বর্ণময় জীবনেও নিঃসঙ্গ ছিলেন কিশোর কুমার
প্রকৃত নাম আভাস কুমার গাঙ্গুলি। সবার কাছে কিশোর কুমার ও কিশোরদা নামে পরিচিত। তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার।
গায়ক নয়, অভিনেতা হিসেবে শুরু হয়েছিল কিশোর কুমারের ক্যারিয়ার। ১৯৪৬ সালের ‘শিকারি’ ছবিতে বড় পর্দায় অভিষেক। এরপর ১৯৪৮ সালে ‘জিদ্দি’তে গেয়েছেন ‘মারনে কি দুয়ায়ে কিউ মাঙ্গু’। এর মধ্য দিয়েই প্লেব্যাকে যাত্রা শুরু করেন।
অভিনয় ও গান- দুটিতেই ছিলো সাবলীল বিচরণ। ‘চলতি কা নাম গাড়ি’, ‘মুসাফির’ ও ‘পাড়োসান’-এর মতো ছবিতে সমানতালে গান ও অভিনয় করেছেন। যদিও সংগীতেই তার অবদান অসামান্য। হিন্দি ছাড়াও গান গেয়েছেন বাংলা, মারাঠি, অসমিয়া, গুজরাটি, কন্নড়, ভোজপুরি, মালয়ালাম, ওড়িয়া ও উর্দু ভাষায়।
ক্যারিয়ারে কিশোর কুমার মোট ২ হাজার ৭০৩টি গান গেয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ১৮৮টি হিন্দি, ১৫৬টি বাংলা এবং ৮টি তেলেগু ভাষায় নির্মিত।
১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর চিরবিদায় নেন কিশোর কুমার। আজ তার ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। চলুন জেনে নিই গুণী মানুষটির জানা-অজানা কিছু কথা।
** কিশোর কুমারের গাওয়া ২৪৫টি গানে পর্দায় ঠোঁট মিলিয়েছেন বলিউড অভিনেতা রাজের খান্না। এছাড়া জিতেন্দ্র, দেব আনন্দ ও অমিতাভ বচ্চনের জন্য সবচেয়ে বেশি গান গেয়েছেন তিনি।
** ‘হাফ টিকেট’ ছবির ‘আকে সিধি দিল পে লাগে’ গানে নারী ও পুরুষ উভয় কণ্ঠ একাই দিয়েছিলেন কিশোর কুমার! এতে তার সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে লতা স্টুডিওতে আসতে পারায় তিনি একাই সম্পূর্ণ গানে কণ্ঠ দেন।
** জরুরি অবস্থার সময় কংগ্রেসের একটি সমাবেশে গাওয়ার প্রস্তাব পান কিশোর কুমার। কিন্তু তিনি রাজি হননি। এ কারণে ১৯৭৬ থেকে জরুরি অবস্থা শেষ হওয়া পর্যন্ত অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং দূরদর্শন চ্যানেলের কোনো অনুষ্ঠানে তার কণ্ঠ শোনা যায়নি।
** ব্যক্তিজীবনে চারবার বিয়ে করেন কিশোর কুমার। প্রথম স্ত্রী রুমা গুহঠাকুরতার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মধুবালাকে নিয়ে ঘর বাঁধেন। তার তৃতীয় স্ত্রী বলিউড অভিনেত্রী যোগিতা বালি। ১৯৭৬ সালে বিয়ের মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৭৯ সালে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে বিয়ে করেন যোগিতা।
** যোগিতার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ১৯৮০ সালে নিজের চেয়ে ২১ বছরের ছোট লীনা চন্দ্রভারকারকে বিয়ে করেন কিশোর কুমার। ১৯৮৭ সালে কিশোর কুমারের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লীনাই ছিলেন তার জীবনসঙ্গী।
** কিশোর কুমারের বর্ণিল জীবনে ছিল খামখেয়ালিপনা। তার বাড়ির সামনে একটি বোর্ড লেখা থাকতো ‘কিশোর কুমার হইতে সাবধান’! তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অনেকেই অদ্ভুত সব ঘটনার সম্মুখীন হতেন।
** তারকাখ্যাতির মধ্যেও বারবার নিঃসঙ্গ হয়েছেন কিশোর কুমার। একবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, তার কোনও বন্ধু নেই। তাই নাকি গাছের সঙ্গে কথা বলতেন। সাক্ষাৎকার নেওয়া ওই সাংবাদিককে গাছের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি!
** হৃষিকেশ মুখার্জি প্রথমে ভেবেছিলেন ‘আনন্দ’ ছবিতে কিশোর কুমার ও মেহমুদকে নেবেন। কিন্তু মনোমালিন্যের জেরে তার প্রস্তাবে রাজি হননি কিশোর। পরে ছবিটিতে কাজের সুযোগ পান অমিতাভ বচ্চন ও রাজেশ খান্না।
** কোনও কিছু অপছন্দের হলে মজার ছলে তুলে ধরতেন কিশোর কুমার। একবার এক প্রযোজক তাকে অর্ধেক সম্মানী দিয়ে প্রতিশ্রুতি দেন, বাকিটা কাজ শেষ হওয়ার পর দেবেন। পরদিন শুটিংয়ে অর্ধেক গোঁফ ও মাথার অর্ধেক চুল কামিয়ে হাজির হন কিশোর! প্রযোজক কারণ জানতে চাইলে তার সরস উত্তর ছিল, ‘আধা পয়সা-আধা মেকআপ।’
** কিশোর কুমারের অন্যতম জনপ্রিয় গান ‘পাঁচ রুপাইয়া বারা আনা’ যেন তার নিজের জীবনেরই গল্প। ম্যাট্রিক পাশ করার পর ইনদোর ক্রিশ্চিয়ান কলেজে ভর্তি হন তিনি। কলেজ ক্যান্টিনে ধার করা পাঁচ টাকা বারো পয়সা শেষ পর্যন্ত আর পরিশোধ করা হয়নি তার। সেটা নিয়েই নাকি তিনি এই গান বানিয়েছেন।
** কিশোর কুমার সম্পর্কে সুরকার বাপ্পি লাহিড়ির মামা।