বাঁধনহারা এক রেহানা

  • বিনোদন রিপোর্ট, বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের গণমাধ্যমের সামনে বাঁধন

দেশের গণমাধ্যমের সামনে বাঁধন

অবশেষে দেশের পর্দায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত চলচ্চিত্রটি ইতিমধ্যেই কান চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাচিত হয়ে দেশের জন্য বয়ে এনেছে গৌরব।

শুধু কানই নয়, বিশ্বের নানা প্রান্তের সম্মানজনক বিভিন্ন উৎসবে ঘুরেও দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছে চলচ্চিত্রটি। ব্যক্তিগতভাবে এশিয়ান প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড-এ সেরা অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পান বাঁধন।

বিজ্ঞাপন

এত এত অর্জন নিয়ে দেশের বড়পর্দায় যখন ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ তখন দর্শকের অপেক্ষা যেমন অধীর, তেমনি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদেরও আবেগ যেন বাঁধনহারা। তাই, চলচ্চিত্রটি মুক্তির আগে এর কেন্দ্রিয় চরিত্রে অভিনয় করা বাঁধন এলেন গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে।

সোমবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চলচ্চিত্রটিতে অভিনয়ে নিজের অভিজ্ঞতা ও স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসলেন বাঁধন। আজকের বাঁধন হয়ে ওঠার পেছনে সাংবাদিকদের অবদানের কথাও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।

বিজ্ঞাপন

‘রেহানা মরিয়ম নূর’ মুক্তির দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে ততই ভালোলাগায় ডুবছেন বাঁধন। বললেন, “আমাদের সিনেমা নিয়ে যে সাড়া পাচ্ছি প্রতিদিন, তাতে আমি রীতিমত আপ্লুত। আমি চেষ্টা করব যত বেশি হলে সম্ভব, সরাসরি দর্শকদের সাথে বসে সিনেমা দেখবার।”

চলচ্চিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য নিজেকে অনেক বদলেছেন। অনেক নতুন নতুন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে।

শুটিং হয় কুমিল্লার ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজে। টানা দুমাস তারা সেখানে শুটিং করেছেন। ইউনিটের সবাই বাইরে থাকলেও তিনি হোস্টেলে ছিলেন। শুটিংয়ের সময়টাকে তিনি বললেন, ‘ভয়ংকর’ একটা সময় গিয়েছে। এমনকি তিন-চার পর তিনি শুটিং ফেলে চলে আসতে চেয়েছিলেন! শুরুতে সবার সঙ্গে অনেক ঝগড়াও করেছেন।

“বলতে পারেন ছবির পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ রীতিমত আমার উপর টর্চার করেছে। ধরেন যেদিন আমার মেন্টালি ডিস্টার্ব থাকার দৃশ্যের শুটিং থাকতো ওইদিন সকাল থেকে সেটে আমার সঙ্গে নানাভাবে খারাপ আচরণ করা হতো। কিন্তু আমি এরপরও ওদের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ, আমি পরে বুঝতে পেরেছি সাদ সবকিছু ন্যাচারাল করতে চেয়েছে, যার কারণে আমাকে চরিত্র অনুযায়ী মানসিক অশান্তিতে রেখেছিল”—বলেন বাঁধন।


পরিচালক সাদকে খুশি করা বেশ কঠিন ছিল। সকল দৃশ্যই এক টেকে নেওয়া হতো। দেখা যেত টানা ৫-৭ মিনিটের দৃশ্যও তিনি টানা ২০-২৫ বার দেওয়ার পরেও বলেছেন— হুম, চলে। এমনকি একটা দৃশ্য ৬৭ বার নেওয়া হয়ে এমন রেকর্ডও আছে।

সাদের সঙ্গে কাজ করার পর দেশ বা দেশের বাইরে যেখানেই কাজ করেন সেখানে সর্তক হয়ে গেছেন বাঁধন। যেনতেন কাজ আর করতে চান না স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তিনি।

৪৩ তম বিসিএসের প্রিলিতে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ নিয়ে প্রশ্ন আসা প্রসঙ্গে উপরের ঘটনা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে বলেন, অনেকে হয়তো বিষয়টা নিয়ে ট্রল করছে। কিন্তু তারা জানে না বিষয়টা আমার জন্য কত বড় গর্বের।

ব্যক্তিজীবনের নানা সংকটময় মুহুর্তের কথাও শেয়ার করেন বাঁধন। জানান, ২০০৫ এর দিকে ব্যক্তিজীবনে বেশ বড় এক ঘটনার কারণে দুবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। তারপর ২০০৬ এ লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগীতায় আসার পর তার জীবনে বড় পরিবর্তন এসেছে। এর জন্য প্রতিযোগীতার কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানালেন।

২০১৪ এ ব্যক্তিজীবনে ঝড় বয়ে গিয়েছিল বাঁধনের। সে সময়ে তাকে বেশ কয়েকবার পুলিশ স্টেশনে যেতে হয়েছিল। কিছুটা তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয়েছিল। তখন জেদ চেপেছিলো, ঠিক করেছিলেন পুলিশ হবেন বিসিএস দিয়ে। কোচিংয়েও ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু যখন দেখলেন তার জীবনের ওই মুহূর্তে মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে তার কাজ করা ছাড়া কোন উপায় নেই। আর কাজ করলে বিসিএসের জন্য পড়া হবে না। তখন সরে আসলেন।

আসছে ১২ নভেম্বর চলচ্চিত্রটি মুক্তির দিনক্ষণ চূড়ান্ত। ছবিটির নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবু বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত ১২টি হল নিশ্চিত করতে পেরেছি। খুব শিগগিরই হল তালিকা আমরা আমাদের ফেসবুক পেইজে প্রকাশ করবো।”

বাবু আরও বলেন, সারা দেশ থেকে অসংখ্য ফোন পাচ্ছি। হল মালিকরা যেমন ফোন করে তাদের আগ্রহ দেখাচ্ছেন তেমনি ফোন করছেন তরুণরা। তাদের সবার জিজ্ঞাসা, আমাদের শহরে দেখতে পাবতো? আমরা চেষ্টা করছি যত বেশি হলে সম্ভব ছবিটি মুক্তি দিতে। এ ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা পাচ্ছি প্রায় সব মহলের।

যথারীতি অনুপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রটির নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহম্মদ সাদ। মুক্তির আগে ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে উপস্থিত হবে পুরো ‘রেহানা মরিয়মন নূর’টিম। সেদিন যদি দেখা মেলে এই দূর্লভ নির্মাতার।