‘ইত্যাদি’ এবার শুধুমাত্র বিটিভি ওয়ার্ল্ডে

  • বিনোদন ডেস্ক, বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইত্যাদি’র নতুন মঞ্চ

ইত্যাদি’র নতুন মঞ্চ

প্রাচ্যের ড্যান্ডি হিসেবে খ্যাত নারায়ণগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক উপজেলা সোনারগাঁয়ে নির্মিত হলো ইত্যাদি’র নতুন পর্ব। গত ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গনে অবস্থিত মোগল শাসক ঈশা খাঁ’র স্মৃতি বিজড়িত বড়সর্দারবাড়ির সামনে ধারণ করা হয় এবারের ইত্যাদি। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের বিখ্যাত তৈলচিত্র ‘সংগ্রাম’-এর আদলে তৈরি ভাস্কর্যকে ঘিরে সীমিত সংখ্যক দর্শকের উপস্থিতি ছিলো এইবার।

দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, প্রাচীন প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে গিয়ে অনুষ্ঠান ধারণের ধারাবাহিকতায় এপর্বটিও ধারণ করা হলো একইভাবে।

বিজ্ঞাপন

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ইত্যাদি কর্তৃপক্ষ জানায়, শিল্পী, কলাকুশলী ও আমন্ত্রিত দর্শকসহ সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় রেখে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে নিশ্চিত করা হয় সকল দর্শকের মাস্ক ব্যবহার। আর সেজন্যে সকল দর্শককেই ইত্যাদির বিশেষ মাস্ক দেয়া হয়। বড় সর্দারবাড়ির সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে নির্মাণ করা আলোকিত মঞ্চে ইত্যাদির এই ধারণ অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত।

প্রতিবার ইত্যাদি একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচারিত হলেও এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা সম্প্রচারের কারণে শুধুমাত্র বিটিভি ওয়ার্ল্ডেই অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হবে আগামী ২৯ শুক্রবার, রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর।

বিজ্ঞাপন



এবারের ইত্যাদিতে গান রয়েছে দুটি। অস্তিত্বের টানে মানুষের নিজের শিকড় খোঁজার উপর রচিত একটি গান গেয়েছেন স্ব স্ব ক্ষেত্রে দুই ধারার দুই সফল শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ ও চিশতী বাউল। গানটির কথা লিখেছেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন ইবরার টিপু। সোনারগাঁয়ের ইতিহাসগাঁথা ও কৃষ্টিকথা নিয়ে মনিরুজ্জামান পলাশের লেখা আরেকটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছে স্থানীয় অর্ধ শতাধিক নৃত্যশিল্পী।

শেকড়ের সন্ধানে ইত্যাদিতে সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের খুঁজে এনে তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি গত প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইত্যাদি প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ইত্যাদিতে নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপর রয়েছে দু’টি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন।



সোনারগাঁয়ে নদীতে ভাসমান বেদে পরিবার, চর্মকার, চরাশ্রয়ী জেলে ও অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের পরিবারের শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়া এক আত্মপ্রত্যয়ী যুবক শাহেদ কায়েসের উপর রয়েছে একটি শিক্ষামূলক প্রতিবেদন। ব্যতিক্রমী মানুষ প্রকৃতি প্রেমিক বৃক্ষ সেবক জনাব খাইরুল আলমের উপর রয়েছে একটি পরিবেশ সচেতনতামূলক প্রতিবেদন। আত্মপ্রচার বা আত্মপ্রদর্শনী নয়, যিনি নিজের দায়বোধ থেকে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ধানমন্ডিতে গড়ে তুলেছেন একটি ছোট্ট বনভূমি।

২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে প্রচারিত ইত্যাদিতে কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে হাওরের মাঝখানে নির্মিত একটি অভিনব স্কুলের উপর প্রতিবেদন প্রচার করা হয়েছিলো। হাওরের পানি ঘেরা এই দুর্গম স্কুলটিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে উপযুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে ও নিরাপদে শিক্ষালাভ করতে পারে, সেজন্যে স্কুলের বিভিন্ন সংস্কার কাজ ও স্কুলে যাতায়াতের নুতন নৌকা তৈরির জন্য ইত্যাদির মাধ্যমে কেয়া কসমেটিকসের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ১০ লক্ষ টাকার একটি চেক প্রদান করা হয়েছিলো। এবারের পর্বে সেই স্কুলের উপর রয়েছে একটি ফলোআপ প্রতিবেদন।

পানিতে লবনাক্তের হার বেশি থাকায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পানযোগ্য সুপেয় পানির পরিমাণ সবচাইতে কম। আর এই লোনা দোষে সবচেয়ে বেশি সুপেয় পানির সংকট সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায়। এই উপজেলার পানিবেষ্টিত দুর্গম গাবুরা ইউনিয়নের সুপেয় পানি কষ্টে থাকা মানুষদের উপর রয়েছে একটি মানবিক প্রতিবেদন। ইত্যাদিতেই প্রথম শুরু হয় বিদেশি প্রতিবেদন শিরোনামে বিশ্বের বিস্ময়কর বিষয় ও স্থানের উপর প্রতিবেদন। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বে রয়েছে গ্রীসের প্রাচীন নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী অ্যাক্রোপোলিসের উপর একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন।




দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ও সোনারগাঁকে নিয়ে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে ৪ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্বে নির্বাচিত দর্শকরা একটি নাট্যাংশে অভিনয় করেন। যা ছিল বেশ উপভোগ্য।
নিয়মিত পর্বসহ এবারও রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষ্ণ নাট্যাংশ।

‘ই’-প্রতারণা, স্মৃতির প্রতি প্রীতি, প্রজন্ম-ব্যবধানের টানাপোড়েন, তোষামোদকারীর মোসাহেবি, জ্যোতিষীর জোশ্ কথা ও নিদারুণ বাস্তবতা, সময় দেবার সময়ের অভাব, ভাইরাল ফোবিয়ায় সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ। বরাবরের মত এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম।


এবারের ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন-আমিরুল হক চৌধুরী, সোলায়মান খোকা, সুজাতা, দিলারা জামান, জিয়াউল হাসান কিসলু, আব্দুল আজিজ, কাজী আসাদ, শবনম পারভীন, আফজাল শরীফ, আমিন আজাদ, কামাল বায়েজিদ, জিল্লুর রহমান, মুকিত জাকারিয়া, নিসা, নিপু, জাহিদ শিকদার, জামিল হোসেন, বিলু বড়ুয়া, তারিক স্বপন, সাজ্জাদ সাজু, সুবর্ণা মজুমদার, মনজুর আলম, রনি, সজল, জাহিদ চৌধুরী, হাশিম মাসুদসহ আরো অনেকে। পরিচালকের সহকারী হিসাবে ছিলেন যথারীতি রানা ও মামুন।

ইত্যাদির রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। ইত্যাদি স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।