সংস্কৃতির এক বটবৃক্ষের বিদায়...

  • বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আলী যাকের

আলী যাকের

বিশিষ্ট অভিনেতা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব আলী যাকের আর নেই।

শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুতে বিনোদন অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

বিজ্ঞাপন

অভিনেত্রী জয়া আহসান শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, “আলী যাকের চলে গেলেন, কিন্তু বাংলাদেশের মঞ্চকে রেখে গেলেন আরও অনেক উঁচু করে—অভিনয়ে, সংগঠনে, প্রবর্তনে। দীর্ঘাঙ্গ ছিলেন। শুধু শারীরিক অর্থে নয়, শিল্পের উচ্চতায়ও। মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তার অনুপ্রেরণা মঞ্চে এনেছেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় দিয়েছেন তার পূর্ণতা। বিনম্র শ্রদ্ধা, শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা “

শাওনের ফেসবুক থেকে নেওয়া

অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন লিখেছেন, ‘বড় চাচা...।”

বিজ্ঞাপন

অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা লিখেছেন, “বাংলাদেশের সত্যিকারের এক কিংবদন্তি আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। তিনি আমার দেখা দয়ালু ব্যক্তিদের একজন ছিলেন। আমাদের অনেকের জন্য ছিলেন একটি বাতিঘর।”

শোক প্রকাশ করে অভিনেতা আরিফিন শুভ লিখেছেন- “তোমার সৃষ্টি রয়ে যাবে চিরকাল...বড় চাচা।”

আলী যাকের ও নুসরাত ইমরোজ তিশা

‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ ঐশী শোক প্রকাশ করে লিখেছেন- “তিনি ইন্ডাস্ট্রিকে অনেক কিছু দিয়েছেন যা কখনও ভোলা যাবে না। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক।”

নির্মাতা রেদোয়ান রনি লিখেছেন- “সংস্কৃতির এক বটবৃক্ষের বিদায়। স্যালুট। বাংলাদেশকে দিয়েছেন অনেক। শান্তিতে ঘুমান। শ্রদ্ধা।”

শোক প্রকাশ করে নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ লিখেছেন- “ভালো থাকুন ওপারে...”

আলী যাকের ও মাবুরর রশিদ বান্নাহ 

আরেক নির্মাতা মাবুরর রশিদ বান্নাহ আলী জাকেরের সঙ্গে তোলা একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। শোক প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন- “আলী যাকেরর স্যারকে আমার জীবনের প্রথম ফিকশনেই আর্টিস্ট হিসেবে পেয়েছিলাম। জীবনের প্রথম ফিকশন থেকেই আমি স্যার এর আশীর্বাদ ধন্য ছিলাম। আমি ভাগ্যবান। আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান। স্যারকে নিয়ে আমার স্মৃতিগুলো অমূল্য। এমন একটি সকাল কোনদিনও চাই নি। কিন্তু এই বুকফাটা কষ্টের সকালটা এলো। আসতেই হলো। অনেক কিছু বলতে চাই, বলতে ইচ্ছা করছে কিন্তু লিখতে শক্তি পাচ্ছি না। মহান আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুন প্রিয় আলী যাকের স্যার...”

এছাড়াও শোক প্রকাশ করেছেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী, সংগীতশিল্পী বেলাল খানসহ আরও অনেকে।

আলী যাকের

১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের রতনপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন আলী যাকের। ১৯৬০ সালে সেন্ট গ্রেগরি থেকে ম্যাট্রিক পাস করে নটরডেমে ভর্তি হন আলী যাকের। সেখান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন তিনি। এরপর সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক করেন। অনার্স পড়াকালেই ছাত্ররাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। অনার্স শেষ হওয়ার পর অর্থাৎ ১৯৬৭ সালে চলে যান করাচি। সেখানেই প্রথম অভিনয় করেন আলী যাকের। ১৯৬৯ সালে ঢাকায় ফিরেন তিনি।

১৯৭২ সালের আলী যাকের আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে অভিনয় করেন। একই বছরের জুন মাসের দিকে আতাউর রহমান ও জিয়া হায়দারের আহ্বানে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে যোগ দেন। এই দলের হয়ে আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ো রোঁ’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৭৩ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে প্রথম নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকটি। যা ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনী।

আলী যাকের

দর্শকের ভালোবাসা যেমন কুড়িয়েছেন নন্দিত এই শিল্পী, তেমনি প্রাপ্তির ঝুলিতে জমা পড়েছে অসংখ্য পুরস্কার। এ তালিকায় রয়েছে, একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক প্রভৃতি।