। সুতরাং স্ক্রিপ্ট যদি ডিমান্ড করে সেক্ষেত্রে অভিনেতার উচিত সেই অনুযায়ী কাজ করা।