ক্যানসারে আক্রান্ত কাদেরের অবস্থা সংকটাপন্ন

  • বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আবদুল কাদের

আবদুল কাদের

গুরুতর অসুস্থ অভিনেতা আবদুল কাদের চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন চেন্নাইতে। পরে সেখানকার হাসপাতালের পরীক্ষায় তার শরীরে ক্যানসার ধরা পড়েছে। বর্তমানে তিনি চেন্নাইয়ের ক্রিস্টিয়ান মেডিকেল হাসপাতাল চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তবে কাদেরের শরীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। এই অভিনেতার রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে ৩–এ নেমেছে। তাকে রক্ত দেওয়া হয়েছে। অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আবদুল কাদেরর জন্ম মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী থানার সোনারং গ্রামে। স্ত্রী খাইরুননেছা কাদের। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।

সোনারং হাইস্কুল ও বন্দর হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স ও এমএ করেন।

বিজ্ঞাপন

অর্থনীতিতে সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে অধ্যাপনা এবং বিটপী বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরির পর ১৯৭৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘বাটা’তে চাকুরীরত এখনও।

দেশের নাট্যাঙ্গনে আবদুল কাদের একটি সুপরিচিত নাম। স্কুল জীবন থেকেই অভিনয় শুরু তার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার প্রথম অভিনয়।

১৯৭২-৭৪ পরপর তিন বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসিন হল ছাত্র সংসদের নাট্যসম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে আন্তঃহল নাট্য প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন মহসিন হলের নাটক সেলিম আল দীন রচিত ও নাসিরউদ্দিন ইউসুফ নির্দেশিত ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’-এ অভিনেতা হিসেবে পুরষ্কার লাভ করেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রযোজিত বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ জ্ঞানের অনুষ্ঠান ‘বলুন দেখি’-তে চ্যাম্পিয়ন দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে পুরষ্কারও লাভ করেন আবদুল কাদের।

১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সাল থেকে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য এবং চার বছর যুগ্ম-সম্পাদকের ও ছয় বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে থিয়েটারের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৭৪ সালে ঢাকায় আমেরিকান কলেজ থিয়েটার ট্রুপ কর্তৃক আয়োজিত অভিনয় কর্মশালায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সাল থেকে টেলিভিশন ও ১৯৭৩ সাল থেকে রেডিও নাটকে অভিনয় শুরু হয় তার। টেলিভিশনে তার অভিনীত প্রথম কিশোর ধারাবাহিক নাটক ‘এসো গল্পের দেশে’।

আবদুল কাদের বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারদের একমাত্র সংগঠন ‘টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদ’ টেনাশিনাস-এর সহ-সভাপতি।

থিয়েটারের প্রায় ৩০টি প্রযোজনায় প্রতিটিতে অভিনয় এবং ১০০০টিরও বেশী প্রদর্শনীতে অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেছেন।

তার উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটকের মধ্যে রয়েছে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখনও ক্রীতদাস’, ‘তোমরাই’, ‘স্পর্ধা’, ‘দুই বোন’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’ প্রভৃতি।
১৯৮২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে বাংলাদেশের নাটক থিয়েটারের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ -এ অভিনয় করেন। এছাড়া দেশের বাইরে জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দুবাই এবং দেশের প্রায় সবকটি জেলায় আমন্ত্রিত হয়ে মঞ্চে অভিনয় করেছেন। এছাড়া টেলিভিশনে দুই হাজারের বেশী নাটকে অভিনয় করেছেন।

তার উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘মাটির কোলে’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘শীর্ষবিন্দু’, ‘সবুজ সাথী’, ‘তিন টেক্কা’, ‘যুবরাজ’, ‘আগুন লাগা সন্ধ্যা’, ‘এই সেই কণ্ঠস্বর’, ‘আমার দেশের লাগি’, ‘প্যাকেজ সংবাদ’, ‘সবুজ ছায়া’, ‘কার ছায়া ছিল’, ‘দীঘল গায়ের কন্যা’, ‘কুসুম কুসুম ভালোবাসা’, ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’, ‘আমাদের ছোট নদী’, ‘ভালমন্দ মানুষেরা’, ‘দুরের আকাশ’, ‘ফুটানী বাবুরা’, ‘হারানো সুর’, ‘দুলা ভাই’, ‘অজ্ঞান পার্টি’, ‘লোভ’, ‘মোবারকের ঈদ’, ‘বহুরূপী’, ‘এই মেকাপ’, ‘ঢুলী বাড়ী’, ‘সাত গোয়েন্দা’, ‘এক জনমে’, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’, ‘খান বাহাদুরের তিন ছেলে’, ‘ইন্টারনেটের বউ’, ‘ঈদ মোবারক’, ‘সিটিজেন’, ‘হতাই’, ‘ফাঁপড়’, ‘চারবিবি’, ‘সুন্দরপুর কতদূর’, ‘ভালবাসার ডাক্তার’, ‘চোরাগলি’, ‘বয়রা পরিবার’ প্রভৃতি।

চলচ্চিত্র ‘রং নাম্বার’সহ অসংখ্য বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন এই অভিনেতা। হানিফ সংকেতের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র মঞ্চেও রয়েছে আবদুল কাদেরের সরব উপস্থিতি।